বিদায়: নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অজয়কান্তিলালের বিভিন্ন অঙ্গ। পাশে তাঁর স্ত্রী অমিতা দেশাই। শনিবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
মৃত যুবকের পরিবার চায়, অন্যের শরীরেই বেঁচে থাকুন তিনি। তাঁর অঙ্গ নিয়ে বেঁচে থাক আরও কয়েকটি প্রাণ। সেই ইচ্ছে থেকেই ৪৮ বছরের অজয়কান্তিলাল দেশাইয়ের অঙ্গ দান করলেন তাঁর পরিবারের লোকজনেরা। শনিবার হাওড়ার বাসিন্দা ওই ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি সংগ্রহ করা হয়। তার পরে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্যে হাওড়ারই এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ‘গ্রিন করিডর’ করে সেগুলি কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ১১ ডিসেম্বর মধ্য হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন অজয়কান্তিলাল। পেশায় বস্ত্র ব্যবসায়ী ওই ব্যক্তির পরিবারে বৃদ্ধা মা, দুই দাদা, স্ত্রী ও ১২ বছরের ছেলে রয়েছে।
ওই বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে সরকারি চিকিৎসকেরা অজয়কান্তিলালের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করলেও এ দিন সকালে নিয়ম অনুযায়ী ফের তাঁকে পরীক্ষা করা হয়। তার পরে সকাল ১০টা ৩ মিনিটে সরকারি ভাবে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করেন তাঁরা। এর পরেই পরিবারের লোকজন ওই ব্যক্তির অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন। দেশাই পরিবারের প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাহায্যে এগিয়ে আসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার বিপ্রদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিবারের লোকজনের ইচ্ছেকে মান্যতা দিয়ে আমরা সব রকম সাহায্য করেছি।’’ শনিবার ওই হাসপাতালে দাঁড়িয়ে মৃতের অশীতিপর মা ভদ্রাবেন দেশাই বলেন, “অঙ্গদান করা একটা গর্বের ব্যাপার। অঙ্গদানের হাত ধরেই বেঁচে থাক ছেলে।’’
প্রায় একই বক্তব্য সদ্য স্বামীহারা স্ত্রীরও। অমিতা দেশাই নামে ওই মহিলা বলেন, “আমার স্বামী মারা যাওয়ার পরেই আমরা তাঁর অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিই। অঙ্গ গ্রহীতাদের মধ্যেই বেঁচে থাকুন তিনি, এটাই আমার ইচ্ছে।” মৃতের ভাইপো জয় দেশাই জানিয়েছেন, তাঁর কাকা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই কারণে তাঁর অঙ্গও যাতে সমাজসেবায় লাগে, তাই এই সিদ্ধান্ত।
শুক্রবার সন্ধ্যায় অঙ্গদানের সিদ্ধান্তের পরেই পরিবারের লোকজন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরে স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকেরা ওই হাসপাতালে আসেন। তাঁরা মৃতের শারীরিক পরীক্ষা করেন। বিভিন্ন হাসপাতালে কোন কোন অঙ্গের গ্রহীতা রয়েছেন, তার খোঁজখবর নেন তাঁরা। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অজয়কান্তিলালের একটি কিডনি ও ত্বক এসএসকেএম হাসপাতালে এবং আর একটি কিডনি দমদমের এক বেসরকারি হাসপাতালের গ্রহীতাকে দান করা হবে। চোখ দু’টি পাঠানো হবে এক বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালে। শনিবার বিকেলে এসএসকেএম থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা মৃতের দেহ থেকে দু’টি কিডনি সংগ্রহ করেন। পরে রাতের দিকে সংগ্রহ করা হয় তাঁর ত্বক ও দু’টি চোখও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy