Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

চোখটা একটু কচলে নিন

দেখেও রোজ অনেক কিছুই দেখি না। দৃষ্টিপথে ঝুলে থাকে কত দুঃসহ অস্বাভাবিকতা। সে সব চোখে হয়তো পড়ে, কিন্তু নজরে পড়ে না।মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয় ছেলেটা। মা-বাবার ছাড়াছাড়ি মাথার উপর থেকে ছাদটাও সরিয়ে নিয়েছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৭:১০
Share: Save:

দেখেও রোজ অনেক কিছুই দেখি না। দৃষ্টিপথে ঝুলে থাকে কত দুঃসহ অস্বাভাবিকতা। সে সব চোখে হয়তো পড়ে, কিন্তু নজরে পড়ে না।

মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয় ছেলেটা। মা-বাবার ছাড়াছাড়ি মাথার উপর থেকে ছাদটাও সরিয়ে নিয়েছে। সকালে কাজের খোঁজে বেরনোর সময় কাপড়ের পাড় ছেঁড়া দড়ি দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে বাচ্চাকে বেঁধে রেখে চলে যান মা। দড়ির দৈর্ঘ্য খুঁটিটাকে ঘিরে যে অদৃশ্য বৃত্ত রচনা করে, বছর ছয়েকের ছেলেটার জীবনের বৃত্তও বোধহয় এখন সেটুকুই।

পথের কিনারে গবাদির মতো বাঁধা পড়া ছেলেটাকে আমরা অনেকেই দেখেছি। এই ‘আমরা’র মধ্যে ওর পরিজনরা রয়েছি, এই ‘আমরা’র মধ্যে স্থানীয় আর পথচলতিরা রয়েছি, এই ‘আমরা’র মধ্যে কয়েকজন ‘দায়িত্বশীল’ নাগরিকও রয়েছি। গণমাধ্যম হইচই জুড়ে দেওয়ার পর ‘আমরা’ বলছি, বাচ্চাটাকে অমন অমানবিক বন্ধনে আটকা পড়ে থাকতে দেখেছিই তো! খুব কষ্টও তো হয়েছে! ‘অমানবিক’ ওই মাকেও আমরা বলেছি, এমন না করতে। কিন্তু কথা কানে তুললে তো!

প্রশ্ন হল, ছেলেটার অবস্থা দেখে শুধু ‘কষ্ট’ পেলেই কি দায় শেষ? সামাজিক দায়িত্ব বলে কোনও কিছুর অস্তিত্বে কি বিশ্বাস রাখি? যদি রাখি, তা হলে কি মনে করি যে ওই শিশুর প্রতি সমাজের যে দায়িত্ব রয়েছে, তা পালিত হয়েছে?

এ ধরনের অনাথবতের কোনও অস্তিত্ব আমাদের সরকারি জনসংখ্যা স্বীকার করে না তাও তো নয়। এমন বালকের কল্যাণের স্বার্থেও তো সরকারি বিভাগ রয়েছে। সে বিভাগও কি কোনও খোঁজখবর রেখেছে?

এতগুলো কথা কিন্তু শুধু আলিপুরদুয়ারের কোনও একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে বাঁধা থাকা একটা কৃষ্ণকে নিয়ে নয়। এমন কৃষ্ণ আরও অনেক রয়েছে। হয়তো শ’য়ে শ’য়ে রয়েছে, বা হাজারে হাজারে। আমাদের আশেপাশেই রয়েছে। পথের প্রান্তে, মাঠের কোণায়, ফুটপাথের ধারে বা প্রতিবেশীর দাওয়ায় এমন অনেক কৃষ্ণ বোধ হয় থাকে। আমরা দেখেও দেখতে পাই না। নিদারুণ ঔদাসীন্যের কুয়াশায় দৃষ্টিপথের মধ্যে এসেও ওরা ঝাপসা হয়ে থাকে।

আলিপুরদুয়ারের কৃষ্ণ কুয়াশা কাটিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আশা করি এ বার আমরা একটু চোখ কচলে নেব। নিজেদের চার পাশে আর এক বার নজর চালিয়ে দেখে নেব— কোথাও ঔদাসীন্যের কুয়াশা জমে নেই তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anjan Bandyopadhyay Newsletter Krishna Alipurduar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE