Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

লাইনচ্যুত ধৌলি, বাঁচলেন যাত্রীরা

দুর্ঘটনার জেরে এদিন এই শাখায় বেশ কিছু এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।

চাকার ঘর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কংক্রিটের স্লিপার (চিহ্নিত)। ইনসেটে লাইন থেকে নেমে গিয়েছে চাকা। —নিজস্ব চিত্র।

চাকার ঘর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কংক্রিটের স্লিপার (চিহ্নিত)। ইনসেটে লাইন থেকে নেমে গিয়েছে চাকা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১১
Share: Save:

সোমবার সকাল ৭টা ১০ মিনিট। দক্ষিণ পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় মেন লাইন ধরে ছুটছিল হাওড়া-পুরী ধৌলি এক্সপ্রেস। নারায়ণ-পাকুড়িয়া-মুড়াইল স্টেশনের কাছে হঠাৎই লাইনচ্যুত হয় ট্রেনের একটি বগি। দুর্ঘটনায় ওই কামরায় যাত্রীরা অল্প-বিস্তর আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৪টি বগি। দুর্ঘটনার জেরে এ দিন এই শাখায় বেশ কিছু এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।

রেল ও প্ল্যাটফর্মে থাকা যাত্রী সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে নারায়ণ পাকুড়িয়া মুড়াইল স্টেশনে ঢোকার মুখেই বিকট শব্দের সঙ্গে চারিদিক ধুলোয় ঢেকে যায়। ট্রেন লাইন থেকে প্লাটফর্মের দিকে উড়ে আসতে থাকে পাথরের টুকরো। প্রাণ বাঁচাতে প্লাটফর্ম ছেড়ে পাশে মাঠের দিকে ছুটে পালাতে থাকেন প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীরা। ধুলোর আস্তরণ হাল্কা হলে দেখা যায় স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ট্রেনটি। ট্রেনের ডি-৩ বগির চাকাগুলি লাইনের বাইরে রয়েছে। ডি ৪, ডি ৫, ডি ৬ ও ডি ৭ কোচগুলি থেকে কিছু কিছু জায়গায় ঝুলে রয়েছে লোহার যন্ত্রাংশ ও কেটে পড়া বৈদ্যুতিক তার। ততক্ষণে আতঙ্কে ট্রেন থেকে নেমে পড়েছেন অনেক যাত্রী। খবর পেয়ে পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে ছুটে আসেন রেলের আধিকারিকরা। আসে উদ্ধারকারী দল।

প্রথমে ট্রেনটির ইঞ্জিন ও প্রথম ৫টি বগি আনা হয় পাঁশকুড়া স্টেশনে। তারপর ভুবনেশ্বরগামী ফলকনামা এক্সপ্রেসকে নারায়ণ পাকুড়িয়া মুড়াইল স্টেশনে দাঁড় করিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীদের ওই ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন রেল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও খড়্গপুরগামী সমস্ত ট্রেনকে নারায়ণ পাকুড়িয়া মুড়াইল স্টেশনে দাঁড় করিয়ে ধৌলি এক্সপ্রেসের যাত্রীদের খড়্গপুর পর্যন্ত যাওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়। সকাল ১০ টা নাগাদ অপর একটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি কামরা বাদ দিয়ে বাকি কামরাগুলিকে মেচেদা পর্যন্ত নিয়ে আসে। তারপর অন্য একটি ইঞ্জিন সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ ওই বগিগুলি নিয়ে পৌঁছয় পাঁশকুড়া স্টেশনে। দুপুর ১২ টা ৫ মিনিটে পাঁশকুড়া থেকে ফের পুরীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ধৌলি।

লাইনচ্যুত ডি-৩ কোচের যাত্রী রমেশ দাস বলেন, ‘‘হঠাৎ বিকট শব্দ করে ট্রেনটি ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। চারিদিকে দেখি শুধুই ধুলো। আতঙ্কে ট্রেন থেকে নেমে পড়ি। দেখি যে বগিতে ছিলাম সেটাই লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছে।’’ ডি-৫ বগির যাত্রী হাওড়ার বাসিন্দা প্রদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিকট শব্দ আর ধুলো দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি।’’

এ দিনের ঘটনার পর ফের ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। দেখা যায়, নারায়ণ পাকুড়িয়া মুড়াইল স্টেশন পেরিয়ে যেখানে ট্রেনটি থামে সেখান থেকে ভোগপুর স্টেশনের দিকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত মেন লাইনের প্রত্যেকটি কংক্রিটের স্লিপার ভেঙে গিয়েছে। অর্থাৎ ডি-৩ কোচের চাকার সেটগুলি স্টেশনে ঢোকার প্রায় ৩ কিলোমিটার আগে থেকেই লাইনচ্যুত হয়। ফলে চাকাগুলির সঙ্গে স্লিপারের ঘর্ষণে ওই অংশে সমস্ত স্লিপারই ভেঙে যায়। কিছু কিছু জায়গায় রেল লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গিয়েছে লাইনের ক্লিপও। যাত্রীদের অনেকেই জানিয়েছেন, ট্রেন থেমে যাওয়ার পর তাঁরা দেখেন ডি ৪, ডি ৫, ডি ৬ ও ডি ৭ কোচগুলি থেকে ঝুলে রয়েছে লোহার যন্ত্রাংশ। অনেক যন্ত্রাংশে মরচে ধরে গিয়েছে।

খড়্গপুরের ডিআরএম আর কে রেড্ডি বলেন, ‘‘ওই সময় ট্রেনটির গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি ছিল। তবে চালক ও গার্ডের তৎপরতায় বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। কী কারণে এমনটা হল তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।’’ রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইমার্জেন্সি ব্রেক কষলে এক কিলোমিটারের মধ্যে ট্রেন থেমে যাবে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় তিন কিলোমিটার আগে ট্রেন লাইনচ্যুত হলেও চালক বা গার্ড কী তা বুঝতে পারেননি। যদি বুঝতে পারেন তা হলে ইমার্জেন্সি ব্লেক কষলে তো ট্রেনটির আরও আগেই থেমে যাওয়ার কথা। তা হলে কী লাইনচ্যুত হওয়ার বিষয়টি গার্ড বা চালক দেরিতে বুঝতে পেরেছিলেন?

এ দিন দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপন ঘড়া। তিনি বলেন, ‘‘রেল যাত্রী নিরাপত্তার কথা না ভেবে পুরনো বগিগুলিকে চালানোর ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এর দায় রেলকেই নিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah-puri train Dauli express
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE