Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বর্ষার পেঁয়াজ ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে চাষির

বর্ষা মানেই ধান—এই ধারণায় আর আটকে নেই রাজ্যের চাষিরা। গত কয়েক বছরে তাঁরা খরিফ পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকছেন। বাড়তি লাভের আশায় ধানের পাশাপাশি এক-দেড় বিঘা জমিতে নাসিকের ‘এগ্রিফাউন্ড ডার্ক রেড’ প্রজাতির চাষ করছেন।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

বর্ষা মানেই ধান—এই ধারণায় আর আটকে নেই রাজ্যের চাষিরা। গত কয়েক বছরে তাঁরা খরিফ পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকছেন। বাড়তি লাভের আশায় ধানের পাশাপাশি এক-দেড় বিঘা জমিতে নাসিকের ‘এগ্রিফাউন্ড ডার্ক রেড’ প্রজাতির চাষ করছেন।

রাজ্যাও বর্ষায় পেঁয়াজ চাষকে উৎসাহ দিচ্ছে। কেন? উদ্যানপালন দফতরের কর্তাদের যুক্তি, প্রতি বছর পুজোর আগে পেঁয়াজের দাম বাড়ে রাজ্যে। তার কারণ, ভিন্্ রাজ্য থেকে পেঁয়াজের জোগান কম থাকে ওই সময়। বর্ষায় পেঁয়াজ বুনলে তা জমি থেকে উঠবে ১১০-১২০ দিনের মাথায়। ফলে পুজোর বাজারে ভাল দাম মিলবে।

রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের উপদেষ্টা শুভাশিস বটব্যাল জানালেন, এ বার রাজ্যে এক হাজার একর জমিতে বর্ষার পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথামাফিক চাষে অনেক সময় চাষির লাভ কম হয়। ধান, আলু থেকে বেরিয়ে বিকল্প হিসেবে পেঁয়াজ চাষের পরামর্শ দিচ্ছি।’’ বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমের মতো যে সব জেলায় কম বৃষ্টি হয়, সেখানে বর্ষায় পেঁয়াজ আদর্শ চাষ। তবে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই এ বার কমবেশি পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় খেজুরি, নন্দীগ্রাম, মহিষাদল প্রভৃতি ব্লক মিলিয়ে ২০ জন কৃষক বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। চাষের জন্য কৃষকদের প্রতি ডেসিমাল জমি পিছু ৮০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছিল। দফতরের আধিকারিক স্বপনকুমার শিট জানান, চলতি বছরে জেলার ২৩টি ব্লকে কয়েকশো চাষি ৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করছেন।

হুগলির বলাগড়ের ড্যামোরগাছার চাষি অসিত নায়েক, বাকুলিয়ার বুদ্ধদেব ঘোষ, নির্মল সাঁতরা প্রমুখ জানালেন, গত মরসুমে লাভের মুখ দেখেছেন বর্ষার পেঁয়াজ চাষে। তাঁদের কথায়, ‘‘বিঘে প্রতি ১৬-১৮ হাজার টাকা খরচ হয় পেঁয়াজ চাষে। চাষের খরচ একটু বেশি হলেও, বিঘে প্রতি অন্তত ১০-১৫ হাজার টাকা লাভ হবেই। ফসল ভাল হলে বিঘে প্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা লাভও অসম্ভব নয়।’’ তাঁরা জানালেন, এক হেক্টর জমিতে তিনশো থেকে চারশো কুইন্টাল পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়।


শুভাশিস বটব্যাল,
রাজ্য উদ্যানপালন দফতরের উপদেষ্টা

• এই সময় পেঁয়াজ বুনলে তা জমি থেকে উঠবে ১১০-১২০ দিনের মাথায়। পুজোর সময় যখন চাহিদা বাড়ে পেঁয়াজের, তখন ভাল দাম মিলবে।

• বীজতলায় ব্যাকটেরিয়া যাতে না জন্মায় সেই জন্য গোবর সারে কীটনাশক মিশিয়ে দিতে হয়। বৃষ্টি থেকে বীজতলা বাঁচানো অত্যন্ত জরুরি।

• এ বছর এ রাজ্যে প্রায় হাজার একর জমিতে বর্ষার পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। ধান, আলু থেকে বেরিয়ে বিকল্প চাষ হিসেবে পেঁয়াজ চাষের পরামর্শ দিচ্ছি।

এই চাষে বীজ এবং বীজতলা, দুই-ই শোধন জরুরি। হুগলির কানানদী এলাকার বিশেষজ্ঞ চাষি কাশীনাথ পাত্র বলেন,‘‘পেঁয়াজ চাষে বীজতলা তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ তিনি জানান, বীজতলায় ব্যাকটেরিয়া যাতে না জন্মায় সেই জন্য গোবর সারে কীটনাশক (ডাইকোডার্মা ভিডিপি) মিশিয়ে দিতে হয়। ঝুরো মাটিতে বীজতলা তৈরির পর খড় দিয়ে তা চাপা দিতে হয়। বৃষ্টি থেকে বীজতলা বাঁচাতে উপরে প্লাস্টিকের ছাউনি করে দেওয়া জরুরি। চারা গাছ বের হলে তা জমিতে বসানো হয়। পলি শেডে পেঁয়াজ চাষের বীজতলা তৈরি করলে বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। উঁচু, জল দাঁড়ায় না, এমন জমিই বর্ষার পেঁয়াজ চাষে আদর্শ। ঝুঁকি এড়াতে জমিতে নালা কেটে দিতে হয়। যাতে জল গড়িয়ে যায়। গোবর এবং জৈব সার দিতে হবে। রোগ, পোকার আক্রমণ থেকে গাছ বাঁচাতে ওষুধও চাই।

পেঁয়াজ চাষের জমি রাজ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকলেও, বীজের জন্য সেই নাসিকের উপরই এখনও নির্ভর করতে হচ্ছে । ১৮০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে ‘এগ্রি ফাউন্ড ডার্ক রেড’ বীজ কিনে এনেছে রাজ্যের উদ্যানপালন দফতর। বলাগড়ের কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক অনিরুদ্ধ দত্ত বলেন, ‘‘অন্যান্য বীজের থেকে নাসিকের এই প্রজাতির বীজে ফলন ভাল হয়। বর্ষায় কিছুটা জল পেলেও চারাগাছ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ পরিবেশের তারতম্য সহ্য করার ক্ষমতা এই বীজের বেশি। তাই আমরা নাসিকের বীজেই চাষ করার পরামর্শ দিই।’’ নিম্নমানের বীজে চাষ করে ক্ষতি হলে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাবেন চাষিরাই।

(তথ্য সহায়তা আনন্দ মণ্ডল)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE