Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘ঘেউ ঘেউ করে লাভ নেই’, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে নিন্দায় কোর্ট

সোমবার ডিএ নিয়ে কর্মী সংগঠনের দায়ের করা মামলার শুনানি চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের প্রসঙ্গ ওঠে। বিচারপতি মাত্রে তখনই বলেন, ‘‘ওই শব্দ প্রয়োগ দুর্ভাগ্যজনক।’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকারকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়টি গেজেট-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩২
Share: Save:

বিরোধীরা তাঁর মন্তব্যের কঠোর সমালোচনায় মুখর। রাজ্য সরকার ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা দিলে যাঁরা উপকৃত হবেন, সেই সরকারি কর্মীদের একাংশও তাঁর মন্তব্যের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্যের নিন্দা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রেও।

গত বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারি কর্মীদের ১৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘প্রচণ্ড আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও এটুকু ব্যবস্থা করতে পেরেছি। মিউ মিউ, ঘেউ ঘেউ করে কোনও লাভ নেই। যখন নিজেদের সরকার ছিল, তখন কী করছিলেন!’’

সোমবার ডিএ নিয়ে কর্মী সংগঠনের দায়ের করা মামলার শুনানি চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের প্রসঙ্গ ওঠে। বিচারপতি মাত্রে তখনই বলেন, ‘‘ওই শব্দ প্রয়োগ দুর্ভাগ্যজনক।’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকারকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়টি গেজেট-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হবে। তা না-হলে ১৫% ডিএ-র সিদ্ধান্ত ঘোষণার কোনও মূল্য নেই।

বকেয়া ডিএ-র দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে বিরোধী রাজ্য সরকারি কর্মীদের দু’টি সংগঠন। প্রথমে তারা ট্রাইব্যুনালে মামলা লড়ে হেরে যায়। গত ৫ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি মাত্রে জানিয়েছিলেন, সরকারি কর্মীরা ডিএ আশা করে থাকেন। বেতন আর বাজারদরের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে বা বাজারদরের মোকাবিলা করতে ডিএ দেওয়া হয়ে থাকে। ঘটনাচক্রে তার দু’দিন পরেই ১৫ শতাংশ ডিএ দেওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: সিবিআই জেরায় মুকুল, শুভেন্দুর হাজিরা ইডি-তে

এ দিন মামলাটি ফের শুনানির জন্য উঠলে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত আদালতে জানান, ১৫ শতাংশ ডিএ দেওয়া হবে বলে গত সপ্তাহে ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে সেই খবর। সে-ক্ষেত্রে এই মামলার আর প্রয়োজন আছে কি না, তা জানতে চান এজি।

মামলার আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি তখন জানান, ডিএ-র সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে শাসক দলের কর্মিসভায়। বলা হয়েছে, আগামী জানুয়ারিতে ১৫ শতাংশ ডিএ দেওয়া হবে। বাকি বকেয়া মেটানো হবে ২০১৯ সালে।

ওই প্রবীণ আইনজীবী আরও জানান, সরকারি কর্মীরা ডিএ-র জন্য ‘ঘেউ ঘেউ’ করছেন না, তাঁরা আদালতের কাছে ডিএ ভিক্ষা করছেন। ওই মামলার সঙ্গে যুক্ত অন্য আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, ডিএ-র ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী যে-মন্তব্য করেছেন, তা কোনও সভ্য জগতে ব্যবহৃত হয় না। বিচারপতি মাত্রে এর পরেই এজি-র উদ্দেশে জানান, ডিএ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে গিয়ে যে-সব শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে, তা ‘দুর্ভাগ্যজনক’।

পরে এজি-র কাছে ডিএ দেওয়ার ব্যাপারে গেজেট-বিজ্ঞপ্তি জারির কথা জানতে চান বিচারপতি মাত্রে। এজি জানান, চলতি সপ্তাহের বুধবারেই ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে।

অর্থ দফতরের এক কর্মী এই মামলায় যুক্ত হতে চেয়ে আবেদন করেছেন। তাঁর হয়ে লড়ছেন বিকাশবাবু। ওই কর্মীর আবেদনের বিরোধিতা করে হলফনামা দেন এজি। তাঁর বক্তব্য, মূল মামলার আবেদনকারীরা ডিএ সংক্রান্ত মামলায় ট্রাইব্যুনালে হেরে তবেই হাইকোর্টে এসেছেন। বিকাশবাবুর মক্কেলকেও আগে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। তা শুনে বিচারপতি মাত্রে বলেন, ‘‘আদালত কেন এই আবেদনকারীর বক্তব্য শুনবে না? রাজ্য সরকার ডিএ দিলে এই আবেদনকারী কি তা পাবেন না? সরকার যদি কোনও ডিএ না-দেয়, সে-ক্ষেত্রে মূল মামলার আবেদনকারীরা তা পাবেন না, নতুন আবেদনকারীও পাবেন না।’’

ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে কাল, বুধবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE