এখানেই মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে দুই ছাত্রের দেহ।— ছবি: নিজস্ব চিত্র।
পুলিশের কথায় কান না দিয়ে, ইসলামপুরে গুলিতে নিহত দুই ছাত্রের দেহ মাটি চাপা দিয়ে রাখল তাঁদের পরিবার। শুক্রবার দুপুরেই ময়নাতদন্তের পর তাপস আর রাজেশের দেহ দুই পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু দেহ পুড়িয়ে ফেলতে অস্বীকার করেছে দু’জনের পরিবারই। দাবি, এই মৃত্যুর তদন্তভার তুলে দিতে হবে সিবিআই-এর হাতে। এবং সিবিআই তদন্ত হলে নতুন করে ময়নাতদন্তের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই দেহ না পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তে দুই পরিবারের পাশে সক্রিয় ভাবেই দাঁড়িয়েছেন এলাকার মানুষজন।
তিস্তা খালের পাশে দাড়িভিট স্কুল লাগোয়া শ্মশানের কাছেই একটি জমিতে দুই ছাত্রের দেহ পুঁতে রাখা রয়েছে। অভিযোগ, দ্রুত দেহ সত্কারের জন্য চাপ দিয়ে চলেছে পুলিশ। পুলিশ দেহ তুলে নিয়ে যেতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকে পালা করে পাহাড়াও দিচ্ছেন এলাকার লোকজন।
বৃহস্পতিবার ইসলামপুরের দাড়িভিট হাইস্কুলে দুই শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ চরমে ওঠে। বিশাল পুলিশবাহিনী যায় ঘটনাস্থলে। এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। এর মধ্যেই রাস্তার উপর গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আইটিআই-এর ছাত্র রাজেশ সরকারের। রাজেশ এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। স্কুলের মাঠের ঠিক উল্টো দিকে ইসলামপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তাপস বর্মণের রক্তাক্ত গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয় হাসপাতালে। তাপসও দাড়িভিট হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। তাপসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিপ্লব সরকার নামে আরও এক ছাত্রের পায়ে গুলি লাগে। বিপ্লব এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিপ্লব দাড়িভিট হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র।
সেই দিন এভাবেই পোড়ানো হয়েছিল গাড়ি।— ছবি: নিজস্ব চিত্র।
প্রথম থেকেই গুলি চালানোর দায় অস্বীকার করেছে পুলিশ। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, “গোলমালের সময় সেখানে বহিরাগতরা ছিলেন। পুলিশের গুলিতে ওই দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়নি।”
কিন্তু পুলিশের দাবি মানছে না নিহতদের পরিবার থেকে এলাকার মানুষজন, কেউই। উল্টে ঘটনার রাতে রাজেশের পরিবারকে দিয়ে পুলিশ সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাড়াহুড়ো করে ময়না তদন্তের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। সব মিলিয়ে এলাকায় এখনও তুমুল উত্তেজনা রয়েছে। যে পুলিশ গুলিচালনায় অভিযুক্ত, সেই পুলিশের তদন্তের উপর ভরসা করছেন না কেউ। সিবিআই তদন্ত চেয়ে শনিবারও সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ চলছে দাড়িভিট বাজারে।
সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকেও সিবিআই তদন্তের দাবি তোলা হচ্ছে। প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার এলাকায় গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সি। শনিবার সুজন চক্রবর্তী, অশোক ভট্টাচার্য-সহ বাম প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যান। মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর সুজনের দাবি, “পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে দুই ছাত্রের। এই ঘটনায় বিচারবিভাগের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্ত চাই।”
তৃণমূলের তরফে পাল্টা দাবি, বৃহস্পতিবারের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে আরএসএস-এর মদত। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই হিংসা ছড়ানো হয়েছিল বলে দাবি শাসকদলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy