গুরুতর আহত আর এক ইন্টার্ন যশ টেকওয়ানি।—নিজস্ব চিত্র।
এনআরএস-কাণ্ডের জেরে বুধবার স্তব্ধ রইল রাজ্যের বহু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের পরিষেবা। কিন্তু যাঁদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার জেরে চিকিৎসকদের এই প্রতিবাদ, তাঁদেরই অন্যতম নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের লোকজন মনে করেন, ডাক্তারদের রোগীদের পরিষেবা বন্ধ করা উচিত নয়।
পরিবহ মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে রোগীর পরিবারের সঙ্গে এনআরএস-এর চিকিৎসকদের সংঘর্ষ হয় সোমবার রাতে। তার জেরে পরিবহ ছাড়াও গুরুতর আহত হন ওই হাসপাতালের আর এক ইন্টার্ন যশ টেকওয়ানি। পরিবহের মাথায় গুরুতর চোট লাগে।
বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মল্লিকবাজারের ওই হাসপাতালের নিউরো সার্জেন পার্থ ঘোষ এবং মেডিক্যাল সুপার প্রসেনজিৎ বর্ধন রায় জানিয়েছেন, পরিবহের অস্ত্রোপচার সফল। শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল হলেও তাঁকে বুধবারও আইটিইউ-তেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। নিউরো সার্জন পার্থ ঘোষ জানান, অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে মাথায় চোট লাগার পরে ওঁর একবার খিঁচুনি হয়েছিল। পরে সেই খিঁচুনি না হলেও সম্ভাবনা থেকে যায়। তার উপর পরিবহের করোটি ভেঙে মাথার ভিতরে কিছু হাড়ের সূক্ষ্ম টুকরো ঢুকে গিয়েছিল। সেগুলি অস্ত্রোপচারে বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাথার ভিতরেও চোট ছিল। এখনও সেখানে হাল্কা রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। ফলে, সংক্রমণের একটা আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু ওষুধ দিয়েই তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, আজ, বৃহস্পতিবার সব কিছু ঠিক থাকলে পরিবহকে সাধারণ বেডে দেওয়া হবে।
হাওড়ার ডোমজুড়ের ষষ্ঠীতলায় পরিবহের বাড়ি। ছেলে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানার পরই শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন পরিবহের বাবা, প্রাথমিক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শুভঙ্করবাবু এবং মা কল্পনাদেবী। শুভঙ্করবাবুর ভাইপো, পরিবহের দাদা শুভায়নবাবু বলেন, ‘‘এত নিরীহ ঠান্ডা ছেলে মার খেয়ে গেল! ও কোনও দিন কাউকে খারাপ কথা বলেনি। এখন একটাই প্রার্থনা, ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক। ডাক্তারদের উপরে গুন্ডামি বন্ধ হওয়া দরকার। ডাক্তারদেরও রোগীদের পরিষেবা বন্ধ করা উচিত নয়। রোগীরা অসুবিধায় পড়েন।’’
পরিবহের দিদি পৌষালি এসএসকেএম হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে চাকরি করেন। তাঁর কাছ থেকেই পরিবহের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানতে পারেন শুভায়নবাবুরা। তিনি জানান, ছোট থেকেই পরিবহ মেধাবী। কোনও ঝুট-ঝামেলায় থাকতেন না। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পরিবহ পড়েছেন ঝাঁপড়দহ ডিউক ইনস্টিটিউশনে। স্কুলে কোনও দিন দ্বিতীয় হননি। প্রধান শিক্ষক পার্থসারথি পণ্ডিত বলেন, ‘‘ওঁর মাথায় আঘাত লেগেছেন শুনে খুব খারাপ লাগছে। ও নিয়মিত স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। আমরা চাই ও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy