Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

কোভিড-ভয়ে ঘরবন্দিই কি তবে শাপে বর

চিকিৎসকদের একটি অংশের মতে, খাবারে বিষক্রিয়ার কারণে অসুস্থতা ও ফুসফুসের সমস্যা এখন অনেকটাই কম।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ০৫:২৪
Share: Save:

চিকেন পক্স হোক কিংবা জলবাহিত কোনও রোগ অথবা পথ দুর্ঘটনা— সবই যেন নাগরিক জীবন থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের ধারণা, কোভিডের আতঙ্কে মানুষের দীর্ঘ সময় বাড়িতে থাকা এবং বাইরের খাবার এড়িয়ে চলাই এর প্রধান কারণ। ফলে করোনা মানুষের জীবনে অভিশাপ, না কি শাপে বর, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।

চিকিৎসকদের একটি অংশের মতে, খাবারে বিষক্রিয়ার কারণে অসুস্থতা ও ফুসফুসের সমস্যা এখন অনেকটাই কম। যদিও অন্য অংশ মনে করেন, লকডাউন এবং কোভিড আতঙ্কে মানুষ চিকিৎসক এবং হাসপাতালমুখী হতে না চাওয়ায় অসুখের খবর সামনে আসছে না। সরকারি হাসপাতালের হিসেব বলছে, অন্যান্য অসুস্থতা এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। তবে অতিরিক্ত মোবাইল এবং কম্পিউটারের ব্যবহারের কারণে ছোটদের ঘুমের ঘাটতি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

মেডিসিনের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, প্রতি বছর এই সময়ে তাঁর অধীনে অন্তত ২০ জন টাইফয়েডের রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এ বার এক জনও আসেননি। তাঁর কথায়, “জন্ডিস এবং ডায়রিয়ার মতো জলবাহিত অসুখ কিংবা পথ দুর্ঘটনার রোগী এখন কম। গরমের শুরুতে যে চিকেন পক্সের প্রাদুর্ভাব হয়, তেমন রোগীও প্রায় আসেননি।” স্বাভাবিক দিনে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পথ দুর্ঘটনায় জখম ২০-২৫ জন অন্তত আসেন। লকডাউনের কারণে এখন তেমন রোগীর সংখ্যা দিনে একটি বা তারও কম বলে জানাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

লকডাউন ও কোভিডের জেরে হাসপাতালগুলিতে স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়াই যে সাধারণ রোগীদের সামনে না আসার বড় কারণ, তা মানছেন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট মহেশ গোয়েন্কা। তিনি জানাচ্ছেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ রোগী বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ভিড় করছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, “খাবারে বিষক্রিয়া এবং জলবাহিত অসুখ, যেমন জন্ডিস, হেপাটাইটিস, ডায়রিয়া, বমির সমস্যা নিয়ে আসা রোগী এখনও খুব কম। অ্যালকোহলের জন্য হেপাটাইটিস, প্যাংক্রিয়াটাইটিসের যে সমস্যা প্রতি বছর সামনে আসে, তা-ও এই সময়ে কম। মূলত লকডাউনের দ্বিতীয় মাস থেকে এই পরিবর্তন লক্ষণীয়।”

এসএসকেএমের চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী অবশ্য বলছেন, “কোভিডের ভয়ে তো রোগী এবং চিকিৎসক, পরস্পরের থেকে দূরে সরে আছেন। রোগীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়ে রয়েছে ডাক্তারদের। এমন অবস্থায় অন্য অসুখ বেড়েছে না কমেছে, তা বলার মতো পরিস্থিতি নেই।” আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ থেকে সদ্য অবসর নেওয়া মেডিসিনের চিকিৎসক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমপান-বিধ্বস্ত এলাকায় পানীয় জল ও শৌচালয়ের দূষণের কারণে ইতিমধ্যেই জলবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। কোভিড আতঙ্কের পাশাপাশি অন্য সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাও বাড়ছে‌। তবে শহর এলাকার চিত্রটা অবশ্যই আলাদা। জলবাহিত রোগ বা খাবারে বিষক্রিয়ার সংখ্যা অন্য বছরের তুলনায় কম।

শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ মানছেন, লকডাউন চলাকালীন ঘরবন্দি ও নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ফলে রোগের বিস্তার কমেছে। “দূষণ হ্রাস পাওয়ায় ছোটদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস অনেক কমেছে। ফোনে বাবা-মায়েরা মূলত অভিযোগ করছেন, শিশুদের ঘুমের সমস্যা নিয়ে। আর কিছু পেটের অসুখের রোগী আসছে। সেটা নিতান্তই বাড়িতে ভূরিভোজ করার ফল।’’

চিকিৎসকেরা জানান, লকডাউন শিথিল হলেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়গুলিও মনে রাখতে হবে। ফাস্ট ফুড বা বাইরের খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে। করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি পেটের অসুখ, ফুসফুসের অসুখ নিয়ন্ত্রণেও এই সচেতনতা কাজে আসবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE