Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সকালে বচসা ছাড়া দিনভর অফিসেই ইকবাল

খানিক আগেই গোলমাল বেধেছিল ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়েলেসলি পাড়ায়। শনিবার ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই চৌরঙ্গি কেন্দ্রে প্রথম উত্তেজনার আঁচ। স্থানীয় বরোর চেয়ারম্যান এবং খানাকুলের তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদের খাসতালুক এটা। সেখানেই বুথের সামনে ভিড় করা নিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠকের সঙ্গে তাঁর বচসা, দু’দলে ধাক্কাধাক্কি। খবর পেয়ে ছুটে গেলেন তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। ইকবাল তত ক্ষণে রিপন স্ট্রিটে। দু’জনের দেখা হল সেখানেই। ভিড় থেকে সরে নিচু গলায় কিছু কথাও হল।

ইকবালের সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। রিপন স্ট্রিটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ইকবালের সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। রিপন স্ট্রিটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:০৫
Share: Save:

খানিক আগেই গোলমাল বেধেছিল ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়েলেসলি পাড়ায়। শনিবার ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই চৌরঙ্গি কেন্দ্রে প্রথম উত্তেজনার আঁচ।

স্থানীয় বরোর চেয়ারম্যান এবং খানাকুলের তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদের খাসতালুক এটা। সেখানেই বুথের সামনে ভিড় করা নিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠকের সঙ্গে তাঁর বচসা, দু’দলে ধাক্কাধাক্কি।

খবর পেয়ে ছুটে গেলেন তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। ইকবাল তত ক্ষণে রিপন স্ট্রিটে। দু’জনের দেখা হল সেখানেই। ভিড় থেকে সরে নিচু গলায় কিছু কথাও হল।

কী কথা? তা কে জানে! শুধু ইকবালের মুখ থেকে শোনা গেল ‘সাবোতাজ! সাবোতাজ!’

পরে তৃণমূলের এক ছাত্র নেতার মন্তব্য, “ভোট শুরু হতে না হতেই সন্তোষ পাঠকের সঙ্গে ঝামেলা পাকিয়ে ডোবানোর ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছিল আমাদের। কোনও ভাবে সামলানো গিয়েছে।”

উপনির্বাচন হলেও চৌরঙ্গির ময়দানে তৃণমূল যে ‘সহজ ম্যাচ’ পাচ্ছে না, ভোটের দিন ঘোষণা ইস্তক তার ইঙ্গিত মিলেছে যথেষ্ট। ইকবাল নিজে ২০১০ সালের পুরভোটে কলকাতা পুরসভার ৬২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৫৭০০ ভোটে জিতেছিলেন। কিন্তু গত লোকসভা ভোটে সেই ৬২ নম্বর ওয়ার্ডেই ৪৩০০ ভোটে তৃণমূলকে পিছনে ফেলেছিল কংগ্রেস। আরও স্পষ্ট ভাবে বললে, ইকবালের খাসতালুকেই সোমেন মিত্রের কাছে ‘হেরে গিয়েছিলেন’ তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ, দলীয় সমীকরণে সুদীপবাবুর বিরোধী বলেই পরিচিত ইকবাল। সাবেক কংগ্রেস আমলে সোমেনবাবুর হাত ধরে রাজনীতিতে উঠে আসেন ইকবালের দাদা, বর্তমান তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ। ইকবালও সোমেনবাবুর ছত্রচ্ছায়ায় বেড়ে উঠেছিলেন। ফলে ‘গুরুদক্ষিণা’র ছাপ দেখেছিলেন অনেকে।

এ দিন ভোট ‘করাতে’ নামা ইকবাল অবশ্য পরিষ্কার জানিয়ে দেন, “নয়না বা সুদীপ বলে প্রশ্ন নয়। এখানে তৃণমূলের হয়ে একটা খুঁটি দাঁড়ালেও আমি সমর্থন করতাম। আমি দিদির লোক। দল যাঁকে দাঁড় করাবে, তাঁকেই সমর্থন করব।” তবে সকালে কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়া ছাড়া ইকবালকে আর কোনও ভোটকেন্দ্রের সামনে সে ভাবে দেখা যায়নি। রিপন স্ট্রিটে সেন্ট মেরিজ স্কুলের পাশে এবং উল্টো দিকে তাঁর দু’টি অফিস রয়েছে। সারা দুপুর রিপন স্ট্রিটের ওই দুই অফিসের বাইরে যাননি তিনি। তবে দু’টি অফিসেই সারাদিন ধরে মোটরবাইক বাহিনীর যাতায়াত ছিল। বিশেষ করে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ দেখা যায়, রিপন স্ট্রিট জুড়ে মোটরবাইকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ফুটপাথে এসে দাঁড়িয়ে বাইক-বাহিনীর সদস্যদের নানা রকম নির্দেশ দিতে থাকেন ইকবাল। অনেকের সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলেন।

তারই ফাঁকে বললেন, “আমি এজেন্ট নই, ভোটার নই। ভোটেও দাঁড়াইনি। তাই বুথে বুথে ঘুরছি না। সকালে বেরিয়েছিলাম এক বার। সন্তোষ পাঠকের সঙ্গে গন্ডগোলটায় আমার কোনও দোষ নেই। ওই পা বাড়িয়ে ঝামেলা করে।” আর সন্তোষবাবুর অভিযোগ, “সকালে তামিল চার্চের সামনে আমাকে দেখে ইকবাল এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করেন, আমি সেখানে কী করছি? এই বলেই ইকবাল ও তার দলবল আমাকে মারতে উদ্যত হন। আমি বাধা দিলে ওরা আমার সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করে। আমি পুরো বিষয়টি নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছি।”

ইকবালের পাল্টা দাবি, বুথ পরিদর্শনের নাম করে সন্তোষ পাঠকই ২০-২৫ জনকে নিয়ে বুথের সামনে ভিড় করছিলেন। তিনি বিষয়টি কর্তব্যরত পুলিশকে জানাতেই কংগ্রেসিরা তাঁর দিকে তেড়ে আসেন। তাঁর এক সঙ্গীকে মারধরও করেন। তাঁরা তালতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে ইকবাল জানান।

এখন প্রশ্ন হল, সারা দিনে কতটা গা ঘামালেন সুলতানের ভাই?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা জানালেন, ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে গত লোকসভায় কংগ্রেসের কাছে ধাক্কা খাওয়া থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার আগে থেকে ইকবালকে পুরোভাগে নামিয়ে দিয়ে ভোটে জেতার পরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছিল। দলীয় কোন্দল সরিয়ে রেখে ভোটে জিততে ঝাঁপাতে হবে, এ কথা ইকবালকে জানিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও।

সেই সুরই দিনের শেষে প্রার্থী নয়নার গলায়। বললেন, “এটা তেরো বছর আগের নয়না নয়। এখন বলব, আমাদের দলে সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য লড়াই করে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE