Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
শিলিগুড়ি পুলিশ

কাজ হচ্ছে কেমন, ছবি চাই কর্ত্রীর

মাল্টিপ্লেক্স থেকে শপিং মল, জাতীয় সড়ক থেকে জনবহুল স্থান, নাকা তল্লাশির পাশাপাশি শুরু হয়েছে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসাররা তল্লাশি চালাচ্ছিলেন শহরের সিটি সেন্টারের আনাচে কানাচে।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

মাল্টিপ্লেক্স থেকে শপিং মল, জাতীয় সড়ক থেকে জনবহুল স্থান, নাকা তল্লাশির পাশাপাশি শুরু হয়েছে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসাররা তল্লাশি চালাচ্ছিলেন শহরের সিটি সেন্টারের আনাচে কানাচে। তল্লাশির ফাঁকে হঠাৎই কয়েকজন পুলিশ অফিসার স্মার্টফোনে ছবি সেই তোলা শুরু করলেন। কয়েকজন মোবাইলে তল্লাশির সঙ্গে সেলফিও নিলেন।

সঙ্গে সঙ্গে ছবি পাঠানো হল, স্থানীয় থানার ওসি, আইসি-র মোবাইলে। তাঁরা আবার দেরি না করে তা পাঠিয়ে দিলেন, শিলিগুড়ি পুলিশের নতুন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। পরিস্থিতির কথা দুই লাইন লিখেও দিলেন অফিসারেরা। তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা জানিয়ে দিলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিসি এবং এসিপি’রা। এই ভাবেই গত কয়েকদিন ধরে তথ্য প্রযুক্তির হাত ধরে শিলিগুড়িতে চালু হয়ে গিয়েছে, ‘পিকচার পুলিশিং’।

বর্তমানে কমিশনারেটের অফিসারদের নিয়েই গ্রুপটি চালু করেছেন পুলিশ কমিশনার। ছয়টি থানা, সমস্ত ফাঁড়ির ওসি, আইসি, এসিপি, ডিসি, ট্রাফিক-সহ প্রতিটি ইউনিটের অফিসারদের গ্রুপে রাখা হয়েছে। মুম্বই থেকে বেঙ্গালুরু বা বিহার পুলিশ ইতিমধ্যেই এই ধরনের হোয়াটসঅ্যাপ পুলিশিং চালু করে দিয়েছে। যদিও আলাদা করে ফটোগ্রাফার না রেখে অফিসারদের মাধ্যমেই স্মার্টফোনের বিভিন্ন ঘটনাবলির ছবি তুলে রাখার ক্ষেত্রে ‘পুলিশিং’-এর আসল কাজ ব্যাহত হবে কি না, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ, প্রতিনিয়ত ‘উপরওয়ালা’ নজর রাখছেন, এই মানসিকতা নিয়ে অফিসারেরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। কাজের থেকে ছবি তোলায় মন বেশি হলে সমস্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবার ‘শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশ’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটিতে প্রতিনিয়ত নজর রাখছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিকিম লেপচা। পাশাপাশি, কমিশনারেটের দফতরের এক কর্মীকে গ্রুপের ‘অ্যাডমিন’ হিসাবেও রাখা হয়েছে। তবে আইন শৃঙ্খলা সামলাতে গিয়ে অফিসারেরা ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে, তা কী সঠিক হবে, সেই প্রশ্নও উঠেছে পুলিশ মহলে। এমনকি, ঘটনাস্থলে পুলিশ পুলিশের কাজ না করে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়ার পরিস্থিতির আশঙ্কার কথাও সামনে এসেছে। ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় থেকে নাকা তল্লাশি, কোনও থানার অনুষ্ঠান থেকে দুর্ঘটনা বা আইন শৃঙ্খলার ডিউটি-প্রতিটি ক্ষেত্রে ছবি তুলে গ্রুপে দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার বলছেন, ‘‘তথ্য প্রযুক্তির হাত ধরে পুলিশকেও এগোতে হবে। অফিসারদের সমস্ত সোশাল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। তাই গ্রুপেই তথ্য ও ছবি পোস্ট করতে বলা হয়েছে। সাধারণ অনুষ্ঠান বা ডিউটির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, আইন শৃঙ্খলা বা গোলমালের ডিউটিতে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে বলা হয়েছে। একাধিক অফিসার থাকেন সেই সময়। কেউ না কেউ ছবি তুলতেই পারবে। সংবাদমাধ্যমও একইভাবে কাজ করে। পুলিশকেও সেই ভাবেই করতে হবে। আর বাসিন্দাদের পরিষেবার জন্যই অন্য গ্রুপের কথা ভাবা হচ্ছে।

পুলিশ অফিসারেরা জানিয়েছেন, কমিশনারেটে আগামী কিছু দিনের মধ্যে আরেকটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ শহরবাসীর জন্যও চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাসিন্দারা অভিযোগ থেকে নানা মতামত, ছবি সরাসরি জানাতে পারবেন। দিল্লি, মুম্বই, তামিলনাড়ু, কর্নাটকের মতো নানা রাজ্য এই পরিষেবা বাসিন্দাদের দেওয়া হচ্ছে। তাতে প্রাথমিক ভাবে থানার যাওয়ার ঝামেলা থাকবে না। অফিসারদের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগও সামনে আসবে। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ খতিয়ে দেখে পরবর্তীতে অফিসারেরাই অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। উচ্চপদস্থ অফিসারদের নজরেও গোটা বিষয়টি থাকবে। বর্তমান গ্রুপের মাধ্যমে নিয়মিত নির্দেশ মেনে ঠিকঠাক ডিউটি অফিসারেরা করছেন কি না, দেখার জন্যই এই ব্যবস্থা। এলাকায় না পৌঁছেই পরিস্থিতির কথা জানানো বা দেরিতে পৌঁছে অন্য রকম কথাবার্তা বলার প্রবণতা ঠেকাতেও
এই নতুন ব্যবস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Investigation police whats app
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE