বিদেশ মন্ত্রকের আতস কাচের তলায় বেআইনি পাসপোর্ট! কারও বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়ার অভিযোগ উঠলে তা বাতিল করছে বিদেশ মন্ত্রক। কলকাতায় প্রতি দিন গড়ে এমন চার-পাঁচটি পাসপোর্ট বাতিল করা হচ্ছে। অভিযোগ, প্রধানত বাংলাদেশিরাই এ দেশের এক শ্রেণির দালালকে ধরে এ ধরনের ‘বেআইনি’ পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন।
আগে ভারতীয় কোনও নাগরিকের পাসপোর্টের উপরে বাংলাদেশি ব্যক্তির ছবি সাঁটিয়ে, নাম ভাঁড়িয়ে পাসপোর্ট জাল করা হতো। কিন্তু, তা আটকাতে বিদেশ মন্ত্রক এখন পাসপোর্টে ‘ভূত-ছবি’ ব্যবহার করছে। এই পদ্ধতিতে আবেদনকারীর একটি ছবি তো পাসপোর্টে থাকেই। তার পাশে পাতার মধ্যে লুকিয়ে থাকছে এই ‘ভূত-ছবি’। যা খালি চোখে ধরা পড়ছে না। এক ধরনের বিশেষ আলোর তলায় ধরলে তা ধরা পড়ছে। এখন তাই আগের মতো অন্যের পাসপোর্টে ছবি পাল্টিয়ে আর জাল করা যাচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে জাল পাসপোর্টের পন্থা বদলেছে। অভিযোগ, ভারতে ঢুকে এক শ্রেণির দালালদের সহযোগিতায় এখন এ দেশের আধার, ভোটার, প্যান কার্ড-সহ প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে নিচ্ছেন এক শ্রেণির বাংলাদেশি। সেই সব পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে তৈরি করে নিচ্ছেন ভারতীয় পাসপোর্ট। অভিযোগ, তাঁদের অনেকেই সীমান্ত টপকে বেআইনি ভাবে ঢুকছেন এ দেশে। অনেকে আবার নিজেদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে আইনি পথেই ভারতে ঢুকছেন। এরপর ভারতীয় পাসপোর্ট বানাচ্ছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত এই বাংলাদেশিদের জেরা করে জানা গিয়েছে, ইউরোপ, আমেরিকা-সহ বহু জায়গায় বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ব্যক্তির ঢোকার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গিয়ে সে সব দেশে অনেকেই পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করে দেওয়ায় বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের সন্দেহের তালিকায় রাখা হচ্ছে। অভিযোগ, সহজে যাতে সেই সব দেশে ঢোকা যায়, তাই এখানে এসে ভারতীয় পাসপোর্ট জোগাড় করছেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে বিমানবন্দরে। বিদেশ যাওয়ার পথে তাঁদের ভাষা, উচ্চারণ শুনে সন্দেহ হচ্ছে অভিবাসন অফিসারদের। চেপে ধরতে বেরিয়ে পড়ছে আসল তথ্য। অনেকে অবশ্য নিজেকে বাংলাদেশি বলে স্বীকারও করছেন না। কিন্তু, সন্দেহ হলেই সেই মামলাগুলি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে।
তবে কারও পাসপোর্ট সরাসরি বাতিল করার আগে তা সাময়িক ভাবে অকেজো করছে বিদেশ মন্ত্রক। পুলিশকে দিয়ে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে নতুন করে সবিস্তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এমনকি, জেরা করার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডেকেও পাঠাচ্ছেন পাসপোর্ট দফতরের অফিসারেরা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, যতগুলি এই ধরনের অভিযোগ আসছে, তার ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্তকে ডেকে পাঠালে তিনি আসছেন না। পুলিশও তাঁদের সম্পর্কে ‘বিরুদ্ধ’ রিপোর্ট পাঠাচ্ছে।
পূর্ব ভারতের রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার (আরপিও) বিভূতি ভূষণ কুমারের কথায়, ‘‘যদি কোনও ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে ভুল করে এই অভিযোগ আসে এবং তার ভিত্তিতে তাঁর পাসপোর্ট সাময়িক ভাবে অকেজো করা হয়, তা হলে পরে সেই ব্যক্তি নতুন করে আবেদন করে পাসপোর্ট পেতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy