Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ইরান থেকে ফেরানো হবে ওঁদের

তাঁরা এতটাই ভীত যে ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ির বাইরে বেরোননি। মইনুদ্দিন হোয়াটসঅ্যাপ কলে বলেন, ‘‘গত ক’দিন ধরে আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে মালিকপক্ষ তাতে আমরা আর ওদের বিশ্বাস করতে পারছি না। আমাদের কাছে কোনও পাসপোর্ট বা বৈধ কাগজপত্র নেই। ফলে ভয় পাচ্ছি পুলিশ ডেকে তাদের হাতে তুলে না দেয়!’’

ইরানে আটকে পড়া শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র।

ইরানে আটকে পড়া শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৩৮
Share: Save:

ইরানের চাবাহারে সোনার কাজ করতে গিয়ে আটকে থাকা ১২ জন বাঙালিকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে ইরানের জাহদানে‌ থাকা ভারতীয় কনস্যুলেট। মঙ্গলবার দুপুরে চাবাহারে আটকে থাকা এ রাজ্যের পান্ডুয়ার যুবক শেখ মইনুদ্দিন আরও একটি ভিডিয়ো পাঠিয়ে এ কথা জানিয়েছেন।

পরে তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ কল করলে মইনুদ্দিন জানান, এ দিন ইরানীয় সময় সকাল ৯টায় জাহদানের ভারতীয় দূতাবাস থেকে এ কে সিংহ তাঁকে ফোন করে জানান, আজ কিংবা কালকের মধ্যেই তাঁদের চাবাহার থেকে বের করে আনা হবে। তাঁদের কাছে পৌঁছতে একটু সময় লাগবে। তবে চিন্তার কোনও কারণ নেই। তাঁদের নিরাপদে দেশে ফেরত পাঠানোর সব রকম ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কনস্যুলেট থেকে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। পাঠানো হয়েছে কিছু টাকাও। দু’জনের মোবাইলে রিচার্জও করে দেওয়া হয়েছে যাতে যোগাযোগ করতে কোনও অসুবিধা না হয়।

এরই মধ্যে এ দিন সকালে যে সংস্থায় ওই ১২ জন যুবক সোনার কারিগর হিসাবে কাজ করছিলেন, সেই সংস্থার ম্যানেজার তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন মইনুদ্দিন। কিন্তু তাঁরা এতটাই ভীত যে ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ির বাইরে বেরোননি। মইনুদ্দিন হোয়াটসঅ্যাপ কলে বলেন, ‘‘গত ক’দিন ধরে আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে মালিকপক্ষ তাতে আমরা আর ওদের বিশ্বাস করতে পারছি না। আমাদের কাছে কোনও পাসপোর্ট বা বৈধ কাগজপত্র নেই। ফলে ভয় পাচ্ছি পুলিশ ডেকে তাদের হাতে তুলে না দেয়!’’

সাত-আট মাস আগে এ রাজ্যের ২৪ জন এবং মহারাষ্ট্রের এক জন পাড়ি দিয়েছিলেন ইরানের চাবাহারে। সেখানে আজাদ অম্বরে ‘লিপারটালা’ নামে এক সোনার কারখানায় কারিগর হিসাবে কাজে ঢোকেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ, মাস তিনেক আগে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ১০ জনকে বিনা বেতনে দেশে ফেরতও পাঠিয়ে দেয় তারা। কিন্তু বাকিদের জন্য কোনওরকম ব্যবস্থা করেনি সংস্থা। টাকাপয়সা, খাবার, জল ছাড়া গত কয়েক দিন ধরে থাকছিলেন বলে অভিযোগ ওই ১২ জনের। এই ১২ জনের মধ্যে ৫ জন পান্ডুয়া ব্লকের খন্যানের চাপতা, মহানাথের কোটালপুর, জায়ের গ্রামের বাসিন্দা।

মঙ্গলবার চাবাহারে আটকে পড়া পান্ডুয়ার ৫ জনের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, প্রায় সকলের পরিবারই উদ্বিগ্ন। চিন্তায় ঘুম নেই গত কয়েক দিন ধরেই। জায়ের গ্রামের বাসিন্দা শেখ আসগর আলি বলেন, ‘‘আমার বড় ছেলে শেখ রহিম আলি ফেব্রুয়ারি মাসে বিদেশ গিয়েছে। আমি নিজে ভারতীয় দূতাবাসে গিয়েছিলাম। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে বাড়ি ফিরবে।’’ রহিমের মা সামসুনারা খাতুন বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরেই ছেলে বলছিল ওরা খুব কষ্টে আছে। একটাও টাকা নেই যে কিছু কিনে খাবে। সরকার আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিক।’’

এ দিকে পাসপোর্ট ফেরত না দেওয়ায় ভয়ে বাইরে বেরোনো বন্ধ করে দেন তাঁরা। শেষে উপায় না দেখে প্রাণ বাঁচাতে ভিডিয়ো তুলে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে তাঁরা সেটি পাঠান একটি মানব পাচাররোধের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থার কাছে। আর সেই সংস্থাই সোমবার বিদেশ মন্ত্রক এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বিষয়টি জানালে আটকে থাকা এই ১২ জনের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Workers Iran Bengali Indian Consulate Stuck
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE