তাঁর পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এক লহমায় বদলে গিয়েছিল জীবন। সেই সময়ে পরিবারকেও পাশে পাননি তিনি। আরেকজনকে চিকিৎসক বলেছিলেন, কত দিনই বা বাঁচবেন! ভাল-মন্দ খেয়ে নিন। সেই সব প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে এখন অন্যকে জীবনযুদ্ধে উত্তীর্ণ হতে হাত বাড়িয়েছেন বন্দনা পাল ওরফে বনি এবং আর এক জন এইচআইভিতে আক্রান্ত দেবরাজ (পরিবর্তিত নাম)। তাঁরাই আগামিকাল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা লোক আদালতে বিচারকের ভূমিকায় থেকে মামলার নিষ্পত্তি করবেন।
আগামিকাল, শনিবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাতীয় লোক আদালত বসার কথা। তার অঙ্গ হিসাবে উত্তর ২৪ পরগনা বারাসত লোক আদালত অনুষ্ঠিত হবে। ১৪টি বেঞ্চ তৈরি হবে। যাঁর মধ্যে একটি বে়ঞ্চে থাকার কথা দেবরাজের। অন্য একটি বেঞ্চে থাকার কথা বনির। জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে কার্যত ‘বাকরুদ্ধ’ বনি এবং দেবরাজ।
১৯৯৬ সালে কুড়ি-একুশ বছর বয়স উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুর রাজবল্লভপুরের দেবরাজের। বিদেশযাত্রার কারণে সেই সময়ে রক্ত পরীক্ষা হয় তাঁর। ধরা পড়ে এইচআইভি। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তাঁকে শুনতে হয়, ‘কতদিনই বা বাঁচবেন। ভাল-মন্দ খেয়ে নিন।’ তবে হাল ছাড়েননি দেবরাজ। ক্রমশ এইচআইভি সচেতনতার কাজে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। বিচারকের ভূমিকা প্রসঙ্গে দেবরাজের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এইচআইভি আক্রান্তদের অনেকেই হেনস্থা, ঘৃণা করেন। যাঁরা এসব করে তাঁরা ঠিক করেন না। তবে সব মানুষই আইনকে ভয় পান। প্রত্যেকের বাঁচার, সমাজের মূলস্রোতে থাকার অধিকার আছে। বিচারক হিসাবে আমায় বাছাই করায় গর্বিত।’’
বছর উনিশ আগে এশিয়ান গেমসে খেলতে যাওয়ার সময়ে উত্তর ২৪ পরগনার গোরবডাঙার বাসিন্দা বন্দনার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে। উত্তর খুঁজে পাননি বন্দনা। পাশে পাননি পরিবারকেও। সে দিন বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ আজও কুড়ে কুড়ে খায় তাঁকে। পরবর্তীতে লিঙ্গ পরিবর্তনের পরে বন্দনার নাম হয় বনি। তাঁর কথায়, ‘‘এশিয়ান গেমসে থেকে ছিটকে যাওয়ায় মনে হয়েছিল জীবনটা শেষ হয়ে গেল। তখন মনে হয়েছিল আমার বিচার কে করবে? লোক আদালতে বিচারক হিসাবে থাকব জেনে একটা অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছে।’’ উল্লেখ্য, বন্দনার গোলেই বছর একুশ আগে শেষবার বাংলার মহিলা দল জাতীয় ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
শনিবারের কর্মসূচি জানিয়ে জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব অয়ন মজুমদার বলেন, ‘‘জেলা জজ শুভ্রা ঘোষের সভাপতিত্বে জেলা আইনি পরিষেবা কমিটি দেশের অন্য প্রান্তের মতোই শনিবার জেলা লোক আদালত পালন করবে।’’ কিন্তু কেন এইচআইভি আক্রান্ত বা রূপান্তরিত বিচারক সে প্রসঙ্গে অয়নবাবু বলেন, ‘‘এই ধরনের মানুষকে অনেকেই অস্পৃশ্য ভাবেন। তাঁরা যে সমাজের অঙ্গ, এমনকি বিচারকও হতে পারেন, সেই বার্তাও দেওয়া যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy