Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ফাঁকি দিলে দূরের কলেজে বদলি, হুমকি পার্থের

শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেন ঠিক সময়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হবেন না, এর আগেও সেই প্রশ্ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পার্থবাবু। পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ম মেনে ক্লাস করা উচিত বলে অজস্র বার মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৯
Share: Save:

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিয়ে বরাবরই কড়া বার্তা দিয়ে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ বার এক ধাপ এগিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, কাজে ফাঁকি দিলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা দূরের জেলায় বদলি-সহ যে-কোনও ধরনের শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। রবিবার বেহালা কলেজে অধ্যক্ষ পরিষদের বিজয়া সম্মিলনীতে সব কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের এ ভাবেই হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেন ঠিক সময়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হবেন না, এর আগেও সেই প্রশ্ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পার্থবাবু। পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ম মেনে ক্লাস করা উচিত বলে অজস্র বার মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সময়ে হাজিরা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করার পথেও এগিয়েছে সরকার। তবে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানিয়ে দেন, জোর করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করা হবে না। কিন্তু কাজে ফাঁকি দিলে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। এমনকী বদলিও করা হতে পারে।

আরও পড়ুন: মুকুলের ভূমিকা ‘বড়’ কিছু নয়, বোঝাচ্ছে বিজেপি

কলেজে গেলেও শিক্ষক বা শিক্ষিকা না-থাকায় অনেক সময়েই ক্লাস হয় না বলে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ। সেই জন্য মন্ত্রী এ দিন ফের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরামর্শ দেন, সময় মেনে কলেজে আসুন। ছাত্রছাত্রীদের ঠিক পথে পরিচালিত করতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

এ দিন শিক্ষকদের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি পড়ুয়া নিয়ে ফের বার্তা দেন পার্থবাবু। টাকার বিনিময়ে কলেজে ছাত্র ভর্তির অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক ছড়িয়েছিল। সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও তদন্ত করে দেখেছে, বেশ কয়েকটি কলেজে নির্ধারিত আসনের থেকে বেশি সংখ্যায় পড়ুয়া ভর্তি করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠান বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। বাড়তি পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বেশ কিছু কলেজে সব আসন ভর্তি হচ্ছে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আসন রয়েছে, অথচ পড়ুয়া ভর্তি হচ্ছে না মানে শূন্য আসনের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না।’’ সে-দিকেও লক্ষ রাখার নির্দেশ দেন তিনি। প্রেসিডেন্সির মতো প্রতিষ্ঠানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুই স্তরেই এ বার অনেক আসন খালি পড়ে থাকায় বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। রাজ্যের পড়ুয়াদের ধরে রাখতে পরপর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছে রাজ্য। তার পরেও আসন খালি থাকায় তিনি ক্ষুব্ধ।

রাজনৈতিক ছাত্র সংসদের বদলে এ দিন আবার অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গড়ার কথাও তোলেন পার্থবাবু। তিনি জানান, এর সঙ্গে হাজিরার বিষয়টিও জড়িত। যে-সব পড়ুয়ার ৬০ শতাংশ উপস্থিতি থাকবে, তাঁরাই ছাত্র কাউন্সিলের নির্বাচনে যোগ দিতে পারবেন। এ বিষয়ে অধ্যক্ষদের কড়া হতে বলা হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষা শিবিরের একাংশের বক্তব্য, পঠনপাঠনের উন্নতি করতে গেলে সময় মেনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত শিক্ষকেরও প্রয়োজন। কিন্তু এখন তো অনেক কলেজে অধ্যক্ষই নেই। কলেজ পরিচালনায় অসুবিধা হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘যে-সব কলেজে অধ্যক্ষ নেই, সেখানে অধ্যক্ষ না-হোক, আপাতত সহ-অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হবে।’’ এ ছাড়া সম্প্রতি উচ্চশিক্ষা দফতর যে-বদলি নীতি চালু করেছে, সেটাও কাজে লাগানো হবে বলে জানান পার্থবাবু। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা দরকার বলে মন্তব্য করে মন্ত্রী জানান, কলেজগুলি দ্রুত রং করতে হবে।

‘‘শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য পুরোপুরি সমর্থন করি। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়া উচিত বলেও মনে করি আমি,’’ বলেন চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE