Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইন্দ্রনীলে আস্থা হারিয়ে অধীর-দুর্গে ভরসা শুভেন্দু

মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক হিসেবে তাঁর বর্ষপূর্তির দিনেই পদ খোয়ালেন ইন্দ্রনীল সেন। গত লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর কেন্দ্রে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাজয় সত্ত্বেও কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের কর্মিসভা থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার দলীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে ইন্দ্রনীলকেই বেছে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩০ মে, দলনেত্রীর সেই ঘোষণার পরে ক্রমান্বয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বাংলা সঙ্গীত জগতের এই পরিচিত শিল্পী। তাঁর ‘স্বেচ্ছাচারের’ বিরুদ্ধে তোপ দেগে দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা নেতাদের অনেকেই। কারও গিয়েছিল মন্ত্রিত্ব, কাউকে বা ছেঁটে ফেলা হয়েছিল দল থেকেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক হিসেবে তাঁর বর্ষপূর্তির দিনেই পদ খোয়ালেন ইন্দ্রনীল সেন।

গত লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর কেন্দ্রে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাজয় সত্ত্বেও কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের কর্মিসভা থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার দলীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে ইন্দ্রনীলকেই বেছে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

৩০ মে, দলনেত্রীর সেই ঘোষণার পরে ক্রমান্বয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বাংলা সঙ্গীত জগতের এই পরিচিত শিল্পী। তাঁর ‘স্বেচ্ছাচারের’ বিরুদ্ধে তোপ দেগে দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা নেতাদের অনেকেই। কারও গিয়েছিল মন্ত্রিত্ব, কাউকে বা ছেঁটে ফেলা হয়েছিল দল থেকেই।

বছর ঘুরতে না ঘুরতে, শনিবার তৃণমূল ভবনে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে মমতা জানিয়ে দিলেন, ‘‘এখন থেকে মালদহ, উত্তর দিনাজপুর এবং মুর্শিদাবাদের দেখভাল করবে শুভেন্দু অধিকারী। ওই তিন জেলার ও-ই দলীয় পর্যবেক্ষক।’’ দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দ্রনীলকে দলের ‘জয়হিন্দ বাহিনী’র চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে (আগে থেকেই অবশ্য এই পদে ছিলেন তিনি)। এ ব্যাপারে ইন্দ্রনীলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। এসএমএস করলেও সাড়া দেননি।

ইন্দ্রনীল ঘনিষ্ঠদের অবশ্য দাবি, দলনেত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে মুর্শিদাবাদ জেলার পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগের কথা ঘোষণা করলেও কখনও বলেননি, ইন্দ্রনীলকে ওই পদ থেকে ‘অপসারণ’ করা হয়েছে। যা শুনে, তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘জেলা পর্যবেক্ষক হিসেবে শুভেন্দুর নাম ঘোষণা হয়েছে। দ্বিতীয় কোনও নাম যখন নেত্রী উল্লেখ করেননি, তখন ইন্দ্রনীল ওই পদে রয়ে গিয়েছে মনে করলে ভুল করবে।’’

জয়হিন্দ বাহিনীর কাজ নিয়েও এ দিনের বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নেত্রী। সংগঠনটি যাতে অনেক সাংস্কৃতিক কর্মীকে অনুষ্ঠান করার সুযোগ করে দেয়, তা দেখতে সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে পরামর্শ দিয়েছেন নেত্রী। ইন্দ্রনীল এ দিনের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, ইন্দ্রনীল এ দিনের বৈঠকে থাকতে পারবেন না বলে আগেই নেত্রীকে জানিয়েছিলেন।

অথচ গত এক বছরে মুখ্যমন্ত্রীর ‘সুনজরে’ ইন্দ্রনীলের উত্থান চমকে দিয়েছিল দলের নেতা-কর্মীদের। যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর সখ্য অজানা ছিল না কারও। দলনেত্রীর যে কোনও অনুষ্ঠানেই মঞ্চে ইন্দ্রনীলের উপস্থিতি ছিল পাকা। বিভিন্ন জেলা সফরে, প্রশাসনিক বৈঠকের আগে-পরে মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে উঠে ইন্দ্রনীলকে মাইক এগিয়ে দিয়েছেন গান গাওয়ার জন্য— এ নজিরও একাধিক। বাংলার সঙ্গীত জগতের পরিচিত মুখেদের তৃণমূলের মিটিং-মিছিলে হাজির করানোর দায়িত্বও ছিল ইন্দ্রনীলেরে।

সেই ইন্দ্রনীলকে হঠাৎ সরানো হল কেন?

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনে রাজ্যের অন্যত্র সাফল্য পেলেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর খাসতালুক মুর্শিদাবাদ জেলায় কার্যত দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। বিধানসভা নির্বাচনের বছর-খানেক দূরে দাঁড়িয়ে, ওই জেলায় দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে শুভেন্দুই কার্যকরী হবেন বলে মনে করেছেন নেত্রী।

দল থেকে বহিষ্কৃত, প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর বরাবরই ইন্দ্রনীলের সমালোচক। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ থেকে ইন্দ্রনীলের বিরুদ্ধে জেলায় হোমগার্ড নিয়োগ, কয়লা পাচার-সহ একাধিক ব্যাপারে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তিনি জানিয়ে এসেছেন নেত্রীর কাছে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের দুর্গে ইন্দ্রনীলের মতো অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যে অচল তা বহু দিন ধরেই বলে আসছি। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর বোধোদয় হয়েছে দেখে ভাল লাগছে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘পর্যবেক্ষক রদবদলে আমার সুবিধে-অসুবিধে হবে না।’’ কিছু দিন আগে, মুর্শিদাবাদ জেলায় বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গিপুর— তিন লোকসভা কেন্দ্রে তাঁর ঘনিষ্ঠ তিন নেতা সুবোধ দাস, চাঁদ মহম্মদ ও ইমানি বিশ্বাসকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছিলেন ইন্দ্রনীল। এ দিন সে ব্যাপারে সুবোধবাবু এবং চাঁদ মহম্মদ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE