Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Human Trafficking

মালয়েশিয়ায় ক্যাসিনো খুলে এ রাজ্য থেকে মানুষ পাচারের ব্যবসা কবীরের!

বেশি টাকা রোজগারের আশায় মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন সঞ্জয়। সেখান থেকে বেশি টাকার বদলে ফিরলেন শিউরে ওঠা এক অভিজ্ঞতা নিয়ে।

ভারতীয় এজেন্ট কবীর হোসেন মণ্ডল (মাঝে)। —ফাইল চিত্র।

ভারতীয় এজেন্ট কবীর হোসেন মণ্ডল (মাঝে)। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ২০:২৫
Share: Save:

কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পরেও সোমবার সকালে দুঃস্বপ্নের রেশ যেন কাটছিল না হুগলির পাণ্ডুয়ার যুবক সঞ্জয় মল্লিকের। মালয়েশিয়ার কুচিং বিমানবন্দর থেকে বিমান ছাড়ার আগে পর্যন্ত প্রাণে বেঁচে ফিরবেন বলে ভরসা পাচ্ছিলেন না তিনি।

বেশি টাকা রোজগারের আশায় মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন সঞ্জয়। সেখান থেকে বেশি টাকার বদলে ফিরলেন শিউরে ওঠা এক অভিজ্ঞতা নিয়ে।

“ক্রীতদাসও এর থেকে ভাল ব্যবহার পায়,”—এ দিন দুপুরে নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বলেন সঞ্জয়। তাঁর কথায়, “৬০-৭০ কিলোর লোহার পাইপ নিয়ে দশ তলা বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় বয়ে নিয়ে যেতে হত। ১২ ঘণ্টা টানা কাজ! বিশ্রামের কোনও সুযোগ থাকত না। বসলে বা কাজে কোনও ভুল হলে লাঠি বা হেলমেট দিয়ে মারা হত।”এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ম্যানপাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থাকে প্রায় ৯০ হাজার টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশের কুচিংয়ে একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করতে যান তিনি। এ দিন তিনি বলেন, “বিমানবন্দরে নামার পরেই পাসপোর্ট হাতে ধরিয়ে আমাদের ছবি তোলা হয়। তারপর আমাদের সবার পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়।”

আরও পড়ুন: ইডি হেফাজতে সুদীপ্তর বয়ানে জড়াতে পারেন ইডির প্রাক্তন আধিকারিকও​

কাজ করতে গিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঞ্জয় বলেন, “কোনও চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। বাইরে ডাক্তার দেখানোর সাহস পেতাম না। একে তো ভাষা বুঝতে পারতাম না। তার পর আমাদের কাছে কোনও নথিপত্রও ছিল না। পুলিশ বিদেশি বলে ধরে নিয়ে যেতে পারে।” অন্য দিকে, অসুস্থ হয়ে কাজে যেতে না পারায় অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে। তখনই সঞ্জয় জানতে পারেন, তাঁকে এবং তাঁর বেশ কয়েকজন সঙ্গীকে একটি চিনা সংস্থার কাছে তিন বছরের জন্য লিজে‘বিক্রি’ করে দিয়েছে তাঁদের ভারতীয় এজেন্ট কবীর হোসেন মণ্ডল।

মালয়েশিয়া থেকে ফিরে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জিন্নার আলিকে শোনাচ্ছেন সঞ্জয় (বাঁ-দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।

অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরতে চান তিনি। কিন্তু, তাতেও ওই সংস্থা রাজি হয়নি বলে অভিযোগ। ওই চিনা সংস্থাকে বাড়ি ফেরার কথা বলতেতারা কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। সঞ্জয় বলেন,“কবীর বলে, আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। যাওয়ার সময় জমি বিক্রি করে টাকা জোগাড় করেছিলাম। এবারও বাড়ি থেকে গয়না বিক্রি করে সেই টাকা দেওয়া হয়। তারপরেও আমাকে ছাড়ছিল না।”

শুধু মারধরই নয়, চুক্তি মতোটাকার প্রায় অর্ধেক কেড়ে নিত কবীরের লোকজন। সঞ্জয়ের কথায়, “মালয়েশিয়ার মুদ্রায় প্রতিদিন ৯০ রিঙ্গিত দিত ওরা। ভারতীয় টাকায় প্রায় ১৬০০ টাকা। কিন্তু টাকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কবীরের লোকজন অর্ধেক টাকা কেড়ে নিত।’’

মালয়েশিয়াতে নিখোঁজ ক্যানিংয়ের তিন শ্রমিক, আবু সালাম মণ্ডল, আতিয়ার মণ্ডল সাইদ আখতার মণ্ডল।

আরও পড়ুন: সারদা-রোজভ্যালি তদন্তে গতি বাড়ছে নতুন করে, চাপে নজরে থাকা পুলিশকর্তারা​

সঞ্জয়ের পরিবারের লোকজন এর পর কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ন্যাশনাল অ্যান্টি ট্রাফিকিং কমিটি’র চেয়ারম্যান জিন্নার আলির সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বিষয়টি সিআইডিকে জানান। জিন্নার বলেন,“সিআইডি শুরুতে খুব আশার আলো দেখাতে পারেনি। তবে তাঁরা সহযোগিতা করেছেন।”

জিন্নার এবং আরও কয়েকটি সংস্থা মালয়েশীয় পুলিশ এবং ভারতীয় দূতাবাসকে সমস্ত ঘটনা জানান। সঞ্জয় বলেন, “রবিবার বিকেলে ওরা আমাকে শ্রমিকদের ব্যারাক থেকে টেনেহিঁচড়ে বার করে আনে। আমি প্রথমে যেতে চাইনি। কারণ আমাদের তিনটি ছেলে অক্টোবর মাস থেকে নিখোঁজ। আমাদের সন্দেহ, ওরা ওই তিনজনকে খুন করে দেহ গুম করে দিয়েছে।” তাঁর দাবি, পুলিশের ভয়ে ওরা তাঁকে বিমানবন্দরে ছেড়ে দিয়ে যায়। জিন্নার তাঁকে টিকিট পাঠালে সোমবার তিনি ফিরে আসেন। সঞ্জয়ের দাবি, এখনও অনেকে একই ভাবে আটকে।

তিনি এ দিন ভবানী ভবনে সিআইডি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর কাছ থেকে সূত্র পেয়ে বারাসতে এবং বিরাটির কয়েক জায়গায় হানা দেয় সিআইডি। তবে ওই পাচারকারীরা ফেরার। সঞ্জয়ের দাবি, কবীর হোসেন দুবাইতে পালিয়ে গিয়েছে। ওখানেই রয়েছে গোটা পাচার চক্রের মাথা। কবীরের এ রাজ্যে ব্যবসা সামলায় তাঁর শ্যালক। মালয়েশিয়াতেই তাঁর ক্যাসিনো ব্যবসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE