Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উৎসাহ ভাতা বন্ধ, সঙ্কটে ক্ষুদ্র শিল্প

আর্থিক বছর শেষ হতে আর মাত্র চার মাস বাকি। অথচ রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলিকে এখনও এক টাকাও উৎসাহ ভাতা (ইনসেনটিভ) দেয়নি সংশ্লিষ্ট দফতর! ফলে, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কিংবা সম্পত্তি বন্ধক রেখে যাঁরা ব্যবসা শুরু করেছেন, তাঁদের অনেকেরই কার্যত রাতের ঘুম উধাও।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৬
Share: Save:

আর্থিক বছর শেষ হতে আর মাত্র চার মাস বাকি। অথচ রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলিকে এখনও এক টাকাও উৎসাহ ভাতা (ইনসেনটিভ) দেয়নি সংশ্লিষ্ট দফতর! ফলে, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কিংবা সম্পত্তি বন্ধক রেখে যাঁরা ব্যবসা শুরু করেছেন, তাঁদের অনেকেরই কার্যত রাতের ঘুম উধাও। প্রায় প্রতিদিনই জেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ধর্না দিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে আবেদনকারীদের।

নবান্ন সূত্রের খবর, ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে উৎসাহ ভাতা বাবদ ৯০ কোটি টাকা দিয়েছিল সরকার। পরের বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬১ কোটি। তা হলে এ বছর এখনও ভাতা দেওয়া হলো না কেন? অর্থ দফতরের একটি সূত্রের বক্তব্য, দফতরের কর্তাদের কারও কারও মনে হয়েছে যে, গোটা প্রক্রিয়াটার মধ্যে স্বচ্ছতা নেই। ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে আসলে স্বজনপোষণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি নিজেই খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁর নির্দেশে উৎসাহ ভাতা সংক্রান্ত তাড়া তাড়া ফাইল যাচ্ছে নবান্নে।

যদিও এ ব্যাপারে অমিতবাবুর মতামত জানা যায়নি। তাঁকে ফোন করা হলে সাড়া মেলেনি। এসএমএস-এরও জবাব দেননি তিনি।

জেলায় জেলায় ছোট শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দিতেই লগ্নিকারীদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার উপরে ভিত্তি করে এক এক জেলায় এক এক রকম ভাতা দেওয়া হয়। যেমন যন্ত্রপাতি কেনার জন্য মালদহ, জলপাইগুড়ি ও মুর্শিদাবাদে শিল্প করলে এককালীন যে পরিমাণ উৎসাহ ভাতা মিলবে, কোচবিহার, বীরভূম, পুরুলিয়া বা বাঁকুড়ায় মিলবে তার চেয়ে অনেক বেশি। ইনসেনটিভ হিসেবে জমির স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন, বিদ্যুৎ, ব্যাঙ্কের ঋণ ও ভ্যাটের উপরেও ছাড় দেয় সরকার।

নবান্নের খবর, ২০১৩-এর আগে উৎসাহ ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলাস্তরে একটি কমিটি ছিল। কিন্তু কমিটির সবাইকে এক টেবিলে এনে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে মাসের পর মাস ঘুরে যেত। এই অবস্থায় সরকার ওই কমিটি খারিজ করে জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজারের হাতেই সব দায়িত্ব সঁপে দেয়। তাঁদের সুপারিশ যায় ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্প ডিরেক্টরেটে। পরের ধাপে ডিরেক্টরেটের সুপারিশ পৌঁছয় দফতরে। দফতরই চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। কিন্তু এখন প্রাথমিক স্তরেই দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের একাংশ।

জেলা শিল্পকেন্দ্রের অধিকাংশ জেনারেল ম্যানেজারই অবশ্য পছন্দের লোককে ভাতা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, শিল্প গড়ার আবেদন থেকে ছাড়পত্র পাওয়া, মায় উৎসাহ ভাতা— এখন সবই মেলে অনলাইনে।

মূলত উৎপাদনকারী সংস্থাকেই উৎসাহ ভাতা দেওয়া হয় এবং তা পাওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে, আবেদন করার আগে উৎপাদন চালু করতে হবে। শুধু তাই নয়, আবেদনপত্রে যে সমস্ত তথ্য জানানো আবশ্যিক তার একটিও বাদ দিয়ে কোনও সংস্থার নাম অনলাইনে নথিভুক্তই করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন জেলার শিল্পকর্তাদের একাংশের কথায়, ‘‘উৎসাহ ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপোষণের অভিযোগ এড়াতে গোড়াতেই বেড়াল মেরে রেখেছে ক্ষুদ্র শিল্প দফতর।’’ তাঁদের দাবি, আবেদনকারী যে সব নথি জমা দেন তা সরেজমিন খতিয়ে দেখা হয়। ন্যূনতম অসঙ্গতি থাকলেই তা বাতিল করা হয়। স্বজনপোষণের কোনও প্রশ্নই নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE