Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রবেশিকার দাবিতে অনশনের হুমকি যাদবপুরে

রাত সওয়া ১১টা পর্যন্ত ঘেরাও চলার পরে বিক্ষোভকারীদের জানিয়েই উপাচার্য সুরঞ্জন দাস অন্যদের নিয়ে বেরিয়ে যান। বিক্ষোভকারীরা বাধা দেননি, তবে স্লোগান দেন। তাঁরা ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীদের তরফে শ্রমণ গুহ জানান, আজ, শুক্রবার কলা, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ সারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বেলা ৩টে-র মধ্যে প্রবেশিকা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত না-নিলে শুরু হবে আমরণ অনশন।

ঘেরাওমুক্তি: বাড়ির পথে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে। নিজস্ব চিত্র

ঘেরাওমুক্তি: বাড়ির পথে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:১৪
Share: Save:

কলা বিভাগে ছ’টি বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবারেও উত্তপ্ত ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক আর পড়ুয়া দু’পক্ষেরই ক্ষোভ-বিক্ষোভে বাড়ছে উত্তাপ।

রাত সওয়া ১১টা পর্যন্ত ঘেরাও চলার পরে বিক্ষোভকারীদের জানিয়েই উপাচার্য সুরঞ্জন দাস অন্যদের নিয়ে বেরিয়ে যান। বিক্ষোভকারীরা বাধা দেননি, তবে স্লোগান দেন। তাঁরা ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীদের তরফে শ্রমণ গুহ জানান, আজ, শুক্রবার কলা, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ সারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বেলা ৩টে-র মধ্যে প্রবেশিকা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত না-নিলে শুরু হবে আমরণ অনশন।

আজ, শুক্রবারেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে শিক্ষক সমিতি জুটা। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, ভর্তির কোনও কাজে তাঁরা যোগ দেবেন না।

বসে নেই ভর্তি কমিটিও। এরই মধ্যে বৈঠক করে ছ’টি বিষয়ে নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির খুঁটিনাটি এ দিন ঠিক করে ফেলেছে তারা।

আরও পড়ুন: শিক্ষায় ‘অনিলায়ন’: সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে

ভর্তি-পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আপত্তি দীর্ঘদিনের। তবু কর্তৃপক্ষ এ বার কলা বিভাগের ছ’টি বিষয়ে প্রবেশিকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তুমুল বিতর্কের পরে সেই পরীক্ষা এ বারের মতো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সেই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের আপত্তি বলেই কর্তৃপক্ষ প্রবেশিকা তুলে দিলেন। শিক্ষামন্ত্রীর ইচ্ছাকেই মর্যাদা দেওয়া হল কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য অবশ্য জানান, এমন যদি হয়ে থাকে, সেটা একেবারেই কাকতালীয়।

এ দিন জুটার কর্মসমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কর্মবিরতির পাশাপাশি তারা শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁধী ভবনের সামনে অবস্থান করবে। উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে তারা জানতে চাইবে, নতুন ভর্তি প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের ভূমিকা ঠিক কী? পরিষ্কার ব্যাখ্যা না-পেলে তাঁরা ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। ইংরেজি বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে জানিয়েছেন, ভর্তি প্রক্রিয়ায় তাঁরা যোগ দেবেন না। ইংরেজির শিক্ষক অম্লান দাশগুপ্ত জানান, তাঁরা যে-সব খবর পাচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে, পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে তাঁরা যুক্ত থাকলে গোলমাল হতে পারে বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা। তাই তাঁরা এই প্রক্রিয়া থেকে সরে যাচ্ছেন। উপাচার্য বলেন, ‘‘শিক্ষকদের যে-কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। তবে বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য তাঁদের কাছে আবেদন করব।’’ ইংরেজি বিভাগের এই অবস্থান সমর্থন করছে জুটা। ওই সংগঠনের সহ-সম্পাদকের বক্তব্য, ২৭ জুন প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে বুধবার তা বাতিল করা হয়েছে। কর্মসমিতির এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেআইনি। কর্মসমিতি একটি সিদ্ধান্ত নিলে ১২০ দিনের মধ্যে তা বদল করা যায় না বলেই তাঁর দাবি।

উপাচার্য এ দিন জানান, আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সচিব যাদবপুরের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। আচার্য কিছু জানতে চাইলে তিনি সব জানাবেন। সুরঞ্জনবাবুর বক্তব্য, কর্মসমিতিই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী। তারা যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছে, উপাচার্য হিসেবে তাঁকে সেটা মানতেই হবে। তাঁর প্রশ্ন, এমন কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে কি, যেখানে ভর্তি প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংসদের ভূমিকা থাকে? বুধবার কর্মসমিতির বৈঠকের পরেও ভর্তিতে বর্তমান পড়ুয়াদের ভূমিকা থাকতে পারে না বলে জানিয়েছিলেন রেজিস্ট্রার।

পড়ুয়াদের একাংশ নাছোড়। কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে নতি স্বীকার করেছে বলে তাঁদের অভিযোগ। বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের দাবি, প্রবেশিকা ফেরাতেই হবে। তাই তাঁরা ঘেরাও চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রবেশিকার বদলে নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির খুঁটিনাটি ঠিক করতে ভর্তি কমিটি এ দিন বৈঠকে বসে। প্রশাসনিক ভবনের বদলে বৈঠক হয় কলা বিভাগের ভবনে। উপাচার্য ভর্তি কমিটির চেয়ারম্যান। কিন্তু ঘেরাও হয়ে থাকায় তিনি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পরে কলা বিভাগের ডিন শুভাশিস বিশ্বাস জানান, ভর্তির ক্ষেত্রে ফর্ম পূরণ করা যাবে ১২ জুলাই পর্যন্ত। ১৯ জুলাই মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২৭, ২৮, ৩০ এবং ৩১ জুলাই ভর্তি চলবে। ১ অগস্ট শুরু হয়ে যাবে ক্লাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE