উদ্ধার: এমন সোনার বাটই মিলেছে একাধিকবার। নিজস্ব চিত্র
আন্তর্দেশীয় সোনা পাচার চক্রের জাল ক্রমশ ছড়াচ্ছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। অথচ তা রোখার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। তাই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক অফিসার একান্তে মানছেন, তাঁদের অবস্থা অনেকটা ঢাল-তরোয়াল বিহীন নিধিরাম সর্দারের মতো। তাই সীমিত সামর্থ্যে যতটা সম্ভব ততটা উদ্ধার হয়, বাকিটা পাচার হলেও তাঁদের কিছু করার থাকে না।
কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার বাহিনীগুলোর কর্তারাই জানাচ্ছেন, অফিসার নেই, নিচুতলার কর্মীর সংখ্যাও কম। পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দূরের কথা, ভাল রিভলভার অবধি অনেক অফিসারের নেই। এমনকি সোনা পাচারের গোপন খবর জানার জন্য সোর্সদের যে টাকা দিতে হয়, তার বরাদ্দও কম। কিন্তু যারা এমন খবর সরবরাহ করে, তারা কম টাকায় পুলিশকে তথ্য জানানোর ঝুঁকি নিতে চায় না।
সব থেকে বড় কথা, পুজোর মুখে মুখে এই সময় সোনা পাচারের প্রবণতা বাড়ে। তাতে ‘কমিশন’-ও বাড়ে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, মোটা টাকা কমিশনের লোভে পাচারের দলে নাম লেখানোর প্রবণতা বাড়ছে। সম্প্রতি শিলিগুড়িতে নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে পাস করে বিজনেস ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক যুবককেও সোনা পাচারকারী সন্দেহে বমাল ধরা হয়েছে। ১ কেজি সোনা শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় পৌঁছে দিতে পারলেই কমিশন বাবদ ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা মেলে বলে ধৃতদের জেরা করে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জেনেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, কয়েকজন ব্যবসায়ীও চটজলদি বিপুল অঙ্কের টাকা লাভ করতে চিন থেকে চোরাপথে সোনা আনছেন।
তাই কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের উত্তরবঙ্গের এক কর্তা জানান, তাঁরা সাকুল্যে জনা পঞ্চাশেক লোক মিলে বিপুল সংখ্যক ক্যারিয়রদের সকলকে ঠেকানোর কথা ভাবতেই পারেন না।
সেনা গোয়েন্দা, পুলিশের নাকা চেকিং, সিআইডি, রাজ্য গোয়েন্দারাও নানাবিধ মামলার তদন্তের ফাঁকে সোনা পাচার রোখার জন্য বেশি কর্মী ও সময় দিতে পারে না। হিসেব বলছে, সব নিরাপত্তা সংস্থা মিলে রোজ গড়ে ৪০০ জন নানা জায়গায় সোনা পাচার রোখার চেষ্টা করেন। অথচ, পাচারকারীদের সংখ্যা কম করেও দু’হাজার। তাই নজর এড়িয়ে সোনা পাচার হবেই।
যেমন, কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দাদের সন্দেহের তালিকায় শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, নকশালবাড়ি, কালিম্পং, সিকিম, জয়গাঁ সহ ১০টি এলাকার অন্তত ২০ জন কারবারি রয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, এক একজন কারবারির অধীনে গড়ে ১০ জন পাচারকারী (ক্যারিয়র) কাজ করে। সেই হিসেবে শুধু উত্তরবঙ্গেই ২০০ জন ‘ক্যারিয়র’ রয়েছে। নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, কলকাতার অবৈধ সোনার কারবারিদের হয়ে আরও অন্তত ১৫০০ জনের উত্তরবঙ্গে নিয়মিত আনাগোনা রয়েছে।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy