বানভাসি: বেহাল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। শনিবার কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
তিন দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে নদীগুলি ফুঁসে ওঠায় প্লাবিত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পাহাড়ে ধস নামায় ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। সমতলে জলে ডুবে মারা গিয়েছে দুই শিশু-সহ তিনজন। সকালে তলিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধার খোঁজ মেলেনি রাত পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কার মেঘ আরও গাঢ় হয়েছে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ২৪ ঘণ্টা ভারী থেকে
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
মৌসুমী অক্ষরেখা অবস্থান বদলে হিমালয়ের পাদদেশে উত্তরবঙ্গের ওপরে চলে এসেছে। তারই জেরে এই টানা বর্ষণ। সেচ দফতরের খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা ছাপিয়ে গিয়েছে অতীতের সমস্ত রেকর্ড। টানা বর্ষণে এক সঙ্গে ফুঁসছে ২০টি নদী। তার মধ্যে চারটি নদীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। নদীর জলে কোথাও গাড়ি চলাচল থমকে গিয়েছে জাতীয় সড়কে। কোথাও বা রেললাইনে জল জমায় থমকে গিয়েছে ট্রেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আজ, রবিবার উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘সব জেলায় প্রশাসন অতি মাত্রায় তৎপর। দুর্যোগ সামাল দিতে সকলে মিলে চেষ্টা করছি।’’
টানা বৃষ্টিতে দস নামায় দার্জিলিং শহরের বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কংক্রিটের স্তূপ থেকে ৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে একজনের। সুখিয়াপোখরিতে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পাথর-মাটি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। শুক্রবার রাত থেকে পাহাড়ের অন্তত ১২টি জায়গায় ধস নামে। লেবংকার্ট রোডে ধস সরানোয় হাত লাগান খোদ দার্জিলিঙের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্তও। তিনি বলেন, ‘‘দুপুরের পরে নতুন করে ধসের কোনও খবর নেই। ধস সরানোর কাজ চলছে।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, টানা বৃষ্টির সঙ্গে ভূটান থেকে জল ছাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। প্রশাসনের হিসেবে এখনও পর্যন্ত বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ।
আরও পড়ুন:বর্ষার ধূপগুড়িতে সব দল এক ছাতায়
কালজানির জলে প্লাবিত এলাকার ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে কলার ভেলা উল্টে যাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে কোচবিহারের তুফানগঞ্জের যুবক প্রসেনজিৎ রায়ের (১৯)। জলপাইগুড়ির নগর বেরুবাড়ির মালকানি পাড়ায় খেলতে গিয়ে জমা জলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে দুই শিশুর। পুলিশ জানিয়েছে, কমলেন্দু দে (১২) এবং হরকুমার রায় (৫) দু’জনে বাড়ির সামনে জমে থাকা জলে নেমেছিল।
আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি শহরেও এ দিন নৌকা চলেছে। রাত থেকেই জল বাড়তে থাকে কালজানি, সংকোশ, রায়ডাক, তোর্সা, ডিমা, বাসরা সহ ছোট বড় সমস্ত নদীর। শনিবার দুপুরের পরে মোবাইল এবং নেট সংযোগও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আত্রেয়ীর জলে বালুরঘাট পুরসভার তিনটি ওয়ার্ডও জলের নীচে চলে যায়। জলবন্দি হয়ে পড়েন হাজার পাঁচেক পরিবার। নির্দেশ দেওয়ার পরেও বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে না জানিয়ে অফিসে গরহাজির থাকায় ১২ জন কর্মীকে হলদিবাড়ির বিডিও শো-কজ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। ওই ব্লকের ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ জলবন্দি। চলছে ত্রাণ শিবিরও। উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব মলয় দে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy