Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাংলায় সোমেনের হাতে কংগ্রেস দিলেন রাহুল

এ বার আবার নতুন সভাপতির নেতৃত্বে লোকসভা ভোটে যাবে বাংলার কংগ্রেস। নতুন দায়িত্ব পেয়েই সোমেনবাবু বলেছেন, তৃণমূলের ‘আগ্রাসন’ থেকে দলকে বাঁচিয়ে সংগঠন চাঙ্গা করাই হবে তাঁর প্রথম কাজ।

সোমেন মিত্র। প্রদেশ কংগ্রেসের দফতরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

সোমেন মিত্র। প্রদেশ কংগ্রেসের দফতরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

হঠাৎ ঘোষণায় অধীর চৌধুরীকে সরিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা হল সোমেন মিত্রকে। গত লোকসভা ভোটের আগে দায়িত্ব পেয়ে অধীরবাবু সভাপতি ছিলেন প্রায় সাড়ে চার বছর। এ বার আবার নতুন সভাপতির নেতৃত্বে লোকসভা ভোটে যাবে বাংলার কংগ্রেস। নতুন দায়িত্ব পেয়েই সোমেনবাবু বলেছেন, তৃণমূলের ‘আগ্রাসন’ থেকে দলকে বাঁচিয়ে সংগঠন চাঙ্গা করাই হবে তাঁর প্রথম কাজ।

দু’দশক পরে সোমেনবাবুকে সভাপতি পদে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশিই তাৎপর্যপূর্ণ হল প্রদেশ কংগ্রেস পরিচালনার জন্য রাহুল গাঁধীর গড়ে দেওয়া কমিটি। সেই কমিটিতে প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির অনুগামীদের গুরুত্বপূর্ণ জায়য়া দেওয়া হয়েছে। আবার সোমেন শিবিরের সঙ্গেও ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে।

নতুন নির্দেশে বিদায়ী প্রদেশ সভাপতি অধীরবাবুকে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। যে কমিটির হাতে প্রার্থী বাছাইয়ের এক্তিয়ারও নেই। তারা শুধুই প্রচারের সমন্বয়ের দায়িত্বে। আরও উল্লেখযোগ্য তথ্য, প্রার্থী বাছাই কমিটির দায়িত্ব না দিয়ে শুধু প্রচার কমিটির ভার দেওয়ার পরেই সোমেনবাবুদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়! বেরিয়ে গিয়ে গড়েছিলেন নতুন দল। অধীরবাবু কী করবেন, তা নিয়েও জল্পনা আছে। আপাতত তিনি ঠিক করেছেন, এই কমিটির কী কাজ, তা নিয়ে এআইসিসি-র সঙ্গে কথা বলবেন।

প্রদেশ সভাপতি হিসাবে অধীরবাবুর স্পষ্ট অবস্থান ছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে এবং বামেদের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, আগামী লোকসভা ভোটের আগে সব রকম রাজনৈতিক সমীকরণের রাস্তা খোলা রাখতেই কি সভাপতি পদে বদল করা হল? নতুন দায়িত্ব নিয়ে স্বয়ং সোমেনবাবু অবশ্য সেই জল্পনা খারিজ করে কথা বলেছেন বিদায়ী সভাপতির সুরেই। তাঁর বক্তব্য, জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডই। তবে তাঁর মতে, ‘‘অতীতে দেখা গিয়েছে, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেসের সাময়িক লাভ হয়েছে। কিন্তু তার পরে আমাদেরই ঘর ভেঙেছে! এখনও জনাপনেরো কংগ্রেস বিধায়ককে তৃণমূল ভাঙিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তাঁদের পদত্যাগ করতে বলার নৈতিকতা তারা দেখায়নি।’’ প্রদেশ সভাপতি হিসেবে তিনি কি বামেদের সঙ্গে সমঝোতার কথাই বলবেন? সোমেনবাবুর জবাব, ‘‘যখন এআইসিসি জানতে চাইবে, তখন বলব। কিন্তু নিজের পায়ে আগে কংগ্রেসকে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের জোর না থাকলে কার সঙ্গে যেতে চাই, এ সব বললে সেটা প্রহসন হয়ে যাবে!’’

সোমেনবাবুর সঙ্গে কাজ করার জন্য চার চার জন কার্যনির্বাহী সভাপতি ঠিক করে দিয়েছে দিল্লি। তাঁদের মধ্যে আছেন দুই বিধায়ক শঙ্কর মালাকার ও নেপাল মাহাতো। আর আছেন সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী ও প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রিয়-জায়া দীপা দাশমুন্সি। রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান বরাবরই মমতা-বিরোধী। এমনকি, খোদ মমতার বিরুদ্ধে তিনি গত বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন। সভাপতি হয়ে সোমেনবাবু যখন তৃণমূলের আগ্রাসন থেকে সংগঠন বাঁচানোর কথা বলছেন, তখন আর এক কার্যনির্বাহী সভাপতি ডালুবাবুর বক্তব্য, ‘‘আগামী লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে আমরা তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পক্ষে। রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে আমি, মৌসম ও অভিজিৎ সে কথা বলেছিলাম।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সাংসদ মৌসম বেনজির নূর কিন্তু নতুন কমিটিতে জায়গা পাননি। রাজনৈতিক শিবিরে গুঞ্জন, মৌসমের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ বাড়ছে। মালদহে পঞ্চায়েত বোর্ড গড়তে তৃণমূলকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনিই জল্পনা বাড়িয়েছেন। যদিও তাঁর মামা ডালুবাবু বলেছেন, ‘‘ও তো জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী আছেই।’’ মৌসম নিজেও বলেন, ‘‘জল্পনার কোনও কারণ নেই। নতুন কমিটির নেতৃত্বেই কাজ করব।’’

আবার প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে রাজ্য রাজনীতিতে খুব সক্রিয় ভূমিকায় দেখা না গেলেও তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেসের ইস্তাহার কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। যে কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক। প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে করা হয়েছে সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান, কমিটির আহ্বায়ক শুভঙ্কর সরকার। প্রাক্তন যুব সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তীকে দেওয়া হয়েছে নতুন ‘আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন’ কমিটির দায়িত্ব। অমিতাভবাবু বলেছেন, ‘‘প্রিয়দা’র কথা আজ খুব মনে পড়ছে।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘এখন আর একক ভাবে প্রদেশ সভাপতির উপরে যাবতীয় দায়িত্ব থাকবে না। অন্তত লোকসভা ভোট পর্যন্ত মিলেমিশেই চলতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Somen Mitra PCC Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE