Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Ashoknagar

ফুঁসছে অশোকনগর, স্ত্রী বললেন, এটা এমন কোনও অন্যায় নয়!

মানিকলালের বাড়ির উল্টো দিকেই একটা কাঠগোলা রয়েছে। সেখানে রোজ সকালে খবরের কাগজ পড়তে যান মানিকবাবু।

মারের এই দৃশ্যই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

মারের এই দৃশ্যই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:১৩
Share: Save:

এক দিন নয়, প্রায় প্রতি দিনই বাবাকে মারধর করতেন প্রদীপ বিশ্বাস। পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি অশোকনগরের ওই যুবকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন প্রতিবেশীদের একটা বড় অংশ।

বৃহস্পতিবার ধৃত প্রদীপ বিশ্বাসকে বারাসত জেলা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে অশোকনগর থানার পুলিশ।

অশোকনগরের বিল্ডিং মোড়ের বাসিন্দা মানিকলাল বিশ্বাস পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ছেলে তাঁকে দীর্ঘ দিন ধরেই শারীরিক নির্যাতন করেন। তাঁকে যাতে আর নির্যাতিত না হতে হয়, সে ব্যাপারে পুলিশের হস্তক্ষেপ দাবি করে তিনি চিঠিও দিয়েছিলেন। তার আগেই যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় ৯৪ বছরের বৃদ্ধ মানিকলালকে মারধরের ভিডিয়ো। এ পর পুলিশ প্রদীপকে গ্রেফতার করে।

পুলিশি হস্তক্ষেপ চেয়ে এই চিঠি লেখা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: মাকে সন্দেশ খাওয়ানোয় বাবাকে পেটাল ছেলে!​

মানিকলালের বাড়ির উল্টো দিকেই একটা কাঠগোলা রয়েছে। সেখানে রোজ সকালে খবরের কাগজ পড়তে যান মানিকবাবু। ওই কাঠগোলার পাশেই দিলীপ চট্টোপাধ্যায়ের দোকান। মাঝে মাঝেই বৃদ্ধের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘মাস তিনেক আগে এক দিন দেখি জেঠুর ডান চোখের নীচটা ফুলে লাল হয়ে রয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে? কিছুই বলতে চাইছিলেন না। প্রথমে বলছিলেন, পড়ে গিয়ে চোট লেগেছে। কিন্তু, একটু চাপাচাপি করতেই বলে ফেলেন, ছেলে মেরেছে। মাঝে মাঝেই মারা হয় ওঁকে।’’ বৃদ্ধ বাবাকে এ ভাবে মারধর করায় প্রদীপের উপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ দিলীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওই ছেলের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।’’

একই অভিযোগ করেন প্রদীপের মেজ দিদি গৌরী সরকার। তিনি বাপেরবাড়ি এলাকাতেই থাকেন। বললেন, ‘‘বাবাকে ভাই মেরেছে খবর পেয়ে দৌড়ে আসি। ভাইয়ের ধারণা হয়েছিল, বাবাকে মারধরের খবর আমি সবাইকে জানিয়েছি। বাড়িতে ঢুকতেই ও আমাকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। আমি যতই বলি, কাউকে কিছু বলিনি, ও কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না। আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করে।’’ পরে যদিও জানা যায়, প্রতিবেশীদের কেউ ওই ভিডিয়ো চুলেছিলেন লুকিয়ে। যা পরে ভাইরাল হয়ে যায়। গৌরী দেবীর দাবি, তাঁর ভাই প্রদীপ বৃদ্ধ বাবাকে মাঝে মাঝেই মারধর করতেন।

হাতুড়ে চিকিৎসক হিসেবে এলাকায় যথেষ্ট সুনাম রয়েছে মানিকলালবাবুর। একটা সময়ে তাঁর প্রচুর রোগী ছিল এলাকায়। সেই সুবাদে অনেকে চেনেন তাঁকে। ছেলে তাঁকে মারধর করতেন এ কথা প্রকাশ্যে এসে পড়ায় সকলে ক্ষিপ্ত প্রদীপের উপর। প্রতিবেশীরাও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুকে প্রায়ই মারধর করত তাঁর ছেলে। আমরা সকলে শুনেছিলাম। কিন্তু, ভিডিয়োটি দেখে আর ঠিক থাকতে পারিনি। ওঁকে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম সকলে।’’

আরও পড়ুন: আয় নেই, তাই বেহাল সাঁতরাগাছি​

যদিও এর ভিতর অন্যায়ের কিছু দেখছেন না প্রদীপের স্ত্রী বন্দনা বিশ্বাস। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘মাকে প্রচণ্ড ভালবাসেন আমার স্বামী। ডায়াবিটিসে মায়ের শরীর খারাপ নিয়ে উনি সারা ক্ষণ উদ্বেগে থাকতেন। সে কারণেই বাবা লুকিয়ে মিষ্টি খাওয়ানোয় উনি রেগে গিয়ে নিজেকে সামনাতে পারেননি। দু’একটা চড়-থাপ্পড় মেরে ফেলেছিলেন। তেমন লাগেওনি। বাবাকে আমার স্বামী খুবই ভালবাসেন।’’

গত ২০ অক্টোবর এক প্রতিবেশী মোবাইলে ভিডিয়ো রেকর্ডিং করেন। সেখানে দেখা যায়, শীর্ণ চেহারার পাঞ্জাবি পরা বৃদ্ধের গলা ধরে গালে একটার পর একটা চড় মারছে ছেলে। বলছে, ‘‘কেন মাকে সন্দেশ খেতে দিয়েছো? জানো না, মায়ের মিষ্টি খাওয়া নিষেধ। আমাকে জিজ্ঞেস করোনি কেন?’’ মারের চোটে চশমা খুলে পড়ার জোগাড় বৃদ্ধের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE