Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছে জলপাইগুড়ির ‘ডিজিটাল গ্রাম’

ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার শিলিগুড়ি অঞ্চলের বিপণন আধিকারিক চিরদীপ রায় বৃহস্পতিবার বলেন, “গ্রামটিকে এখনও নগদহীন করা যায়নি। তবে চেষ্টা চলছে।’’

বারোপেটিয়ার তেলিপাড়াকে ‘ডিজিটাল গ্রাম’ বলে ঘোষণার বোর্ড।  ছবি: সন্দীপ পাল

বারোপেটিয়ার তেলিপাড়াকে ‘ডিজিটাল গ্রাম’ বলে ঘোষণার বোর্ড। ছবি: সন্দীপ পাল

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩৭
Share: Save:

দেখতে দেখতে প্রায় দু’বছর হতে চলল। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জলপাইগুড়ি শহর থেকে সামান্য দূরের বারোপেটিয়া নতুনবস গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলিপাড়াকে ‘ডিজিটাল গ্রাম’ বলে ঘোষণা করে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। কথা ছিল, দু’বছরের মধ্যে এই গ্রামে সব আর্থিক লেনদেন নগদহীন ভাবে করা হবে। কিন্তু ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার শিলিগুড়ি অঞ্চলের বিপণন আধিকারিক চিরদীপ রায় বৃহস্পতিবার বলেন, “গ্রামটিকে এখনও নগদহীন করা যায়নি। তবে চেষ্টা চলছে।’’

প্রায় শ’তিনেক মানুষের বাস গ্রামে। বেশির ভাগই কৃষিজীবী। সাক্ষরতার হার ভাল। কংক্রিটের রাস্তা ঢুকে গিয়েছে গ্রামে। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মুদি, ওষুধ, মোবাইলের দোকান। বাছাই করা পাঁচটি দোকানে কার্ডে লেনদেনের যন্ত্র দিয়েছিল ব্যাঙ্ক। এলাকার সকলকে এটিএম কার্ড দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। একদিন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে সকলকে ডেকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাঁচটি দোকানের সকলেই সেই যন্ত্র ব্যাঙ্কে ফিরিয়ে দিয়েছেন। গ্রামে কোনও দোকানেই এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন হয় না।

মুদির দোকান রয়েছে হারুন অল রশিদের। তিনি বলছেন, ‘‘যন্ত্র তো ছিল। কিন্তু কিনবে কে? গ্রামের লোক তো এটিএম ব্যবহার করতেই ভয় পায়। এক বছরে যা বিক্রি হল, তার অর্ধেক তো ব্যাঙ্কই কেটে নিল। অমন যন্ত্রের আমার দরকার নেই।” এক বছরে যন্ত্র ব্যবহার করে তাঁর বিক্রি হয়েছিল মাত্র আড়াই হাজার টাকা। তার থেকে এক হাজার টাকা মেশিনের ভাড়া এবং শ’পাঁচেক টাকা লেনদেনের ফি কেটে নিয়েছে ব্যাঙ্ক। তাই অন্যদের মতো তিনিও ওই যন্ত্র ব্যাঙ্কে ফেরত দিয়ে এসেছেন।

দোকান ছেড়ে রাস্তা ধরে এগিয়ে ডান দিকে ঘুরতেই বাঁশবাগান। কিছুটা এগিয়ে একান্নবর্তী একটি স্বচ্ছল পরিবার। বাড়ির বড় বৌ নুরিমা বেগমের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করে দেওয়া হয়েছিল বছর দু’য়েক আগে। এটিএম কার্ডও দেওয়া হয়। তিনি বললেন, “একদিন কী সব বোঝাল, ঠিকঠাক বুঝতেই পারলাম না। পরে আবার আসবে বলেছিল। কিন্ত দু’বছর কেটে গেল কারও দেখাই পেলাম না।” পড়শি মমতাজ বেগমের আক্ষেপ, “আমার শ্বশুর–শাশুড়ির কারও অ্যাকাউন্ট নেই। তোষকের নীচে টাকা রাখেন। নোটবন্দির পরে ব্যাঙ্কের লোক এসে সকলের অ্যাকাউন্ট খোলাবে বলেছিল। তা আর হয়নি।”

চাষের কাজ করে সংসার চলে রেজ্জাক হোসেনের। বছর দু’য়েক আগে তাঁর অ্যাকাউন্ট করে দিয়েছিল ব্যাঙ্ক। কথা ছিল তাঁকে এটিএম কার্ডও দেওয়া হবে। তিনি দু’বছরেও সেই কার্ড নেননি। তাঁর কথায়, ‘‘এটিএম তো তিন কিলোমিটার দূরে, কী হবে কার্ড নিয়ে?’’

কী বলছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ? ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার চিরদীপবাবুর কথায়, ‘‘আমরা হাল ছাড়ছি না।” তিনি জানান, গ্রামের মানুষের বুঝতে কোনও সমস্যা হয়েছে কি না, তা অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখবেন। ওই এলাকায় একটি এটিএম কিয়স্ক বসানোর পরিকল্পনা হচ্ছে বলে ব্যাঙ্ক সূত্রে জানানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Digital Village Jalpaiguri Banking Digital India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE