Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিকড়ের স্বাস্থ্য ফেরােত ফসফেট

লাগামছাড়া বৃষ্টি। উঁচু জমি যা-ও বা জেগে আছে, মাঝারি-নিচু জমি দীর্ঘ দিন জলের তলায়। ভ্যাপসা আবহাওয়ায় রোগ-পোকা-আগাছার উৎপাত বাড়ছে। প্রতিকূল এই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলে চলবে না চাষিদের। কোমর বেঁধে নামুন মাঠে।লাগামছাড়া বৃষ্টি। উঁচু জমি যা-ও বা জেগে আছে, মাঝারি-নিচু জমি দীর্ঘ দিন জলের তলায়। ভ্যাপসা আবহাওয়ায় রোগ-পোকা-আগাছার উৎপাত বাড়ছে। প্রতিকূল এই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলে চলবে না চাষিদের। কোমর বেঁধে নামুন মাঠে।

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৫ ০০:১৭
Share: Save:

এখন ধান চাষ

বীজতলায় ২.৫-৫ সেমির বেশি জল রাখা যাবে না। যাঁরা ধানের চারা রোপণ করে ফেলেছেন, তাঁরা খেয়াল রাখুন ডগা যেন কোনও ভাবে জলের তলায় চলে না যায়। বেশিদিন জলের তলায় থাকলে চারা পচে যাবে। যে করে হোক জল বার করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই আবহাওয়ায় বীজতলায় দেখা দিতে পারে বাদামি দাগ রোগ। অতি বৃষ্টি, উচ্চ তাপমাত্রা, অতিরিক্ত আর্দ্রতা এবং বীজতলায় নাইট্রোজেন, সালফার ইত্যাদি উদ্ভিদ খাদ্যমৌলের অভাবে এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। ব্যবহার করুন এডিফেনফস গোত্রের ওষুধ (কিটাজিন) ১ মিলি প্রতি লিটার জলে।

ঝলসা বা বাদামি দাগ রোগ দেখা দিলে ট্রাইসাইক্লোজোল ০. ৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

বীজতলায় মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে চারাকে রক্ষা করার জন্য রোয়ার এক সপ্তাহ আগে প্রতি কাঠা বীজতলায় ৩০০ গ্রাম কার্বোফিউরান ৩ জি বা ২৫০ গ্রাম কার্টাপ ৪জি বা ১০০ গ্রাম ফোরেট ১০ জি প্রয়োগ করে ৫ সেমি জল ধরে রাখা উচিত।

চারায় খয়রা রোগের লক্ষ্মণ দেখা দিলে চিলেটেড জিঙ্ক বা জিঙ্ক ইডিটিএ ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

বীজতলায় সাধারণত গোড়া পচা বা খোলা পচা রোগ দেখা যায় না। দেখা দিলে ২ মিলি ভ্যালিয়ামাইসিন প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

তবে, প্রচুর জল দাঁড়িয়ে থাকলে এই সময় অযথা রাসায়নিক সার বা ওষুধ মাটিতে দেবেন না। সেক্ষেত্রে তা সত্যিই জলে যাবে, গাছের কাজে আসবে না। মূল সার কম দেওয়া হলে জল সরার পর চাপান সারের পরিমাণ বাড়ান। জল জমে ধানের গোড়ায় যে ক্ষতি হয়েছে, তার সমাধানে ফসফেট ও রোগ প্রতিরোধের জন্য পটাশ সার দিন।

জলে ডুবে থাকার জন্য চারার বয়স বেশি হয়ে গেলে (২১ দিনের বেশি) বীজতলায় রাসায়নিক সার (ইউরিয়া) স্প্রে করুন।

আগে থেকে কিছু ব্যবস্থা

উঁচু (১০ সেমি পর্যন্ত জল দাঁড়ায় বা দাঁড়ায় না), মাঝারি উঁচু (১০-২০ সেমি পর্যন্ত জল), মাঝারি নিচু (২০-৩০ সেমি), নিচু (৩০-৫০ সেমি), প্রায় গভীর নিচু (৫০-৭৫ সেমি) ও গভীর নিচু (৭৫ সেমির বেশি জল দাঁড়ায়) এবং পাহাড়ি ও সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের জন্য আলাদা আলাদা ধানবীজ রয়েছে। জলবায়ু, জমির অবস্থানের ভিত্তিতে আমন ধানের জাত নির্বাচন করুন।

অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় যৌথ বীজ খামার করে সুফল পান। এক্ষেত্রে ৫-৭ দিন ছেড়ে-ছেড়ে বীজ ফেলুন মাপ মতো জায়গায়। আবহাওয়া বিশেষে চারা রোয়ার দিন
এগিয়ে-পিছিয়ে গেলে সমস্যা হয় না।

এখন অতিবৃষ্টির জেরে যেমন জর্জরিত, তেমনই সামনে হয়তো অনাবৃষ্টি। তাই জলাশয় কেটে জলসঞ্চয়ের চেষ্টা করুন।

বীজতলা ও মূল জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ান। মাটির জলধারণ ক্ষমতা, সার্বিক স্বাস্থ্য ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এর জুড়ি মেলা ভার।

অন্য চাষের কথা

যেমন পাট। যাঁরা পাট কেটে ফেলেছেন, তাঁদের জন্য অবশ্যই খুশির সময়। পাট পচানোর জলের অভাব নেই। তবে, অধিকাংশ জমিতেই এখনও পাট রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকড়ের আক্রমণে ব্যবহার করা যেতে পারে উমাইট (২ মিলি প্রতি লিটার জল)। রোদ, বৃষ্টি ও ভ্যাপসা আবহাওয়ায় কাণ্ডে পচা রোগ দেখা দিলে ব্যবহার করুন কার্বেন্ডাজিম (১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে) গোত্রের ওষুধ।

সবচেয়ে বেশি সমস্যা সব্জি চাষে। পটলে কাণ্ড ও ফলপচা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। নিরাপদ থাকতে কপার অক্সিক্লোরাইড (ব্লাইটক্স) ৪ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে প্রয়োগ করুন। রোগ দেখা দিলে ব্যবহার করুন রিডোমিল বা ক্রিল্যাক্সিল জাতীয় ওষুধ (১.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে)। জমিতে আচ্ছাদন থাকলে উল্টে-পাল্টে দিন। খেয়াল রাখুন পটলের লতা ও ফল যেন আচ্ছাদনের উপরে থাকে।

পটল ও বেগুনে গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় স্প্রে করুন কনট্যাফ জাতীয় ওষুধ (১ মিলি প্রতি লিটার জলে)। বেগুনে ফল পচা রোগ দেখা দিলে ব্যবহার করুন ব্লাইটক্স (৪ মিলি প্রতি লিটার জলে) ও স্কোর (১ মিলি প্রতি লিটার জলে)।

ঝিঙে, চিচিঙ্গা, শসায় ছাতু রোগ দেখা দিতে পারে। প্রতিকারে ব্যবহার করতে পারেন ম্যানকোজেব ৭৫% (২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে) বা প্রপিকোনাজল ২৫% (০.৭৫ মিলি প্রতি লিটার জলে)।

লঙ্কায় মাকড় ও ঢ্যাঁড়শে সাদা মাছি ও জ্যাসিড জাতীয় শোষক পোকার উৎপাত দেখা দিলে প্রয়োগ করুন অ্যাসাটাফ বা ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় ওষুধ (১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে)।


কৌশিক ব্রহ্মচারী,
অধ্যাপক, বিধানচন্দ্র
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

• জলবায়ু, জমির অবস্থানের ভিত্তিতে ধান বাছুন। উঁচু জমিতে স্বল্পমেয়াদী ধান (হীরা, কনিকা), নিচু জমিতে দীর্ঘমেয়াদী (মানস সরোবর, শালবাহন)।

• বীজতলা অনেক দিন জলে ডুবে থাকলে শিকড় দুর্বল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে শিকড়ের স্বাস্থ্য ফেরাতে সার হিসাবে ফসফেট দিতে হবে জমিতে।

• চারার বয়স ২১ দিন পেরিয়ে গেলে শিকড় খাদ্য সন্ধানে গভীরে যেতে থাকে। তখন তুলতে সমস্যা হয়। তা যাতে না হয় তার জন্য সার দিন জমিতে।

• কৃষক বন্ধুদের উচিত নিয়মিত ভাবে আবহাওয়া পূর্বাভাসের দিকে খেয়াল রাখা—তা রেডিওতেই হোক বা টিভিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE