Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘জাহানাকে ওরা বলে, বিয়ে দেবে আমাদের, কিন্তু মাঝপথেই মেরে ফেলল’

বিহারের মুজফ্ফরপুরের চক আলহদাদ গ্রামের বাসিন্দা জাহানার দেহ মেলে গত ৩০ অগস্ট। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে। শরীরে মেহেন্দি দিয়ে লেখা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে কর্ণের হদিস পায় পুলিশ।

জাহানার বাবা (বাঁ দিকে) ও দাদা। দুই অভিযুক্ত।

জাহানার বাবা (বাঁ দিকে) ও দাদা। দুই অভিযুক্ত।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:২০
Share: Save:

তাঁর সঙ্গে বিয়ে হবে এই আশ্বাসে কলকাতা থেকে বিহারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল জাহানা খাতুনকে (১৯)—এমনই দাবি করলেন জাহানার প্রেমিক কর্ণ রাম। বছর বাইশের ওই যুবকের অভিযোগ, ‘‘মাঝ রাস্তাতেই বাবা-দাদা মিলে ওকে মেরে ফেলল। পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে শেষ করে দেওয়া হল ওকে!’’ ভিন্-ধর্মের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক মানতে না পারায় জাহানাকে খুন করা হয়েছে অভিযোগে তাঁর বাবা মহম্মদ মুস্তাক ও দাদা মহম্মদ জাহিদকে সোমবার গ্রেফতার করেছে পূর্ব বর্ধমান পুলিশ। বুধবার গোপন জবানবন্দি দিতে বর্ধমান আদালতে হাজির করানো হয় কর্ণকে।

বিহারের মুজফ্ফরপুরের চক আলহদাদ গ্রামের বাসিন্দা জাহানার দেহ মেলে গত ৩০ অগস্ট। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে। শরীরে মেহেন্দি দিয়ে লেখা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে কর্ণের হদিস পায় পুলিশ। কর্ণ জাহানার পড়শি। আট বছর আগে জরির কাজ শিখতে আমদাবাদে গিয়েছিলেন। কাজ শিখে যোগ দেন নাগপুরের একটি কারখানায়।

বুধবার কর্ণ জানান, বছর দু’য়েক আগে জাহানার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। বছরখানেক আগে সমস্তিপুরে মাসির বাড়ি যাওয়ার নাম করে নাগপুরে পৌঁছে যান জাহানা। কিন্তু সে কথা জানাজানি হতেই ‘হামলা’ হয় কর্ণের বাড়িতে। কর্ণের দাবি, ‘‘আমার পরিবারকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেওয়া হয়। জাহানাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হই।’’

যুবক জানান, নাগপুরে জরির কারখানায় তাঁর সঙ্গে ওই গ্রামের আরও কয়েক জন কাজ করতেন। জাহানাকে নিয়ে তাঁদের একাংশের সঙ্গে ‘ঝামেলা’ হয় তাঁর। ফলে, মাস কয়েক আগে মুম্বইয়ে চলে যান কর্ণ। ঝামেলা এড়াতে ঘনঘন নম্বর বদলে ফেলেন। তবে জাহানার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। পুলিশ জেনেছে, মাসখানেক আগে এক বার গ্রামে কর্ণের বাড়িতে গিয়েছিলেন জাহানা। বলেছিলেন, ‘এ বার আপনারা আমাকে ছেলের বউ করে ঘরে রাখুন’। তবে জাহানার বাড়ির লোকেরা সেখান থেকে তরুণীকে তুলে নিয়ে যায়।

সম্প্রতি জাহানাকে কলকাতায় আত্মীয়দের বাড়িতে নিয়ে আসেন তাঁর বাবা, দাদা। গত ৩০ অগস্ট মুজফ্ফপুরের পথে খুন করা হয় তরুণীকে। সে দিন বাবা-দাদার সঙ্গে মেয়েটিকে জামালপুরের নবগ্রাম ট্রাক টার্মিনালের কাছে দেখেন দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। আজ, বৃহস্পতিবার বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ধৃতদের শনাক্ত করার কথা তাঁদের। জেলা এসপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শনাক্তকরণের পর্ব মিটলে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হবে।’’

আগেই জাহানাকে বিয়ে করেননি কেন? কর্ণ বলেন, ‘‘বিয়েই করতাম। তার আগেই তো...!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Honour Killing Burdwan Boyfriend
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE