Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে বোমা ও রক্ত, সাক্ষ্য খাগড়াগড়ে

বৃহস্পতিবার ছিল বাড়ি-মালিকের সাক্ষ্যের দ্বিতীয় দিন। আগের দিনের সাক্ষ্যে তিনি বলেছিলেন, বোরখা আর নাইটির কারিগরের ভেক ধরে এসে জঙ্গিরা লিখিত চুক্তি ছাড়াই চার মাস তাঁর বাড়িতে ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

ঘরের মেঝেতে এবং দেওয়ালের এখানে-ওখানে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে বোমা বাঁধার নানা মাপের তার। আর ঘরের এক কোণে ডাঁই করে রাখা ৫২টি তাজা বোমা!

খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরের দিন সকালে পুলিশের সঙ্গে নিজের ভাড়া দেওয়া বাড়ির দোতলার ঘরের তালা খুলে ঢুকে এ-সবই দেখতে পেয়েছিলেন বাড়িওয়ালা। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় সাক্ষ্য দিতে উঠে বাড়ি-মালিক বৃহস্পতিবার বিচারককে এ কথা জানান বলে কলকাতার এনআইএ আদালত সূত্রের খবর।

বৃহস্পতিবার ছিল বাড়ি-মালিকের সাক্ষ্যের দ্বিতীয় দিন। আগের দিনের সাক্ষ্যে তিনি বলেছিলেন, বোরখা আর নাইটির কারিগরের ভেক ধরে এসে জঙ্গিরা লিখিত চুক্তি ছাড়াই চার মাস তাঁর বাড়িতে ছিল। তবে তখন তাঁর পক্ষে তাদের জঙ্গি বলে চিনে ওঠা সম্ভব হয়নি। তিনি তাদের বলে দেন, চুক্তি না-করলে বাড়ি ছাড়তে হবে।

বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ওই বাড়ির দোতলায় বিস্ফোরণ হয় ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর। আদালতের খবর: বাড়িওয়ালা এ দিন তাঁর সাক্ষ্যে জানান, বিস্ফোরণের পরের দিন সকাল ৬টা ২০ মিনিট নাগাদ পুলিশ এসে তাঁকে নিয়ে বাড়ির দোতলায় উঠে তালা খোলে। বাড়ির মধ্যে দু’টো আধপোড়া কাঠের বাক্সও দেখেন তিনি। এ ছাড়াও বিস্ফোরণস্থলে পাওয়া যায় তিনটি বোমার খোল। ৩ অক্টোবর তাঁর সামনেই ৫২টি তাজা বোমা নিষ্ক্রিয় করার জন্য দামোদরের পাড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। তার পরে তারা বাজেয়াপ্ত সামগ্রীর তালিকায় তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে নেয়।

৪ অক্টোবরও বর্ধমান থানার পুলিশ খাগড়াগড়ের বাড়িতে আসে বলে বিচারককে জানান বাড়িওয়ালা। আদালত সূত্রের খবর: বাড়িওয়ালা জানান, পুলিশ তাঁর সামনে দোতলার বাড়ির তালা খুলে ৪৪-৪৫টি সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে। আদালতের পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী চলতি পর্বে এই মামলায় ৩১ অগস্ট অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাক্ষ্য নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাড়িওয়ালার সাক্ষ্য এ দিনও শেষ হয়নি। আজ, শুক্রবার আবার তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া হবে।

বর্ধমানের সেই সময়কার দমকল আধিকারিক এ দিন সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য হাজির ছিলেন। কিন্তু অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীর আপত্তিতে তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া যায়নি। ওই আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, বাড়ির মালিকের সাক্ষ্য বুধবার শেষ হয়নি। সেটি আগে শেষ হোক। বিচারক তাতে সায় দিয়ে জানান, দমকল-কর্তার সাক্ষ্য পরে নেওয়া হবে।

এনআইএ-র তরফে এ দিনও আদালতে আবেদন জানানো হয়, সাক্ষ্যগ্রহণের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যথাযথ নির্দেশ দেওয়া হোক। কারণ, সাক্ষ্য পর্বের খবর বেরিয়ে যাওয়ায় সাক্ষীদের নিরাপত্তার আশঙ্কা রয়েছে।

তদন্তকারী সংস্থার আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী মহম্মদ আবু সেলিম বলেন, খবর পরিবেশন নিয়ন্ত্রণ করলে সেটা হবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।

দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে এনআইএ আদালতের বিচারক কুন্দনকুমার কুমাই এনআইএ-র আইনজীবীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, এই ধরনের মামলায় সাক্ষ্যের সংবাদ প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে সুপ্রিম কোর্টের কোনও নির্দেশিকা আছে কি? ওই আইনজীবী তেমন কোনও নির্দেশিকা দেখাতে পারেননি বলেই আদালত সূত্রের খবর। বিচারক তাই এনআইএ-র আবেদনের ভিত্তিতে কোনও মন্তব্য করেননি, কোনও নির্দেশও দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE