Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ম্যানগ্রোভ কেটে অবৈধ ভেড়ি সাগরে, শুরু তদন্ত

গঙ্গাসাগরে হেলিপ্যাড তৈরির জন্য ম্যানগ্রোভ নষ্ট করে মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে আগেই। এ বার ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে সরকারি খাস জমির চরিত্র বদলে অবৈধ ভেড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠল। 

বেআইনি: আগে এখানে ছিল ম্যানগ্রোভের ঘন জঙ্গল। তা সাফ করে তৈরি হয়েছে মাছের ভেড়ি। সাগরের চেমাগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র

বেআইনি: আগে এখানে ছিল ম্যানগ্রোভের ঘন জঙ্গল। তা সাফ করে তৈরি হয়েছে মাছের ভেড়ি। সাগরের চেমাগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

গঙ্গাসাগরে হেলিপ্যাড তৈরির জন্য ম্যানগ্রোভ নষ্ট করে মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে আগেই। এ বার ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে সরকারি খাস জমির চরিত্র বদলে অবৈধ ভেড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠল।

সাগর বদ্বীপে চেমাগুড়ি মৌজার বেণুবন জেটির পাশে প্রায় ৪০ হেক্টর খাস জমিকে ভেড়িতে পরিণত করে মাছ চাষ চলছে। কী ভাবে এটা সম্ভব হল, জেলা প্রশাসন তার তদন্ত করছে। ‘‘পাট্টা বিলির পরে সরকারি খাস জমির চরিত্র কী করে বদলানো হল, তার তদন্ত চলছে। এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’’ বলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও।

চেমাগুড়ি থেকে বেণুবন জেটিঘাট যেতে রাস্তার বাঁ দিকে ম্যানগ্রোভের গভীর অরণ্য। অভিযোগ, রাস্তার ডান দিকেও ছিল ম্যানগ্রোভের বন। গত ১০ বছরে যে সেই ম্যানগ্রোভের জঙ্গল কেটে ভে়ড়ি তৈরি করা হয়েছে, তা স্বীকার করেছেন স্থানীয় ধবলাট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সজল বারিক। ‘‘ঘটনাটি সত্যি। তবে এটা বাম আমলে হয়েছিল। বেআইনি ভাবে ভেড়ি নির্মাণের বিষয়টি আমরা উঁচু মহলে জানিয়েছি,’’ বলেন সজলবাবু।

বিষয়টির তদন্ত চেয়ে ডিসেম্বরে জেলা প্রশাসনকে চিঠি লিখেছিল গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ। ওই পর্ষদের চেয়ারম্যান, সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে বামফ্রন্ট পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি একই পরিবারকে ২-৩টি করে পাট্টা দিয়ে চেমাগুড়ির খাস জমি বিলি করে। সেই জমি বসবাস ও কৃষিকাজে লাগানোর কথা। বিধি ভেঙে তা জলাজমিতে পরিণত করা হয়েছে। ওই সব পাট্টা বাতিল করার আবেদন জানিয়ে ভূমিরাজস্ব দফতরকে চিঠি দিয়েছি।’’

সাগর ব্লকের ভূমিরাজস্ব কর্তা কৃষ্ণনির্মাল্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বেণুবন জেটিঘাটের উল্টো দিকে চেমাগুড়ি মৌজার বেশির ভাগই সরকারি খাসজমি। বহু বছর আগে পাট্টা দিয়ে কিছু খাস জমি বিলি হয়েছিল। তার পরে যে-ভাবে জমির চরিত্র বদলে ভেড়ি তৈরি হয়েছে, তা নিয়মবিরুদ্ধ। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’

উপগ্রহ-চিত্র দেখাচ্ছে, বেণুবন জেটিঘাটের উল্টো দিকে এক সময় ম্যানগ্রোভের গভীর জঙ্গল ছিল। ছিল বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এখন সেখানে শুধুই জলাজমি! ‘‘২০১৩-’১৮ পর্যন্ত প্রধান থাকাকালীন আমি ১০ জনের নামে অবৈধ ভাবে ম্যানগ্রোভ কাটার অভিযোগ দায়ের করি গঙ্গাসাগর কোস্টাল থানায়,’’ বলেন সজলবাবু।

সাগরদ্বীপে ম্যানগ্রোভ কাটার প্রবণতা যে থেমে নেই, ওখানকার বিভিন্ন এলাকায় ঢুঁ মারলেই সেটা চোখে পড়ে। কোথাও বিদ্যুতের স্তম্ভে পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘মেশিনের মাধ্যমে যে-কোনও গাছ কাটা হয়’। পোস্টারে লেখা মোবাইল নম্বর দেখে বাবুলাল প্রধান নামে এক ব্যক্তিকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কেউ বললে আমি গাছ কেটে দিই। আমি গরিব মানুষ। গাছ কাটাই আমার জীবিকা।’’ কিন্তু গাছ কাটা তো আইনবিরুদ্ধ! কী ভাবে তা কাটছেন? প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন তিনি।

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘বেণুবন জেটিঘাটের কাছে যে-ভাবে ম্যানগ্রোভ নষ্ট করে মাছ চাষের ভেড়ি করা হয়েছে, পরিবেশ ও আইনগত ভাবে তা অবৈধ। শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ আদালতে মামলা করবো। এটা চলতে থাকলে তো সাগরদ্বীপের পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE