Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Amartya Sen

উন্নয়নে উপেক্ষিত আদিবাসীরা, সরব অমর্ত্য

অমর্ত্যবাবুর পর্যবেক্ষণ, দেশের অর্থনীতির খারাপ হয়ে যাওয়ার প্রভাবও আদিবাসীদের উপরে পড়েছে।

এশিয়াটিক সোসাইটির অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

এশিয়াটিক সোসাইটির অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:০৯
Share: Save:

ভারতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আদিবাসীরা ‘উপেক্ষিত’ বলে মন্তব্য করলেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন।

বুধবার এশিয়াটিক সোসাইটির বিদ্যাসাগর সভাঘরে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসীদের নিয়ে প্রতীচী ইনস্টিটিউট ও এশিয়াটিক সোসাইটির একটি যৌথ রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানের পরে অমর্ত্যবাবু জানান, আদিবাসীদের ভোট নেওয়ার জন্য নানান কথা বলা হয়। কিন্তু তাঁদের যথার্থ উন্নয়নের, উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয় না। তারই ফলে আদিবাসীরা পিছিয়ে পড়ছেন। এ রাজ্যেও একই ছবি। ‘‘আদিবাসীদের উন্নয়নে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে,’’ বলেন নোবেলজয়ী বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ।

বর্তমান জাতীয় পরিস্থিতিতে আদিবাসীদের অবস্থা কী সেই প্রশ্নও ওঠে অনুষ্ঠানের পরে। অমর্ত্যবাবুর পর্যবেক্ষণ, দেশের অর্থনীতির খারাপ হয়ে যাওয়ার প্রভাবও আদিবাসীদের উপরে পড়েছে। ‘‘তবে এখন তো মানবিক অধিকারও খর্ব হচ্ছে। সরকারের বিরোধিতা করলেই দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হচ্ছে। বিদেশ থেকে এসে কেউ সমালোচনা করলে তাঁকে বিমানে চাপিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে,’’ বলেন অমর্ত্যবাবু।

আদিবাসীদের নিয়ে সমাজের বৃহত্তর অংশের এখনও নানান ভুল ধারণা রয়েছে। তাঁদের সমাজ, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই বহু মানুষের। এ দিনের অনুষ্ঠানে অমর্ত্যবাবুর বক্তব্যেও সেই প্রসঙ্গ এসেছে। প্রতীচী ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা জানান, পশ্চিমবঙ্গে ৪০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ‘তফসিলি জনজাতি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিভিন্নতা এবং স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কেও সমাজে সচেতনতার অভাব আছে। সেই সঙ্গে সরকারি ঔদাসীন্যের চেহারাটাও স্পষ্ট।

সমীক্ষা রিপোর্টে উঠে এসেছে, সাত শতাংশ আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষ জানিয়েছেন, তাঁদের সন্তানদের প্রাথমিক স্কুলে যাওয়ার জন্য এক কিলোমিটারের বেশি হাঁটতে হয়। যদিও ২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, শিশুর বাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রাথমিক স্কুল থাকার কথা। ৬৮ শতাংশ শিশুর টিকাকরণ কার্ড রয়েছে। সেই ৬৮ শতাংশের মধ্যে ৫৮ শতাংশ শিশুর সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে। ৪৪ শতাংশ আদিবাসী পরিবারের শৌচাগার নেই এবং পাঁচ শতাংশের শৌচাগার থাকলেও তা ব্যবহারযোগ্য নয়।

সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে, ৫৩ শতাংশ আদিবাসী মানুষ কাজকর্মে নিয়োজিত। তার মধ্যে ৫৫ শতাংশই কৃষি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে মজুরের কাজ করেন। বাকিরা কৃষক। তবে সমীক্ষকদের মতে, এই সংখ্যায় কর্মে নিয়োজিত থাকার মানে, স্কুলে না-গিয়ে অনেক শিশুই কাজে নিযুক্ত হচ্ছে। প্রতীচীর রিসার্চ-ডিরেক্টর কুমার রাণা বলেন, ‘‘কৃষি-মজুরের মধ্যে বড় অংশ আদিবাসী মহিলারা।’’

বিভিন্ন জনজাতির মধ্যে ফারাকও রয়েছে। রিপোর্টে প্রকাশ, এ রাজ্যে লোধাদের ৫১ শতাংশের বাড়িতে শৌচাগার নেই এবং তাঁদের ২৬ শতাংশ শিশু বুনিয়াদি স্তরেই স্কুল ছেড়ে দেয়। সমীক্ষকেরা জানাচ্ছেন, অরণ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার এবং ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পের সুফলও আদিবাসীদের কাছে যথাযথ ভাবে পৌঁছচ্ছে না। প্রতীচীর গবেষকদের পরামর্শ, আদিবাসীদের ‘সমস্যা’ হিসেবে না-দেখে সহ-নাগরিক হিসেবে দেখলে আখেরে দেশের উন্নয়ন সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indigenous People Development Amartya Sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE