বারবার মিছিল ও সভা করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সাড়া মেলেনি। রাজ্যের নতুন স্বাস্থ্য বিল বা প্রস্তাবিত ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টের ‘বিতর্কিত’ অংশের সংশোধন চেয়ে তাই এ বার আদালতের শরণাপন্ন হতে চলেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ। কী ভাবে আদালতে যাওয়া যায়, তার জন্য রাজ্য শাখাকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি।
শনি-রবিবার আইএমএ-র কেন্দ্রীয় কমিটির দু’দিনের বৈঠক বসেছিল কলকাতায়। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ওই চিকিৎসক সংগঠন সূত্রের খবর। আইএমএ-র রাজ্য শাখা অবশ্য কেন্দ্রীয় কমিটির সুরে সুর মেলায়নি। আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই বিলের বিরোধিতা তারা তো করেইনি। বরং বিলের কিছু অংশের সংশোধন চেয়ে কলকাতায় চিকিৎসকদের যে-সব মিছিল বেরিয়েছে, তা বর্জন করে চলেছেন আইএমএ-র রাজ্য নেতারা।
আইএমএ সূত্রে বলা হয়, বিধানসভায় পাশ হওয়া স্বাস্থ্য বিল অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। নবান্ন থেকে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা চিকিৎসকদের বারবার আশ্বাস দিয়েছেন, এই বিল মোটেই চিকিৎসক-স্বার্থের বিরোধী নয়। এটা আসলে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের পরিকাঠামোর উপরে নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা। তাতে অবশ্য চিকিৎসকদের সকলেই আশ্বস্ত হতে পারেননি। আইএমএ-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বিষয়ে আলোচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময় চেয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাওয়ার দাবি উঠছিল চিকিৎসকদের মধ্য থেকেই।
আরও পড়ুন:বঙ্গ জয়ে পঞ্চায়েতই নিশানা বিজেপির
আইএমএ-র কেন্দ্রীয় কমিটির শনি ও রবিবারের বৈঠকে অধিকাংশ চিকিৎসক স্বাস্থ্য বিলের বিরোধিতা করেছেন বলে সংগঠন সূত্রের খবর। তাঁদের বক্তব্য, ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টের অধিকাংশ ধারা চিকিৎসকদের স্বার্থবিরোধী। এই বিল মুখ বুজে মেনে নিলে সেটা পেশার অপমান হবে এবং ভবিষ্যতে কাজ করাই মুশকিল হয়ে যাবে। এই বিলের অনেক অংশে চিকিৎসকদের ‘অপরাধী’ প্রতিপন্ন করার সংস্থান রাখা হচ্ছে। বৈঠকের শেষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্য শাখাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ, প্রথমে হাইকোর্টে মামলা করা হবে। পরে প্রয়োজন হলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে আইএমএ। প্রস্তুতি চালাতে হবে সে-ভাবেই।
ওই চিকিৎসক সংগঠনের কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি কে কে অগ্রবাল বলেন, ‘‘রাজ্যের স্বাস্থ্য বিলের প্রতিবাদে ২৭ এপ্রিল ‘জাতীয় প্রতিবাদ দিবস’ পালন করা হবে। ‘কালা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে ওই দিনটিকে। চিকিৎসকদের স্বার্থবিরোধী ওই বিলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাবে সংগঠন।’’
আইএমএ-র রাজ্য শাখার সম্পাদক চিকিৎসক শান্তনু সেন নিজে অবশ্য স্বাস্থ্য বিলের সমর্থক। তিনি রাজ্যের শাসক দলের নেতা এবং কাউন্সিলরও। তাঁর কাছ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি কোনও সহযোগিতা পাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অগ্রবাল বলেন, ‘‘কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কোনও দলের প্রতি অনুগত থাকতেই পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক আনুগত্য যাতে চিকিৎসকদের স্বার্থবিরোধী না-হয়, সেই বিষয়ে রাজ্য শাখাকে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক কাজে যাতে দলীয় রাজনীতির ছাপ না-পড়ে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কড়া নজরদারি থাকবে সে-দিকেও। এই বিষয়ে শান্তনুবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দেন। তার পরে আর ফোন ধরেননি। এসএমএস করা সত্ত্বেও তার জবাব দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy