জলপথ: সদ্যোজাতকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে। ঘাটালের আড়গোড়ায়। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে থাকা নিম্নচাপটি ছোটনাগপুর মালভূমির দিকে সরে যেতে শুরু করায় কলকাতা ও পাশ্বর্বর্তী এলাকায় বৃষ্টি কমেছে। কিন্তু আখেরে রাজ্যের তাতে লাভ হয়নি। উল্টে ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চিন্তা বেড়েছে রাজ্যের। কারণ, ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার জল নেমে আসছে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে। উপচে পড়ছে জলাধারগুলি।
পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হয়েই চলেছে, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অজয়, দামোদর, ময়ূরাক্ষী, কংসাবতী, দ্বারকেশ্বরের উৎসমুখে প্রবল বৃষ্টি। তার জেরে দুই মেদিনীপুর, বীরভূম, বাঁকুড়ার সামগ্রিক জলবন্দি পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সতর্কতা জারি রয়েছে বর্ধমান, হাওড়া ও হুগলিতে। বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় দেওয়াল চাপা পড়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কুঁয়ে নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে মুর্শিদাবাদের বড়ঞা ব্লকের সুন্দরপুর পঞ্চায়েতের একাংশ। গৃহহীন অন্তত ৩০টি পরিবার।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, সোমবার রাত থেকে ঝাড়খণ্ডের বোকারো, হাজারিবাগ, গিরিডি, রাঁচী ও পূর্ব সিংভূমে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। তাতেই দামোদর ও সুবর্ণরেখায় জলের স্তর বাড়ছে। ওই নদীগুলির বাঁধ থেকে জল ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের সেচমন্ত্রী চন্দ্রপ্রকাশ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘তবে জল ছাড়ার আগে পশ্চিমবঙ্গের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিকে সর্তক করে দিচ্ছি।’’
যদিও পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কথা না-শুনে জল ছেড়ে দিচ্ছে ডিভিসি। রাজীবের মন্তব্য, ‘‘ডিভিসি সহযোগিতা করছে না!’’
ডিভিসি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার পাঞ্চেত জলাধারের জলস্তর বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় মঙ্গলবার জল ছাড়া হয়েছে ৬০ হাজার কিউসেক। মাইথনের জলস্তর এখনও বিপদসীমার নীচে রয়েছে। চান্ডিল থেকে ৮ হাজার ৪০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। প্রতিবার পশ্চিমবঙ্গকে জানানো হয়েছে বলে ডিভিসি সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
রাজ্য সেচ দফতর জানাচ্ছে, ব্রাহ্মণী, দ্বারকা, কোপাই, ময়ূরাক্ষী, কংসাবতী, শিলাবতী, অজয়, দামোদর, মুণ্ডেশ্বরীর অবস্থা ভাবাচ্ছে। সকাল থেকেই ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘাটাল ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টি-ই জলমগ্ন। পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে কেশপুরেও। বীরভূমে ইতিমধ্যেই ৩৫.৬৯% বেশি বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে।
তিন দিন ধরে দক্ষিণবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড সীমানায় আটকে থাকা নিম্নচাপ রেখাটি অবশ্য ঝাড়খণ্ডের দিকে সরতে শুরু করেছে। ফলে নিম্ন চাপের শক্তি এ বার কমবে। তবে কাল, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চল এবং সংলগ্ন ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার কোনও কোনও এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি যদি কমেও যায়, ঝাড়খণ্ড-ওড়িশায় বৃষ্টি হতে থাকলে পশ্চিমবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতিই হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy