নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। সঙ্গে সঙ্গে তদন্তভার হাতেও নিয়েছে সিআইডি। কিন্তু আইটিআই প্রবেশিকার প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্ত মঙ্গলবারেও শুরু করতে পারেনি তারা। কারণ, মমতার সরকারেরই কারিগরি শিক্ষা দফতর তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না।
বিষয়টির তদন্ত নিয়ে কারিগরি শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ উঠছে প্রথম থেকেই। প্রশ্ন ফাঁসের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে রবিবার। ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে রবিবার রাতেই সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এফআইআর করতেই কারিগরি শিক্ষা দফতর সোমবার মাঝরাত পার করে দেয়। সিআইডি অবশ্য বসে থাকেনি। এফআইআর করার আগেই তারা নিউ টাউনে কারিগরি ভবনে গিয়ে সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহের কাজ এগিয়ে রেখেছে। মঙ্গলবার তদন্তকারী দলও গড়ে ফেলেছে তারা। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি না-পাওয়ায় এ দিনও তদন্তের কাজ শুরু করতে পারেনি সিআইডি।
নথি মিলছে না কেন?
সিআইডি বলছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্ত করার জন্য কারিগরি শিক্ষা দফতরের সহযোগিতা প্রয়োজন। আর সহযোগিতার প্রথম ধাপই হল তথ্য সংবলিত নথি সরবরাহ করা। কিন্তু ওই দফতর থেকে তাদের বলা হয়, ৫ জুলাই নতুন করে ওই প্রবেশিকার আয়োজন করতে হচ্ছে। তাই তাদের পক্ষে এখন তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে অসুবিধে আছে। দফতরের সব কর্মী ওই প্রবেশিকা সুষ্ঠু ভাবে করতেই ব্যস্ত। এ ভাবে তথ্য আটকে দেওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে গোয়েন্দাদের তদন্ত।
তথ্য-নথি যে আপাতত দেওয়া হচ্ছে না, কারিগরি শিক্ষা দফতরের বক্তব্যে সেটা স্পষ্ট। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই সব তথ্য না-পেলে কোনও ভাবেই তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, কারিগরি শিক্ষা দফতরের কোন কোন কর্মী ওই প্রশ্ন সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত, তা জানা না-গেলে তদন্ত এগোবে না। আর দেরি করলে পাখি পালিয়ে যেতে পারে। এক সিআইডি-কর্তা বলেন, ‘‘কোন জেলা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, প্রথমে সেটাই খুঁজে বার করতে হবে আমাদের। তাই কোন কোন জেলায় কার কার দায়িত্বে প্রশ্নপত্র ছিল, তা জানা জরুরি। কারিগরি শিক্ষা দফতর থেকে অবিলম্বে সেই তথ্য পাওয়া দরকার।’’
তথ্য না-পাওয়ায় সিআইডি যে তদন্ত শুরু করতেই পারেনি, তা এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জানতেন না কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘আমি এ-সব ব্যাপারে কিছুই জানি না।’’ দফতরের সচিব হৃদেশ মোহন অবশ্য বলেন, ‘‘কে কী বলেছে, জানি না। আমরা সিআইডি-কে বুধবার দফতরে এসে সব কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলেছি। ওদের তদন্তে কোনও সমস্যা হবে না।’’ সেই অনুযায়ী সিআইডি আজ, বুধবারেই তথ্য সংগ্রহ শুরু করবে বলে ভবানী ভবনের খবর। সিআইডি যে তদন্ত শুরু করতে পারেনি, সে-খবর দুপুরেই নবান্নে পৌঁছে যায়। তার পরেই কারিগরি শিক্ষা দফতরকে সহযোগিতার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এক পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ডে কী ভাবে কুকুরের ছবি এল, তা নিয়ে তদন্ত অবশ্য অনেকটা এগিয়েছে বলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের দাবি। সৌম্যদীপ মাহাতো নামে ওই পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন কারিগরি শিক্ষা মন্ত্রী। কিন্তু ওই পরীক্ষার্থীকে সোমবার সারা দিন জেরা করার পরে রাত ১১টা নাগাদ থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জেলা পুলিশের বক্তব্য, সৌম্যদীপকে গ্রেফতার করার মতো কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি। যে-সাইবার ক্যাফে থেকে তিনি প্রবেশিকার ফর্ম পূরণ করেছিলেন, সেখানে গিয়েও কথা বলেন তদন্তকারীরা। ওই জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ছাত্রটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার দরকার ছিল। ওর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সব কিছুই জেনে নেওয়া হয়েছে।”
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই সৌম্যদীপের। এ দিন তিনি বলেন, “পুলিশকর্মীরা খুব ভাল ব্যবহার করেছেন। দুপুরে ভাত, বিকেলে টিফিন, রাতে ভাত খাইয়ে গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন।” গ্রেফতারের নির্দেশে কিছুটা বিভ্রান্ত ওই পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, “তদন্তের আগেই মন্ত্রী মশাই যে-ভাবে আমাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলেন, তাতে তো আমার সম্মানহানিও হল।” তবে রবিবার আইটিআই প্রবেশিকা পরীক্ষা তিনি দেবেন বলে জানান সৌম্যদীপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy