Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নোটবন্দির জন্যই কারাবাস, বলছেন খোরপোশ মেটাতে না পারা বৃদ্ধ

আগের দিন, ৮ নভেম্বর রাতে পুরনো ৫০০ এবং এক হাজার টাকার নোট বাতিল করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাতিল হওয়া নোটের বিনিময়ে রাতারাতি ওই পরিমাণ নতুন নোট জোগাড় করতে পারেননি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৭
Share: Save:

‘অচ্ছে দিন!’ শুনেই প্রবল হাসি বৃদ্ধের। মিনিট খানেক পরে হাসি থামিয়ে বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী নোট বাতিল করলেন আর আমায় জেলে যেতে হল! নোট বাতিল আমার কাছে অচ্ছে দিন নয়, শুধুই লজ্জার দিন।’’

২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর। দিনটা ভুলতে পারেন না কলেজ স্ট্রিটের রাধানাথ মল্লিক লেনের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব বিজয় শীল। নগর দায়রা আদলতের নির্দেশে ওই দিন স্ত্রীর খোরপোশের ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা মেটানোর কথা ছিল তাঁর। টাকার ব্যবস্থা করেও ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু আগের দিন, ৮ নভেম্বর রাতে পুরনো ৫০০ এবং এক হাজার টাকার নোট বাতিল করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাতিল হওয়া নোটের বিনিময়ে রাতারাতি ওই পরিমাণ নতুন নোট জোগাড় করতে পারেননি।

এ দিকে টাকাটা নির্দিষ্ট দিনে না দিয়ে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে বলে বিজয়বাবুকে জেলে পাঠান বিচারক। টানা ১৭ দিন জেলে থেকে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান বিজয়বাবু। পরে বহু কষ্টে পরিবারের সকলের সাহায্যে নতুন নোটে স্ত্রীর খোরপোশের টাকা মেটান তিনি।

আরও পড়ুন: নবান্নের কাছে আরও আইপিএস চেয়েছিলেন বর্মা

সে‌ই হেনস্থার দু’বছরের মাথায় বুধবার বাড়িতে বসে বৃদ্ধ বললেন, ‘‘সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে কার ভাল হয়েছে জানি না। আমার হয়নি। জেল খাটার পরে সামাজিক সম্মান কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটা বোঝেন আশা করি!’’ জামিন পাওয়ার পরে এখনও বিবাহবিচ্ছেদের মামলা লড়ে চলেছেন বিজয়বাবু। বললেন, ‘‘আমি নিজেই আদালতে সওয়াল করি। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম। উত্তরও এসেছিল। জেলে যাওয়ার মতো দোষ আমি করিনি। টাকা যে রাতারাতি বাতিল হয়ে যাবে, তা কি জানতাম?’’

বিজয়বাবুর হয়ে আগে মামলা লড়তেন আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে। তিনি বললেন, ‘‘বৃহস্পতিবারই তো নোটবন্দির দু’বছর হচ্ছে। নোট বাতিলের জেরে কে কোন জায়গায় উপকার পেয়েছেন বলতে পারব না। তবে বিজয়বাবুর কোনও ক্ষতিপূরণ হয়নি।’’ আইনজীবীদের একটা অংশ বলছেন, বৃদ্ধকে নগদে টাকা দেওয়ার জন্য কিছুটা বাড়তি সময় মঞ্জুর করতেও পারত আদালত। কারণ, নগদ টাকার অভাবে বিচারপ্রার্থীরা যে অসুবিধায় পড়ছেন, তা আদালত নিজেই বলেছিল। বিজয়বাবুর স্ত্রীকেও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা যেতে পারত। নগদে টাকা দিতে গিয়েই ফাঁপরে পড়়েন বিজয়বাবু। তবে হুট করে নোট বাতিল করে দেওয়ায় এমন কত অসুবিধার মধ্যে মানুষকে পড়তে হয়েছে, বিজয়বাবুর ঘটনা তারই উদাহরণ বলে মানছেন আইনজীবীরা।

১৯৭৮-এ বিজয়বাবুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুমিত্রা দেবীর। বিজয়বাবু একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। কিছু দিন ধরে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। প্রতি মাসে সুমিত্রাকে পাঁচ হাজার টাকা করে খোরপোশ দিতে হয় বিজয়বাবুর। ওই টাকাই বকেয়া পড়ায় ২০১৬-র নভেম্বরে আদালতে গিয়েছিলেন সুমিত্রা। তিনি আদালতে দাবি করেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলে সুমিত্রাদেবী বলেন, ‘‘কিছু বলার নেই। আদালতের সিদ্ধান্ত ছিল বিষয়টা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Economy Medical Human Demonitization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE