মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান ‘বড়মা’ তথা বীণাপাণিদেবীর স্বামী প্রমথরঞ্জন ঠাকুর।—ছবি সংগৃহীত।
সেটা ছিল চতুর্থ লোকসভা নির্বাচন। ১৯৬৭ সালে নবদ্বীপ থেকে নির্বাচিত হলেন ‘বাংলা কংগ্রেস’-এর প্রার্থী প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। যিনি পি আর ঠাকুর নামে সমধিক পরিচিত। ১৯৬৭-৭১ পর্যন্ত নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্রে সাংসদ, ব্যারিস্টার পি আর ঠাকুর ছিলেন সদ্য প্রয়াত মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান ‘বড়মা’ তথা বীণাপাণিদেবীর স্বামী। বড়মার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকে নবদ্বীপের প্রবীণ রাজনৈতিক মানুষদের স্মৃতিতে ফিরে আসছে সেই সব দিনের কথা।
স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালে ভারতে প্রথম লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময়ে নদিয়া জেলায় লোকসভা কেন্দ্র ছিল দু’টি। শান্তিপুর এবং নবদ্বীপ। এরমধ্যে শান্তিপুর লোকসভা আসনটি ১৯৫৭ সালের দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনের সময়েই বাদ পড়ে যায়। ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ সালের সাধারণ নির্বাচন নদিয়ায় একমাত্র লোকসভা কেন্দ্র ছিল নবদ্বীপ। ১৯৬৭ সালের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে নদিয়ার দ্বিতীয় লোকসভা কেন্দ্র হিসাবে কৃষ্ণনগরকে বেছে নেওয়া হয়। এই বছরেই নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্রে বাংলা কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর।
নবদ্বীপের তৎকালীন কংগ্রেস নেতা প্রবীণ ষষ্ঠীভূষণ পাল বা বর্তমানে নবদ্বীপ ব্লক তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সতীশ দেবনাথ প্রমুখের স্মৃতিতে পি আর ঠাকুরের নাম এখনও উজ্জ্বল। তাঁরা জানান, পি আর ঠাকুর তুখোড় বক্তৃতা করতেন। নবদ্বীপের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর বিদ্যুৎ ভৌমিক বলেন, ‘‘লোকসভায় জেতার পর নবদ্বীপে আমরা বিজয় মিছিল করে ছিলাম। উনি একটা খোলা জিপে চড়ে সকলকে নমস্কার করতে করতে যাচ্ছিলেন। তখন আমরা কলেজে পড়া তরুণ।”
নদিয়ার সঙ্গে পি আর ঠাকুরের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছয়ের দশকের গোড়া থেকে। দক্ষিণপন্থী মানুষটি বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতীকে নির্বাচনে লড়েছেন। নবদ্বীপ লোকসভার আগে ১৯৬২ সালে হাঁসখালি থেকে বিধানসভা ভোটে জিতে বিধান রায়ের মন্ত্রীসভায় ট্রাইবাল অয়েলফেয়ার দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। সে বার তিনি কংগ্রেসের হয়ে হারিয়ে ছিলেন সিপিআই এর জ্ঞানেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে। পি আর ঠাকুর পেয়েছিলেন ১৬৯১৯ ভোট, জ্ঞানেন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন ১৩১৫৭ ভোট।
১৯৬৭ সালের লোকসভা ভোটে প্রমথরঞ্জন নবদ্বীপ থেকে দাঁড়ালেন বাংলা কংগ্রেসের হয়ে। হারিয়ে দিলেন পুরানো দল কংগ্রেসের প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বিশ্বাসকে। পি আর ঠাকুর পেয়েছিলেন ২১৫৪৬৩ ভোট। অন্য দিকে, কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ১৩৬৩৬৭ ভোট। পরের বার ফের নবদ্বীপ থেকে লোকসভা ভোটে দাঁড়ান প্রমথরঞ্জন। এ বার তিনি কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়ালেও সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন। সিপিএমের বিভা ঘোষ গোস্বামী পেয়েছিলেন ১৭৬৫৪৩ (৪৬.৮৮ শতাংশ) ভোট। অন্য দিকে, পি আর ঠাকুর পেয়েছিলেন ১৬৫৯৪৩ (৪৪.০৬ শতাংশ) ভোট।
২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে সীমানা পুনর্বিন্যাস হয়। তখন নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্রটি বাদ পড়ে। শান্তিপুরের নাম আগেই হারিয়ে গিয়েছিল। এ বার হারিয়ে গেল নবদ্বীপও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy