Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিস্ফোরণস্থলে সুরক্ষা ছাড়াই অবাধে তল্লাশি গোয়েন্দাদের

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের তরফে দাবি করা হয়েছে, ‘তদন্তের স্বার্থে’ই, সব রকম পদ্ধতি মেনে তারা যা কিছু করার করেছে। এবং তারা জানত যে ঘটনাস্থলে আর বোমা নেই।

অসাবধান: কোনও রকম নিরাপত্তা না-নিয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের সিপি রাজেশ সিংহ-সহ পুলিশের পদস্থ অফিসারেরা। মঙ্গলবার নাগেরবাজারের কাজিপাড়ায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

অসাবধান: কোনও রকম নিরাপত্তা না-নিয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের সিপি রাজেশ সিংহ-সহ পুলিশের পদস্থ অফিসারেরা। মঙ্গলবার নাগেরবাজারের কাজিপাড়ায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৫০
Share: Save:

বারবার ঠেকেও কি শেখেনি পুলিশ!

ঝিটকার জঙ্গল, আলিপুরদুয়ার, মালদহ, কোচবিহার— ২০০৬ সাল থেকে শুরু করে করে চলতি বছর পর্যন্ত উপযুক্ত ব্যবস্থা ছাড়াই বিস্ফোরণস্থলে গিয়ে বোমায় মৃত্যু বা আহত হওয়ার ঘটনা অব্যাহত। তা সত্ত্বেও মঙ্গলবার নাগেরবাজারে বোমা ফাটার পর বিন্দুমাত্র সুরক্ষা বা সতর্কতা ছাড়াই বিস্ফোরণ স্থলে তল্লাশি চালাতে দেখা গিয়েছে পুলিশ কর্তাদের। এমনকি, দীর্ঘ সময় পুলিশ দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে না রাখায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা বা সাধারণ মানুষের অনেকেই অবাধে ঘুরে বেরিয়েছেন সেখানে। তেমন ভাবে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

যদিও পুলিশ ওই অভিযোগ মানতে চায়নি। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের তরফে দাবি করা হয়েছে, ‘তদন্তের স্বার্থে’ই, সব রকম পদ্ধতি মেনে তারা যা কিছু করার করেছে। এবং তারা জানত যে ঘটনাস্থলে আর বোমা নেই। পুলিশ কমিশনার রাজেশ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘ঘটনার পর থেকে যা যা করার তা পুলিশ করেছে। আমাদের যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, ঘটনার পরেই সব নেওয়া হয়েছিল।’’

পুলিশের একটি অংশ জানাচ্ছে, কোন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটলে সেটি ঘিরে রাখা আবশ্যিক, যতক্ষণ না বম্ব স্কোয়াড পুরো এলাকা তল্লাশি করে ছাড়পত্র দিচ্ছে। কারণ, ঠিক কী ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে, আরও বিস্ফোরক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখাই নিয়ম। যা সাধারণ পুলিশকর্মীরা খালি চোখে দেখে চিহ্নিত করতে না-ও পারেন। সে জন্য বম্ব স্কোয়াডের বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন ছাড়পত্র দিলে তবেই ঘটনাস্থলে তল্লাশি করা যায়।

মঙ্গলবার ঘটেছে ঠিক উল্টোটা। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার-সহ আধিকারিকদের দেখা
যায়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করতে। যে দোকানের সামনে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, সেখানকার সেই দোকানের শাটারও হাত দিয়ে সরাতে দেখা যায় পুলিশ কর্তাদের। পড়ে থাকা ছাতাও পুলিশকর্মীরা খুলে দেখেছেন। সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা অবশ্য এসে নিয়ম মেনেই বম্ব স্যুট পরেই তল্লাশি করেছেন বা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। মঙ্গলবার সকাল নটা ১০ মিনিট নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটে। মিনিট দশেকের মধ্যেই ঘটনাস্থলে আসেন দমদম থানার কর্মীরা। তবে তার আগেই এলাকাবাসীরা জখম ১১ জনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। খালি হাতে, সুরক্ষা ছাড়া তল্লাশি করা যে উচিত হয়নি, তা পুলিশের নীচু তলার কর্মীদের একাংশ এখন স্বীকারও করছেন। তাঁদের বক্তব্য, দুষ্কৃতীরা কোনও ফাঁদ পাততেই পারত, থাকতে পারত আরও বোমা। তা হলে কী হত, তা ভেবে এখন তাঁরা আতঙ্কিত।

২০১৪ সালে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর প্রথমদিন একই ভাবে ঘটনাস্থলে ঘিরে রাখা হয়নি। যা নিয়ে পরে এনআইএ গোয়েন্দাদের সঙ্গে বিরোধও বেধেছিল রাজ্য পুলিশের। পরে অবশ্য ঘটনাস্থলে তদন্তকারী ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি তথ্য প্রমাণ নষ্টের অভিযোগে। মঙ্গলবার, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের বর্ষপূর্তির দিনেও একই ঘটনা ঘটল। প্রাক্তন এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘অনেক সময় অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কাজ করে পুলিশদের মধ্যে। নিজেদের সেরা মনে করে কোনও কিছুর জন্য অপেক্ষা না করে তল্লাশি করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE