Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Ishapore Rifles

‘নোটিং’ ঘিরে রাইফেল-বিতর্কে ইছাপুর কারখানা

রাইফেলের মতো উপহারের ক্ষেত্রে সাধারণত আসল না-দিয়ে প্রতিরূপ দেওয়া হয়।

থ্রি-নট-থ্রি ‘শর্ট ম্যাগাজিন লি-এনফিল্ড রাইফেল’

থ্রি-নট-থ্রি ‘শর্ট ম্যাগাজিন লি-এনফিল্ড রাইফেল’

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:২৮
Share: Save:

কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নিয়ন্ত্রিত ইছাপুর রাইফেল কারখানা থেকে দু’টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে। ওই রাইফেল কারখানার মুখপাত্র মঙ্গলবার রাতে জানান, দিন দশেক আগে জোড়া রাইফেল রাজভবনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

রাইফেলের মতো উপহারের ক্ষেত্রে সাধারণত আসল না-দিয়ে প্রতিরূপ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কেন তা হল না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। পাশাপাশি আসল রাইফেল উপহার দিতে গেলেও যন্ত্রাংশের রদবদলে যে ধরনের বিধি মানা উচিত, এ ক্ষেত্রে তা করা হয়েছিল কিনা, সে প্রশ্নও সামনে এসেছে। বিভিন্ন সূত্রে অবশ্য অভিযোগ, তা পালিত হয়নি।

ইছাপুর রাইফেল কারখানার যে ‘নোটিং’ আনন্দবাজারের হাতে এসেছে (সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি) তাতে দেখা যাচ্ছে, যে রাইফেল দু’টি রাজ্যপালকে স্মারক হিসেবে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র স্মারক হিসেবে দিতে গেলে কোনও রকম বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ বদল না-করে তাকে অকেজো করাই নিয়ম। অথচ যে ভাবে রাইফেল দু’টি পাঠানো হয়েছে, তাতে সেগুলিকে সম্পূর্ণ অকেজো করা হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

ইছাপুর রাইফেল কারখানার জেনারেল ম্যানেজার দিলীপকুমার মহাপাত্র হোয়াটসঅ্যাপে জানান, প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তাঁকে অনেক কাগজে সই করতে হয়। ফলে বিষয়টি তাঁর মনে নেই। তিনি কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক সৌরভ সিংহের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সৌরভ বলেন, “ওই রাইফেলগুলি অতি পুরনো এবং অকেজো। ইছাপুর কারখানা থেকে নিয়ে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড তা দিন দশেক আগে রাজভবনকে হস্তান্তর করেছে।’’

জানা যাচ্ছে, গত ১৪ মার্চ ইছাপুর রাইফেল কারখানায় একটি ‘নোটিং’ জারি করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে’ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে দু’টি থ্রি-নট-থ্রি ‘শর্ট ম্যাগাজিন লি-এনফিল্ড রাইফেল’ (যার বডি নম্বর আর-৩৪৯৩ এবং এল-১৪১৭) উপহার দেওয়া হবে। উপলক্ষ ‘অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি ডে’ (১৮ মার্চ)। এই উপহার অ-ফেরতযোগ্য (নন রিটার্নেবল) হিসেবেই পৌঁছবে গন্তব্যে। স্টোর সেকশন-কে তার জন্য প্রয়োজনীয় ‘গেট পাস’ তৈরি করতে বলা হয়। জেনারেল ম্যানেজার, স্টোর সেকশনের প্রধান-সহ কারখানার পাঁচ উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সই রয়েছে ওই নোটিংয়ে। আরও বলা হয়, ওই রাইফেল দু’টির ‘পিন ফায়ারিং’ কেটে ছোট করতে হবে। ট্রিগার টানার পরে যার ধাক্কায় গুলি ছোটে, সেটিকে পিন ফায়ারিং বলা হয়। অন্য একটি নথি থেকে জানা যাচ্ছে, ১৪ মার্চ দু’টি রাইফেলের জন্য গেট পাস তৈরি হয়। সেখানেও উল্লেখ রয়েছে রাইফেলগুলি আর ফেরত নেওয়া হবে না।

সরকারি বিধি অনুযায়ী, কারও নির্দেশক্রমে কাউকে উপহার দিতে হলে নোটিংয়ে সেই ব্যক্তির (যাঁর নির্দেশে দেওয়া হল) নাম উল্লেখ করাই দস্তুর। নথিতে সেই নির্দেশের মেমো নম্বরেরও উল্লেখ করতে হয়। মৌখিক নির্দেশ হলে তা-ও সাধারণত নথিতে উল্লেখ করা থাকে। কিন্তু এই ‘নোটে’ তা উল্লেখ করা হয়নি।

অন্য দিকে, অস্ত্র আইনে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে, রাইফেলের পিন ফায়ারিং কেটে ছোট করা যায় না। কারণ, বিভিন্ন ভাবে ওই পিন তৈরি করে ফের লাগানো যায়। স্মারক হিসেবে আগ্নেয়াস্ত্রের ‘রেপ্লিকা’ বা প্রতিরূপ উপহার দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া, কার্যক্ষম রাইফেল উপহার হিসেবে দিতে গেলে রাইফেলের ব্যারেল অর্থাৎ নল বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাতে গুলি বেরোতে না পারে। এ ক্ষেত্রে তা করা হয়েছে বলে ‘নোটিং’-এ উল্লেখ নেই।

প্রতিরূপ না-দিয়ে কেন প্রায় কার্যক্ষম রাইফেল দেওয়া হল, তাতেও বিস্মিত অস্ত্র কারখানার আধিকারিকেরা। যদিও ‘নোটিং’-এ কেন পিন ফায়ারিং কেটে ছোট করার কথা বলা হল বা অকেজো রাইফেলকে কোনও ভাবে কর্মক্ষম করা যায় কি না, তা তাঁর জানা নেই বলে জানান সৌরভ। নোটিংয়ে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই, তা-ও তাঁর জানা নেই বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, এই কারখানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার নিয়ে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। গ্রেফতার করা হয়েছিল কারখানারই তিন কর্মীকে। এ ক্ষেত্রে এই নতুন অভিযোগ নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে কারখানার অন্দরেই।

এ সম্পর্কে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত রাজভবনের কোনও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। যদি রাজভবন তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়, তা প্রকাশ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ishapore Rifles Governor Jagdeep Dhankhar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE