শ্রদ্ধা: পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি মিছিল। দার্জিলিঙের ম্যালে। সোমবার। ছবি: এএফপি।
খাবার পেতে গেলে এখন খাবারই দিতে হচ্ছে পাহাড়ে। কারণ, হঠাৎ ডাকা বন্ধের ধাক্কা তীব্র ভাবে লেগেছে পাহাড়ের হেঁশেলে। দোকানপাট বন্ধ। খাদ্যসামগ্রী আসছে না। ফলে রসদে টান পড়তে শুরু করেছে। এই প্রেক্ষাপটে আজ, মঙ্গলবার অনির্দিষ্টকাল বন্ধের ষষ্ঠ দিনে, পাহাড়ে আবার বসতে চলেছে মোর্চার ডাকা সর্বদল বৈঠক। এবং সে দিকে তাকিয়ে থাকা পাহাড়বাসীর মনে একটাই প্রশ্ন, এ বার কি কিছুটা স্বাভাবিক হবে দার্জিলিং?
হেঁশেলের খবর রাখতেই হচ্ছে মোর্চা নেতাদের। টানা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য এই খবর রাখাটা জরুরি। এমনিতেই কেন্দ্র এবং রাজ্যের তরফে বারবার শান্তি ফেরানোর যে ডাক দেওয়া হচ্ছে, তাতে চাপ তৈরি হয়েছে মোর্চা নেতৃত্বের উপরে। রবিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ পরপর টুইট করে শান্তি স্থাপনে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের আলোচনায় বসতে বলেন। এমনকী, হিংসাত্মক আন্দোলন করে ভারতীয় গণতন্ত্রে যে লাভ হয় না, তা-ও স্পষ্ট করে দেন। এর উপরে রসদে টান পড়টা মোর্চার নতুন মাথাব্যথা।
বস্তুত, বিমল গুরুঙ্গের দলের একাংশও চাইছেন, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন চলুক, কিন্তু পাহাড়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ফিরে আসুক। তাঁরা বলছেন, না হলে কয়েক দিনের মধ্যে বাড়ির লোকের পাতে দেওয়ার মতোও কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।
একই কথা শোনা যাচ্ছে সাধারণ পাহাড়বাসীর কাছ থেকেও। কার্শিয়াঙের সরমা তামাঙ্গ যেমন বললেন, ‘‘দোকানে সবই বাড়ন্ত। চড়চড় করে দাম বাড়ছে।’’ তাঁর পড়শি নব ভুটিয়ার কথায়, ‘‘বাড়তি দাম ফেললেও বিশেষ কিছু মিলছে না।’’ ব্যবসায়ী দীনেশ অগ্রবাল জানালেন, বাড়িতে চাল ছিল। তাই দিয়ে পড়শির কাছ থেকে আনাজ ‘কিনেছেন’ তিনি।
আরও পড়ুন:মোর্চা-জঙ্গি যোগ কেন্দ্রীয় রিপোর্টেও
এমন একটা খাদ্যসঙ্কটের মুখে তাই কট্টরপন্থীদের রাশ কিছুটা টানা হয় এ দিন। যদিও খুচখাচ কুশপুতুল পোড়ানোর মতো কর্মসূচিতে সায় দিয়েছেন নেতারা। সেই মতো এ দিন দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙের বিভিন্ন জায়গা, ডুয়ার্সের জয়গাঁ-সহ ২৫টি জায়গায় একই ভাবে মোর্চা মিছিল করে। মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুলও পোড়ায়। একমাত্র বড় ঘটনাটি ঘটে কালীঝোরায়। চালক-সহ ট্রাকে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেখানে।
রবিবারের মতো এ দিনও পুলিশ সব মিছিল চুপ করেই দেখেছে। রবিবার চকবাজারে দলের তিন কর্মীর মরদেহ নিয়ে মিছিল করে মোর্চা। উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। তখনও পুলিশ, আধা সেনা চুপ ছিল। এ দিনও তারা নীরব দর্শক। ফলে নতুন করে সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি হয়নি।
শঙ্কিত পাহাড়বাসীর তাই আশা, আজ, মঙ্গলবার মোর্চার পক্ষ থেকে ডাকা সর্বদলে কয়েক দিনের জন্য অন্তত অচলাবস্থা কাটানোর কোনও সূত্র মিলতে পারে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা দীপককুমার প্রধান বলেন, ‘‘মঙ্গলবারের এই সর্বদল বৈঠকে আলোচনার পরে আন্দোলনের পরের পদক্ষেপ ঠিক হবে।’’
গত বৃহস্পতিবার সর্বদল বৈঠকের পরে মোর্চা অনির্দিষ্টকাল বন্ধের ডাক দেয়। তখনই ঠিক হয়েছিল,
২০ তারিখ পরের বৈঠক। কিন্তু মঙ্গলবারের বৈঠকে ডাক পায়নি বলে জানিয়েছে হরকাবাহাদুর ছেত্রীর দল এবং গোর্খা লিগ।
মোর্চার বক্তব্য, ‘‘কোনও কারণে চিঠি পৌঁছতে না-ই পারে। কারণ, পাহাড়ে পার্টি অফিসও বন্ধ থাকছে। বৈঠকে আমরা সব দলের প্রতিনিধিকে স্বাগত জানাব।’’
এই সর্বদল কি পারবে আশা দেখাতে? নাকি নতুন করে অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দেবে পাহাড়কে? প্রায় শূন্য ভাঁড়ার নিয়েও আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই পাহাড়বাসীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy