সৌরভ মাইতি স্টেশনের চিফ কমার্শিয়াল ক্লার্ক
ভোর থেকে নারায়ণ-পাকুড়িয়া-মুড়াইল স্টেশনে ডিউটি করছিলাম। অফিসের মধ্যেই ছিলাম। মাইকে তখন ঘোষণা হচ্ছিল, মেইন লাইন দিয়ে থ্রু ট্রেন যাবে। কটা আর বাজে তখন। ৭টা কি সওয়া ৭টা! হঠাৎ ট্রেনের শব্দের পাশাপাশি বিকট কড়কড় শব্দ। মনে হল যেন বাড়িটা কাঁপছে।
ছুটে অফিসের বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম। প্ল্যাটফর্মে এসে দেখি, চারদিক ধুলোয় ঢেকে গিয়েছে। প্ল্যাটফর্মে অন্য ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীরা এদিকে ওদিকে ছুটে পালাচ্ছেন। আর হাওড়ার দিকে থেকে লাইনচ্যুত অবস্থায় এগিয়ে আসছে সুপার ফাস্ট ধৌলি এক্সপ্রেস। গতি বেশ খানিকটা কম। তবে তার লাইনচ্যুত চাকার ধাক্কায় প্ল্যাটফর্মে ছিটকে আসছে লাইনের পাশে থাকা পাথরের টুকরো।
স্টেশন পেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে থেমে যায় ট্রেনটি। ততক্ষণে যাত্রীদের চিৎকার গোটা স্টেশনে তৈরি হয়েছে আতঙ্কের পরিবেশ। ট্রেন থামার পরে খোঁজ নিয়ে দেখি, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন যাত্রী পাথরের আঘাতে আহত হয়েছেন। তবে তাঁদের কারও আঘাতই তেমন গুরুতর ছিল না। চোখের সামনে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। আমি দেরি করি না করে দ্রুত ভোগপুর রেল প্যানেলে ফোন করে বিষয়টি জানায়। ওখান থেকে খবর দেওয়া হয় অন্য বিভাগে।
ফোনে খবর দিয়ে যখন ফিরে এলাম, ততক্ষণে ট্রেন থেকে বহু যাত্রী নেমে এসেছেন। প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেনটি থেমেছিল। তবে প্রাথমিক ভাবে দেখে কোনও যাত্রী আহত হয়েছেন বলে মনে হল না। দেখলাম মেইন লাইনের বেশ ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে পরে ডিআরএম ঘটনাস্থলে আসেন। তদন্তও শুরু হয়েছে শুনেছি। কিন্তু ট্রেনটির একটি বগি যেভাবে লাইনচ্যুত হয়েছে, তাতে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এ যাত্রায় জোর ফাঁড়া কেটেছে।
১০ বছর ধরে এখানে চাকরি করছি এ রকম ঘটনা প্রথম প্রত্যক্ষ করলাম। সত্যি বলতে প্রথমের বিকট শব্দে আমি-ই খুব ভয় পেয়েছিলাম। জানি না, ট্রেনের যাত্রীদের তখন কী মানসিক অবস্থা হয়েছিল।
যাত্রীরা পরে যাতে সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে বিকল্প গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy