প্রতীকী ছবি।
রাজ্য কী ভাবে চলছে, শুক্রবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার। শুধু সরকার নয়, আমলাদের তীব্র বিদ্রুপ করে সোমবার তিনিই প্রশ্ন তুললেন, ‘‘কাদের টাকায় আমলাদের বেতন হয়? দেশের নাগরিকদের প্রতি আমলাদের কোনও দায়বদ্ধতা থাকবে না? নাগরিকদের মানসিক উদ্বেগ দূর করতে উদ্যোগী হবেন না তাঁরা?’’
দু’বছর আগে হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের একটি নির্দেশ এখনও কার্যকর না-হওয়ায় উচ্চ আদালত প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তারই জেরে একটি আপিল মামলায় রাজ্যের মুখ্যসচিবকে আজ, মঙ্গলবার তলব করেছে হাইকোর্ট। হাজিরা থেকে মুখ্যসচিবের অব্যাহতি চেয়ে আর্জি জানান এজি। বিচারপতি সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এজি-কে জানিয়ে দেয়, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ দু’বছর আগে যে-অফিসারকে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিল, তাঁকে দিয়েই দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যকে। তবেই মুখ্যসচিব আদালতে হাজির দেওয়া থেকে অব্যাহতি পাবেন।
দার্জিলিঙের একটি চা-বাগানের কর্তৃপক্ষ বছর দশেক আগে ‘টি-টুরিজম’ প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যের অনুমতি চান। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। ২০০৮ সালে হাইকোর্টে যান বাগান-কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের পরে ২০১৫-র ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু জিটিএ-কে নির্দেশ দেন, পর্যটন প্রকল্পটি বিবেচনা করা হোক। রাজ্যের তরফে জিটিএ-কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়, প্রকল্প বিবেচনা করবে সরকারই। বিচারপতি বসুর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ৩৪০ দিনের পরে আপিল মামলা দায়ের করে রাজ্য।
এত দিন পরে আপিল মামলা করা হল কেন, সরকার তা আদালতকে জানায়নি। ২০১৬ সালের ২৭ জুন হাইকোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এক নির্দেশে মন্তব্য করেন, যে-অফিসারের গাফিলতিতে আপিল করতে এত দেরি, তিনি রাজ্যের ‘বোঝা’। দেরির কারণ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু ওই অফিসার হলফনামা দেননি। আপিল মামলাটি বিচারপতি সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চে যায়। ২৭ জুলাই এজি-র উপস্থিতিতে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বিচারপতি চেল্লুরের নির্দেশ কার্যকর হয়নি কেন, তার সন্তোষজনক জবাব না-পেলে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে আদালতে ডেকে পাঠানো হবে। তার পরে হলফনামা দেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের সংশ্লিষ্ট অফিসার দিবাকর মুখোপাধ্যায়। হলফনামা পড়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, মুখ্যসচিবকে ৭ অগস্ট আদালতে হাজির হতে হবে।
সেই তলবি নির্দেশ প্রত্যাহারের জন্য এজি যে-আবেদন জানান, এ দিন তার শুনানি ছিল। এজি-র উদ্দেশে বিচারপতি সমাদ্দার বলেন, ‘‘রাজ্য যেন একটা পর্দার আড়াল! তার আ়ড়ালে থেকে আমলারা কাজ করছেন। আমলাদের বোঝা উচিত, বিচারপতিরা কোনও নির্দেশ দিলে তাকে মান্যতা দেওয়া দরকার। নইলে গোটা বিচার ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে।’’
এজি জানান, বিচারপতি চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ যাতে কার্যকর হয়, সেটা তিনি দেখবেন। তাঁর বক্তব্য শুনে বিচারপতি সমাদ্দার মন্তব্য করেন, দু’বছর আগে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ যখন নির্দেশ দেয়, সেই সময়েই তাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারত রাজ্য। তা করা হয়নি। ‘‘দু’বছর সময় পেয়েও সংশ্লিষ্ট অফিসারকে দিয়ে হলফনামা দাখিল করানো গেল না কেন,’’ প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy