Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
HOwrah Station

সাড়ে ৭ মাসের ‘ঘুম’ ভাঙা আড়ষ্টতা কাটতেই ভিড়-ব্যস্ততার চেনা ছবি হাওড়া স্টেশনে

ঘড়ির কাঁটা ১০টা ছুঁইছুই। প্ল্যাটফর্মে ঢুকল কাটোয়া লোকাল। কয়েকশো নয়, মনে হল জনস্রোত আছড়ে পড়ল স্টেশন চত্বরে।

ট্রেন চালু হতেই আগের চেনা ছবি ফিরে এল হাওড়া স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র।

ট্রেন চালু হতেই আগের চেনা ছবি ফিরে এল হাওড়া স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ১৪:০০
Share: Save:

৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তারকেশ্বর লোকাল এসে থামা মাত্রই কয়েকশো মানুষের ঢল আছড়ে পড়ল। পুরনো অভ্যেসে চেনা স্টেশনে নেমেই মুখের এন-৯৫ মাস্কটা ভাল করে নাকের উপর টেনে নিয়ে জোরকদমে বাইরে যাওয়ার দরজার দিকে এগোলেন বিশ্বজিত গুঁই।

কিন্তু প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে পৌঁছতেই তাঁর মতো বাকি সবার গতি রোধ করল রেল রক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের বাঁশির তীক্ষ্ণ ধাতব আওয়াজ। না, অন্য সময়ের মতো প্ল্যাটফর্মের মুখোমুখি বাইরে যাওয়ার রাস্তা নয়। রেলরক্ষী বাহিনী যাত্রীদের ঘুরিয়ে দিলেন বাঁ দিকে সাবওয়ের দিকের বাইরে যাওয়ার রাস্তায়।

৭ মাসেরও বেশি সময় পর, বুধবার সকালটা সুরজিৎ কর্মকারের শুরু হয়েছিল চেনা ঢংয়ে। ‘মর্নিং শিফ্টে’ ডিউটি। পেশায় রেলের টিকিট পরীক্ষক সুরজিৎ প্রথম ট্রেন ধরেই কোয়াটার্স থেকে পৌঁছেছিলেন স্টেশন। তার পর অবিরত ‘ইএমইউ’-র মার্কা মারা ভোঁ, আসা যাওয়ার আওয়াজ। যাত্রীদের বাড়তে থাকা ভিড়। সুরজিতের কথায়, ‘‘এই ব্যস্ততাতেই অভ্যস্ত ছিলাম। গত কয়েকমাসে সেই অভ্যেসে যতি পড়েছিল।” ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর চোখে মুখেও একটা স্বস্তির ছাপ। যেমনটা দেখা গেল বিশ্বজিৎবাবুর মুখে। তারকেশ্বর শাখার মালিয়াতে বাড়ি তাঁর। আনলক পর্ব থেকে প্রায় রোজই অফিস করতে হয়েছে পার্ক স্ট্রিটের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী বিশ্বজিৎকে। কখনও বাইকে, আবার কখনও আশপাশের অফিস যাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ভাগাভাগি করে গাড়ি ভাড়া করে অফিস এসেছেন।

ট্রেন চালু হওয়ার ঘোষণার পরেই নিজের ‘মান্থলি’ টিকিটের মেয়াদ স্টেশনে গিয়ে বাড়িয়ে নিয়ে এসেছেন। ট্রেনে কি পর্যাপ্ত করোনা বিধি মানা হচ্ছে? প্রশ্ন শুনেই তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘বাসে, ভাড়ার গাড়িতে, অটোতে কি দাদা খুব কিছু মানা হচ্ছে? বাসের থেকে অনেক সুরক্ষিত এসেছি।”

আরও পড়ুন: বেলা বাড়তেই উধাও স্বাস্থ্যবিধি, উপচানো ভিড়ে ফিরল লোকাল ট্রেনের চেনা ছবিই

কোভিড মোকাবিলার জন্য রেল-রাজ্যের যৌথ ব্যাবস্থাপনায় নেওয়া হয়েছে একাধিক সুরক্ষা বিধি। মেট্রোর ধাঁচেই বসার আসনে ক্রস চিহ্ন দিয়ে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। স্টেশনে ঢোকার মুখেই রাজ্য সরকারের অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীরা প্রতি যাত্রীর দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন। প্রতি স্টেশনে রাখা হয়েছে ‘আইসোলেশন’ জোন। কোনও যাত্রীর তাপমাত্রা বেশি পাওয়া গেলে তাঁকে সেই জোনে রেখে স্বাস্থ্য দফতরকে খবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। থার্মাল গান নিয়ে যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে করতেই অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মী শ্রদ্ধা পাত্র বলেন,‘‘ ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি কারও দেহের তাপমাত্রা পাওয়া গেলেই তাঁকে আটকানো হচ্ছে।” যদিও সকাল থেকে একজনকেও সে রকম পাননি শ্রদ্ধা। প্ল্যাটফর্মে ঢোকার পরেই বসার জায়গাতে যাতে সবাই ভিড় করতে না পারেন বা প্ল্যাটফর্মের কোনও অংশে যাতে ভিড় না হয় তার জন্য নজর রাখছেন রেলরক্ষী বাহিনীর কর্মীরা। মাইকে চলছে কোভিড সচেতনতার প্রচার। প্রথম দিনের ব্যবস্থাপনা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে দেখছেন রেলের শীর্ষ কর্তারা।

তার মধ্যেই প্ল্যাটফর্মে ঢুকল কাটোয়া লোকাল। ঘড়ির কাঁটা ১০টা ছুঁইছুই। কয়েকশো নয়, মনে হল জনস্রোত আছড়ে পড়ল স্টেশন চত্বরে। যাত্রীদের তাড়াহুড়ো, রেল রক্ষীদের দৌঁড়ঝাপ — এক লহমায় ফিরিয়ে দিল চেনা হাওড়া স্টেশনের ছবি। এক প্রৌঢ়া যাত্রী ভিড় থেকে একটু তফাতে গিয়ে অভিযোগ করছিলেন,‘‘কোথায় সামাজিক দুরত্ব। গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে আসতে হল।” প্রৌঢ়ার কথা শুনে পাশ দিয়ে যেতে যেতে একজন বলেন,‘‘ আজ প্রথম দিন। কাল থেকে দেখবেন দাঁড়ানোর জায়গাও পাবেন না।” জানা গেল, তাঁর নাম প্রদীপ ঘোষ। জিরাট থেকে আসছেন। যাবেন শোভাবাজার। প্রদীপের কথায়, ‘‘এই ক’দিন যাতায়াতে সময় লাগছিল ৫ ঘণ্টা। আজ ট্রেনে ফের ১ ঘণ্টায় পৌঁছতে পারলাম।” ভিড় আর কোভিড বিধি নিয়ে প্রশ্ন করতেই তাঁর উত্তর,‘‘ রেল-সরকার যা করার যথেষ্ট করেছে। এ বার বাকিটা আমাদের উপর। আমরা সতর্ক হলেই বাঁচব।”

পর পর পৌঁছচ্ছে ব্যান্ডেল লোকাল, বর্ধমান লোকাল। অফিস টাইমের হাওড়া স্টেশন ফের স্বমহিমায়। সব এক। ফারাক শুধু একটাই। যাত্রীদের ফাঁক গলে যাতায়াত করছেন না সেফটিপিন থেকে শসার ফেরিওয়ালারা। অপেক্ষায় তাঁরা, কবে ফের পা রাখতে পারবেন নিজেদের খুব পরিচিত কামরায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

HOwrah Station Trains Passengers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE