Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ফুটবলের শটে ছিটকে গিয়েছে ‘ন্যাকা’ শব্দটা

ছেলেরা খেলত, ওরা দেখত। উঁকি মেরে, জানলাটুকু একটুখানি ফাঁক করে। তাদের হেরে যাওয়া দেখলে খারাপ লাগত ওদেরও। হ্যাঁ, খেলতেও ইচ্ছে করত, খুউব।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪০
Share: Save:

আলপিনের মতো ছিটকে আসত ব্যঙ্গটা— ‘ওহ, ন্যাকামো দেখ, ফুটবল বুঝিস!’

বোলতার হুলের মতো ছুটে আসত যন্ত্রণা, টিভির সামনে আদিখেত্যা করবি না তো, অপয়া মেয়ে!’

ছেলেরা খেলত, ওরা দেখত। উঁকি মেরে, জানলাটুকু একটুখানি ফাঁক করে। তাদের হেরে যাওয়া দেখলে খারাপ লাগত ওদেরও। হ্যাঁ, খেলতেও ইচ্ছে করত, খুউব। কিন্তু বলতে গেলেই চাবুকের মতো সপাটে পড়ত পিঠে, ‘‘মেয়েরা খেলবে ফুটবল! ভাল করে দাঁড়াতেই পারিস না?’’

চুপচাপ অপমানটা সহ্য করেছিল বটে, তবে, মন বলেছিল, অন্য কথা।

ফুটবল বিশ্বকাপে তুমুল হইচই। পড়তে পড়তে এক ছুটে টিভির সামনে এসেছিল মেয়েটি, ‘‘ইশ, গোলটা মিস করে গেলাম!’ শুনতে হল, ‘‘যা তো এখান থেকে, ন্যাকা!’’

মাথা নিচু করে সে ফিরে এসেছিল পড়ার ঘরে। তবে, মন বলেছিল, ভেঙে পড়ার কিছু নেই।

দলবেঁধে সেই মেয়েরা এক দিন সটান হাজির হল শারীরশিক্ষার দিদিমণির কাছে, ‘‘দিদি, আমরাও ফুটবল খেলতে চাই।’’ দিদিমণি বললেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’’ ওরা ভাবল, ফুটবল খেলতেও এত ঝক্কি! মন বলেছিল, খেলার আগেই হেরে যেতে নেই।

মুর্শিদাবাদের নাইত সামশেরিয়া মাদ্রাসার ছাত্রীরা হাল ছাড়েনি। বাড়ির লোকজনকে বুঝিয়ে তারা রাজি করাল। শারীরশিক্ষার দিদিমণি কবিতা বিশ্বাস স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বললেন। সবুরে অনুমতি মিলল। পায়ে এল কালো-সাদা খোপ কাটা ফুটবল।

কিন্তু মেয়েরা খেলবে কখন?

বদলে গেল স্কুলের রুটিন। শেষ পিরিয়ডে রাখা হল শারীরশিক্ষার ক্লাস। সেই ক্লাস চলে স্কুলের মাঠে। ওড়নাটা কষে বেঁধে সালোয়ার-কামিজ পরেই ফুটবল পায়ে ছুটছে করিশমা, হাসিনা, আশিয়া সুলতানারা। খালি পায়ে ওদের শট দেখে এখন চমকে যাচ্ছে অনেকেই। ইতিমধ্যে ১৮ জন ছাত্রীকে নিয়ে তৈরি হয়েছে টিম।

রঘুনাথগঞ্জের ওই মাদ্রাসায় ৬১৫ জন পড়ুয়ার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৩৯২। মাদ্রাসায় খেলাধুলোর চল আছে। পাঁচিল ঘেরা স্কুল মাঠে চলে অনুশীলনও। ইতিমধ্যে ছাত্রছাত্রীরা দৌড়, জ্যাভলিনে অংশ নিয়েছে। ছাত্ররা প্রতি বছর আন্তঃস্কুল ফুটবল খেলে। কিন্তু মেয়েদের ফুটবল দল এই প্রথম। মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক আতাউর রহমানের দাবি, ‘‘তামাম জেলায় এক মাত্র আমাদের মাদ্রাসাতেই মেয়েদের ফুটবল টিম তৈরি হল। এটা সম্ভব হয়েছে ছাত্রীদের অদম্য জেদে। আমরা চাই, অন্য মাদ্রাসাতেও মেয়েরা ফুটবল খেলুক।’’

দশম শ্রেণির ছাত্রী করিশমা আকতার, একাদশ শ্রেণির হাসিনা খাতুনদের কথায়, ‘‘মেয়েদের এ ভাবে কথা বলতে নেই। ও ভাবে বসতে নেই। এটা করতে নেই। এত না-এর ভিড়ে ফুটবল খেলব শুনে চমকে উঠেছিলেন অনেকেই। তবে শেষ পর্যন্ত যে অনুমতি মিলেছে, এটাই বড় কথা। এ বার মাঠে নেমে আমরা দেখিয়ে দেব।’’

হ্যাঁ, দেখিয়ে ওরাই দিয়েছে, মেয়েরাও সব পারে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football girls raghunathganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE