Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পড়ুয়া পালাচ্ছে ইংরেজির টানে

প্রথা ভেঙে পঞ্চমে ভর্তি হিন্দু স্কুলে

সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়ানোর মোহ সর্বগ্রাসী হয়ে উঠছে। এতটাই যে, কলকাতার নামী সরকারি স্কুলের প্রাথমিক শাখায় পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে বিপজ্জনক হারে।

মধুমিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়ানোর মোহ সর্বগ্রাসী হয়ে উঠছে। এতটাই যে, কলকাতার নামী সরকারি স্কুলের প্রাথমিক শাখায় পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে বিপজ্জনক হারে। প্রথম শ্রেণিতে যদি বা ভর্তি হল, ইংরেজির হাতছানিতে মাঝপথে ছেড়ে চলে যাচ্ছে বহু ছাত্র। পড়ুয়ার সংখ্যা হুহু করে কমতে থাকায় হিন্দু স্কুলের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান প্রথা ভেঙে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী হিন্দু স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয় প্রাক্‌-প্রাথমিক, প্রথম এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে। কিন্তু এ বছর দেখা যায়, ভর্তি পর্বের পরে চতুর্থ শ্রেণিতে ছাত্র অনেক কমে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অগত্যা পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির উদ্যোগ শুরু করতে হয়েছে। স্কুলশিক্ষা দফতরের খবর, ২০১৩-য় ওখানে লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণিতে ৬৪ পড়ুয়াকে ভর্তি করা হয়। চতুর্থ শ্রেণিতে তা কমে হয় ৪৭ জন। পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পরে আরও কিছু ছাত্র চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই আগেভাগে ঘর গুছিয়ে রাখতে চাইছে হিন্দু স্কুল।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে ন্যূনতম ৪০ পড়ুয়াকে ভর্তি করতে হয়। সেই নিয়ম মেনে পঞ্চম শ্রেণিতে ৪০ জনকে ভর্তি নেওয়ার জন্য স্কুল-কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। ১৫ ডিসেম্বর প্রাক্‌-প্রাথমিক, প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণির সঙ্গেই প়ঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির লটারি হবে।

হিন্দু স্কুলের ক্ষেত্রে এটা বেনজির ঘটনা বলে জানাচ্ছে শিক্ষাজগৎ। প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্তও বলেন, ‘‘এমন সিদ্ধান্ত আগে কখনও নিতে হয়নি। চতুর্থ শ্রেণিতে ছাত্র কমে যাওয়ায় পঞ্চম শ্রেণিতে আবার লটারির মাধ্যমে ভর্তির ব্যবস্থা হচ্ছে।’’

শিক্ষামহলের একাংশের মতে, অধিকাংশ বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াতে চাইছেন এবং সেই প্রবণতা হিন্দু স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠানে ছাত্র কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। ‘‘ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে চাওয়ার যে-হাওয়া, তাতেই হয়তো এটা ঘটছে,’’ বলছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন, এই সব পড়ুয়া কোথায় যাচ্ছে, অনেক সময় তা স্কুলকে জানাচ্ছেও না। অনেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেটও নেয় না। তিনি বলেন, ‘‘দূরত্বের কারণে ছেড়ে দিয়ে বাড়ির কাছের স্কুলে চলে যাচ্ছে, এমন কিছু উদাহরণও আছে।’’

স্কুল স্তরে পড়ুয়াদের চলে যাওয়ার এই প্রবণতা ঠেকানোর উপায় কী?

হিন্দু স্কুলে এখন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমেও পঠনপাঠনের ব্যবস্থা চালু আছে। সরকার চাইছে, বাংলা যেমন আছে থাকুক। সেই সঙ্গে ওই স্কুলে প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি মাধ্যমেও পঠনপাঠন শুরু হোক। স্কুল-কর্তৃপক্ষের আশা, প্রাথমিক স্তর থেকে সমান্তরাল ভাবে ইংরেজি মাধ্যম চালু হলে পড়ুয়াদের চলে যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা কমবে।

রাজ্যের অন্য সরকারি স্কুলের পড়ুয়া-পরিস্থিতি ঠিক কেমন?

বিধাননগর সরকারি হাইস্কুলে লটারিতে ছাত্র ভর্তি নেওয়া হয় প্রাক্‌-প্রাথমিক এবং প্রথম শ্রেণিতে। আগে দু’-এক বার অন্য শ্রেণিতে ভর্তি নিতে হলেও এখন হচ্ছে না বলে জানালেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তারাপদ সাঁতরা। তিনি বলেন, ‘‘এই স্কুলের পড়ুয়াদের একটা বড় অংশই আসে আর্থিক ভাবে অনগ্রসর পরিবার থেকে। আসে সেই সব ছাত্র, যাদের বাবা-মায়েরা সরকারি চাকরি করেন এবং ঘনঘন বদলি হন। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ বাসিন্দা সন্তানদের ইংরেজি স্কুলেই পাঠাতে আগ্রহী।’’

এখনও তাঁর প্রতিষ্ঠান এই ধরনের সমস্যার মুখে পড়েনি বলে জানাচ্ছেন উত্তরপাড়া সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমল শীল। আর বালিগঞ্জ সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবানন্দ বাগচী জানালেন, তাঁর স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয় প্রাক্‌-প্রাথমিক এবং চতুর্থ শ্রেণিতে। সেই নিয়মই চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hindu School admission fifth standard
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE