Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘ভাবলাম আমারও ইন্তেকাল হয়ে গেল’ 

গুলি-রক্ত-অসহ্য যন্ত্রণায় মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার পরে তাঁর উপরেই একে একে ঢলে পড়েছিল লাশ। বুধবার রাতে ওই মিনিট কয়েকের কথায় কাতরাসুর জঙ্গি হানায় আহত জহিরুদ্দিন সরকার তাঁর পরিবারের কাছে ধরা গলায় তুলে ধরেছেন সেই সন্ধের কথা। 

শ্রীনগরের হাসপাতালে জহিরুদ্দিন সরকার। পিটিআই

শ্রীনগরের হাসপাতালে জহিরুদ্দিন সরকার। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাহালনগর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৭
Share: Save:

সাকুল্যে দু’মিনিট উনিশ সেকেন্ড। কাঁপা কাঁপা গলায় তার মধ্যেই ধরা থাকল মঙ্গলবার রাতের মিনিট পাঁচেকের অপারেশন।

গুলি-রক্ত-অসহ্য যন্ত্রণায় মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার পরে তাঁর উপরেই একে একে ঢলে পড়েছিল লাশ। বুধবার রাতে ওই মিনিট কয়েকের কথায় কাতরাসুর জঙ্গি হানায় আহত জহিরুদ্দিন সরকার তাঁর পরিবারের কাছে ধরা গলায় তুলে ধরেছেন সেই সন্ধের কথা।

কাকুতি মিনতির পরে, বুধবার রাতে সামান্য সময়ের ছাড়পত্র মিলেছিল। প্রায় নিমেষে মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক গ্রাম বাহালনগর থেকে ফোন ছুটেছিল শ্রীনগরের হরি সিংহ হাসপাতালের শয্যায়। জহিরুদ্দিনের ছোট ভাই আহাদ বলছেন, ‘‘বড়ভাইয়ের কথা শুনে হাতের মুঠোয় ধরা ফোনটা ঘামে ভিজে গিয়েছিল গো, মনে হচ্ছিল আমার সারা শরীর বুঝি রক্তে ভেসে যাচ্ছে!’’

— “আমি জিন্দা আছি গো মা...পাঁচটা গুলি লেগেছিল জানো, পিঠে, পেটে, ডান হাতে, বাঁ পায়ে। মালাই চাকিটা ভেঙেই গেছে। তবু বেঁচে আছি মা...’’ ফোনটা প্রথম ধরেছিলেন আখতারা বিবি, জহিরের মা। কান্নায় ভেঙে পড়া মায়ের হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিতেই, নলহাটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, জহিরুদ্দিনের ভাই আব্দুল আহাদ শুনেছেন,

—‘হুড়মুড় করে জনা চারেক লোক উপরে উঠে এল, সব্বার মুখে কাপড় দিয়ে ঢাকা। ভয় পাব কী, বুঝতেই পারিনি, কী ঘটতে চলেছে। তার পর আমাদের সবাইকে ঘুরে দাঁড়াতে বলে হাতগুলো পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলল।’ দাদার মুখে সেই দুঃসহ সন্ধের অনুপুঙ্খ বর্ণনায় আহাদ শুনেছেন— ‘ওদের খুব তাড়া ছিল জানিস, দলের এক জন হাত বাঁধতে দেরি করছিল বলে অন্যরা তাকে বেজায় গালমন্দ করল, একেবারে কাঁচা গালাগাল। তার পর আমাদের ঠেলতে ঠেলতে নামিয়ে আনল এক তলায়। তখনও বুঝিনি গুলি করে মারবে, ভাবছিলাম হয়তো আমাদের ধরে নিয়ে যাবে কোথাও, তার পর মারধর করবে। কিন্তু একেবারে যে মেরে ফেলবে, নাহ ভাবিনি। নীচে নামিয়ে রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে একটা খোলা জায়গায় নিয়ে গেল আমাদের। তার পর লাইন করে দাঁড় করিয়ে নিজেদের মধ্যে কী সব যেন কথা হল ওদের। আমি ভাবছিলাম হয়ত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে ওরা, কয়েক সেকেন্ড, কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছিল ঘণ্টা কাবার হয়ে যাচ্ছে। আমার পাশে কামিরুদ্দিন ভাই, এক বার তাঁকে দেখার চেষ্টা করলাম, মুখ ঘুরিয়েছি অমনি...।’

আহাদ বলছেন, ‘‘দাদা মুখ ঘোরাতেই ওদের মনে হয়েছিল দাদা’রা বোধহয় পালানোর চেষ্টা করছে, আর তখনই ছুটে আসতে তাকে গুলি।’’ ভাইকে জহিরুদ্দিনও জানান— ‘প্রথম গুলিটা লাগে পেটে, একটু ঝুঁকে পড়েছিলাম তাতে তারপর পায়ে হাতে গুলি লাগতেই পড়ে যাই। ততক্ষণে অন্য দিক থেকেও গুলি ছুটতে শুরু করেছে। আমি পড়ে যেতেই আমার উপর একে একে পড়তে থাকে কামিরুদ্দিন ভাই, রফিক শেখের লাশ... আর কিছু মনে ছিল না। ভেবেছিলাম আমারও ইন্তেকাল হয়ে গেল!’

‘ইন্তেকাল’ নয়, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জহিরুদ্দিন বিপন্মুক্ত। তবে পুলিশি জেরার পরে তাঁকে ছাড়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE