Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘দাওয়াত’ দিয়ে ভোজ খাইয়ে জঙ্গিপনায় দীক্ষা

জঙ্গিপনায় তরুণ-যুবকদের টেনে আনতে রবিউল যে-অভিনব কৌশল নিয়েছিল, তা দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা।

রবিউল ইসলাম

রবিউল ইসলাম

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০৩:৩৩
Share: Save:

সঙ্গীরা বাংলাদেশি হলেও তার বাড়ি বীরভূমের নয়াগ্রামে। তাকে দলে টেনেই ও-পার থেকে আসা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) -এর জঙ্গিরা বীরভূম, মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সংগঠন ছড়িয়ে দেওয়ার ছক কষেছিল। আলাপ ফেসবুকে। তার পরে জঙ্গি গড়তে বীরভূমের রবিউল ইসলামই হয়ে উঠেছিল সীমান্ত ডিঙিয়ে আসা বাংলাদেশি জঙ্গিদের ডান হাত।

জঙ্গিপনায় তরুণ-যুবকদের টেনে আনতে রবিউল যে-অভিনব কৌশল নিয়েছিল, তা দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রবিউল বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের গ্রামে মাঝেমধ্যেই ‘দাওয়াত’ বা ভোজসভার আয়োজন করত। দেদার খাওয়াদাওয়ার ফাঁকেই চলত নানান উস্কানিমূলক উত্তেজক কথাবার্তা। সেই সব কথায় যারা প্রভাবিত হত, তাদের আলাদা করে আবার ডেকে নিত সে। ধীরে ধীরে মগজধোলাই করত সেই সব তরুণ-যুবকের। কয়েক বছর ধরে এ ভাবেই জঙ্গি ভাবধারা প্রচার করেছে এবং নতুন নতুন জঙ্গি গড়ার চেষ্টা চালিয়েছে রবিউল। এই কাজে ভারত-বিদ্বেষী কথাবার্তাই তার মূল হাতিয়ার ছিল বলে জানাচ্ছে পুলিশ।

বছর ছয়েক আগেই জঙ্গি সংগঠনে নাম লিখিয়েছিল রবিউল। কিন্তু বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ বা বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের তদন্তে বীরভূমের রবিউলের কথা এত দিন জানা যায়নি বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হতেই রবিউল ফের জঙ্গি সংগঠনের প্রচার শুরু করেছিল। তত দিনে জেএমবি-র সংগঠন ভাগ হয়ে গিয়েছে। উপরন্তু এতটাই তলে তলে সে প্রচার চালাত যে, গোয়েন্দারা তার হদিস পাননি।

পুলিশি সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে বোলপুরের একটি গ্রামে জেএমবি-র প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছিল। সেখানেই জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখায় রবিউল। সেই শিবিরে মগজধোলাই থেকে শারীরিক প্রশিক্ষণ সবই চলত। ইউসুফ, তালহা শেখ, হাতকাটা নাসিরুল্লার মতো জেএমবি-র শীর্ষ জঙ্গিরা সেই শিবিরে ছিল। ২০১৪-য় কাশ্মীরেও গিয়েছিল রবিউল।

সম্প্রতি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে নজরদারির সূত্রে রাজ্যে জেএমবি-র নতুন একটি গোষ্ঠীর (নব্য জেএমবি) সন্ধান পায় কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। সোমবার রাতে শিয়ালদহ-হাওড়া থেকে রবিউল-সহ চার জনকে গ্রেফতার করে তারা। তাদের মধ্যে তিন জন বাংলাদেশি। তারা এখন এসটিএফের হেফাজতে।

পুলিশের দাবি, বাংলাদেশের তিন জঙ্গি মহম্মদ জিয়াউর রহমান ওরফে মহসিন, মামুনুর রশিদ ও মহম্মদ শাহিন আলম ওরফে আলামিন সীমান্ত টপকে এ রাজ্যে ঢোকে। মামুনুর ও আলামিন হাওড়া-উলুবেড়িয়ার তেহট্ট লায়েকপাড়ায় ২৪০০ টাকায় তিনটি ঘর ভাড়া নিয়ে সংগঠনের কাজকর্ম চালাত। দিনের বেলায় ভ্যানরিকশায় গৃহস্থালির জিনিসপত্র ফেরি করত তারা। ধরা পড়ার পরে পুলিশ তাদের নিয়ে ওই এলাকায় যায়। তারা ঘর তিনটি দেখিয়ে দেওয়ার পরে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে তাদের ভোটার কার্ড বাজেয়াপ্ত করে। ওই সব কার্ড জাল বলেই তদন্তকারীদের সন্দেহ। তারা তিনটি ঘরই সিল করে দিয়েছে।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মহসিন-মামুনুর-আলামিনের সঙ্গে মিলে ফেসবুক মারফত নতুন গোষ্ঠী তৈরি করেছিল রবিউল। তারা ইসলামিক স্টেট বা আইএস-পন্থী। জঙ্গিপনার কথা বলে বীরভূম-মুর্শিদাবাদে বেশ কিছু ছেলের মগজ ধোলাই করেছে রবিউল। তাকে জেরা করে এই সব তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JMB Terrorists
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE