Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বর্ধমান স্টেশনের নাম বদল কেন? প্রশ্ন খোদ মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়াই বর্ধমান রেল স্টেশনকে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে চিহ্নিত করার জন্য কেন্দ্রের তরফে কী ভাবে একতরফা উদ্যোগ চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। রাজ্যের বিদগ্ধজনদের বড় একটি অংশ এবং শাসক দল তৃণমূল ‘বাংলা’ চাইলেও তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সায় মিলছে না। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়াই বর্ধমান রেল স্টেশনকে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে চিহ্নিত করার জন্য কেন্দ্রের তরফে কী ভাবে একতরফা উদ্যোগ চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ওই স্টেশনের নাম বদলের চেষ্টা আদৌ চলছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী সোমবার নবান্নে বলেন, ‘‘কোনও স্টেশনের নাম পরিবর্তন করতে গেলে রাজ্য সরকারের মতামত নিতে হয়। নাম পরিবর্তনের ছাড়পত্র দেয় রাজ্যই। এটা (বর্ধমান স্টেশনের নাম বদল) বিজেপির প্রস্তাব। গণতন্ত্রে সরকার চলে সংবিধান মেনে। কোনও রাজনৈতিক দলের ইচ্ছায় নয়।’’

রাজনৈতিক শিবিরের পর্যবেক্ষণ, বিষয়টি রাজনৈতিক মোড় নিচ্ছে। ‘বাংলা’ অনুমোদনের বিষয়টি কেন্দ্র যে-হেতু ঝুলিয়ে রেখেছে, বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মমতাও তাই রাজ্যের ছাড়পত্রের আবশ্যিকতার কথা তুলছেন। কয়েক দিন আগে বর্ধমান স্টেশনের নাম বদল করে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে রাখার পরিকল্পনার কথা জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। সে-কথা প্রকাশ্যে আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী তো বটেই, এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্থানীয় জৈন সম্প্রদায়ের মানুষজনও।

বর্ধমান জৈন মাইনরিটি কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক রাজ সিংহ ভুতোড়িয়া রবিবার রাতেই রেলমন্ত্রীকে টুইট করে এই বিষয়ে তাঁদের আপত্তির কথা জানান। তাঁর বক্তব্য, বর্ধমানের নামকরণের ইতিহাসের সঙ্গে জৈন ধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীরের নাম জড়িয়ে আছে। প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো সেই ইতিহাস অস্বীকার করে এ ভাবে স্টেশনের নাম আচমকা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক। রেলমন্ত্রী ছাড়াও তাঁরা নিজেদের আপত্তির কথা টুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্থানীয় বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে জানিয়েছেন বলে দাবি ভুতোড়িয়ার। তিনি জানান, ওই অঞ্চলের সামগ্রিক ইতিহাসের থেকে বর্ধমান স্টেশনকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা ঠিক নয়। ‘‘এ ভাবে নাম বদলের চেষ্টা মানব না। প্রয়োজনে আমরা রেলের বিরুদ্ধে আদালতে যাব,’’ বলেন ভুতোড়িয়া

বটুকেশ্বরের নামে স্টেশন কেন?

বটুকেশ্বরের জন্ম ১৯১০ সালে বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে। পরে কানপুরে পড়াশোনা করার সময় ভগৎ সিংহ ও চন্দ্রশেখর আজাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তাঁর। ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় আইনসভায় ভগৎ সিংহের সঙ্গে বোমা ছুড়েছিলেন বটুকেশ্বর। সেই অপরাধে পরে তাঁকে আন্দামানে সেলুলার জেলেও পাঠানো হয়। দিল্লিতে তাঁর নামে আছে বি কে দত্ত কলোনি। বটুকেশ্বরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সম্প্রতি পটনায় ওই বিপ্লবীর মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ। বর্ধমান স্টেশনকে বিপ্লবীর নামে চিহ্নিত করার পরিকল্পনার কথা সেই মহিলাকে জানান তিনি। তার পরে সে-কথা ঘোষণাও করেন মন্ত্রী।

বর্ধমান শহরবাসীর বড় অংশ এ ভাবে স্টেশনের নাম বদলের উদ্যোগে খুশি নন। তাঁদের অভিযোগ, বর্ধমান শহরের সঙ্গে আরও অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির নাম জড়িয়ে আছে। তাঁদের পরিবার যদি এমন দাবি তোলে, পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে?

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউরেটর রঙ্গন জানা বলেন, ‘‘এ ভাবে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ভুল। এর চেয়ে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে প্রচার করলে তাঁকে অনেক বেশি সম্মান দেখানো হবে।’’

এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে বিজেপির স্থানীয় সাংসদ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘সরকারি স্তরে নাম পরিবর্তন নিয়ে কোনও আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি।’’ পূর্ব রেলের কর্তারাও জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে এই বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE