Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পঁচিশ বছরের পঞ্চায়েত সদস্য, বাড়ি পর্যন্ত নেই

তরুণবাবু যে ব্যতিক্রম, তা গ্রামের লোক জানেন। জানেন তাঁর পরিবারের সকলেও।

তরুণ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

তরুণ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

তাঁর হাত দিয়ে প্রায় পাঁচশো পরিবার সরকারি প্রকল্পে পাকা বাড়ি পেয়েছে। অথচ তাঁর নিজেরই বাড়ি নেই। চারদিকে যখন নানা স্তরের জন প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠছে, তখন জলপাইগুড়ির দক্ষিণ পাণ্ডাপাড়ায় পঁচিশ বছর ধরে পঞ্চায়েত সদস্য, পাঁচ বছরের তৃণমূলের উপপ্রধান তরুণ বসু বিশ্বাস বৃষ্টিতে টিনের ফুটো দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ে বলে উঠে গিয়েছেন দাদার বাড়ির একটি ঘরে।

তরুণবাবু যে ব্যতিক্রম, তা গ্রামের লোক জানেন। জানেন তাঁর পরিবারের সকলেও। তাঁর দাদা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী দীপকবাবু বললেন, ‘‘তরুণ তখন উপপ্রধান। পঞ্চায়েত থেকে নারকোল গাছের চারা বিলি করা হচ্ছিল। আমি গিয়েছিলাম। দেয়নি। বলেছিল, নিজের দাদাকে চারা দিলে লোকে কী বলবে!’’

তরুণবাবুর বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। বাবার দেওয়া ভাঙা সাইকেল নিয়ে এলাকা চষে বেড়ান। কেনার ক্ষমতা নেই বলে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন না। পাণ্ডাপাড়া কালীবাড়ি মোড়ে একটি ভাড়া করা ঠেলায় ফাস্টফুডের দোকান করতেন। মালিক ফেরত চাওয়ায় ঠেলার দোকান সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিয়েছেন। এখন বাড়িতে শাড়ি বিক্রি করে মাসে হাজার দশেক টাকা রোজগার। মেয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তরুণবাবু বলেন, “এই একটি মাত্র স্বপ্ন আমার। মেয়ের পড়ায় যেন সমস্যা না হয়।” ইদানীং নিরামিষ খাওয়া শুরু করেছেন, আমিষে খরচ বেশি।

তৃণমূলের একাংশেরই আক্ষেপ, এমন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির লোকেদের দল সামনের সারিতে আনা হয়নি। গত পঞ্চায়েত ভোটে ওই এলাকার জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী নুরজাহান বেগমের নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছিলেন তরুণ। নুরজাহান জিতে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হয়েছেন। নুরজাহান বললেন, “যাঁদের নিজস্ব বাড়ি নেই, তাঁদের সরকারি প্রকল্পে পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তরুণবাবুকে জেলা পরিষদ থেকে ঘর দিতে চেয়েছিলাম, ফিরিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, তাঁর থেকেও নাকি অনেক গরিব এলাকায় রয়েছেন।” তাই কেউ অবাক হন না, যখন শোনেন, তরুণবাবু কখনও ভোটে হারেননি। ১৯৮৩ সালে প্রথম পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন কংগ্রেসে ছিলেন। তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক দলের জন্মলগ্ন থেকে। তবে এলাকার ডান-বাম সকলের কাছেই তিনি জনপ্রিয়। বললেন, ‘‘মানুষের কাজ করি। তাই আমাকে সবাই ভোট দেন। এখন কাটমানির অভিযোগ শুনে কয়েক দিন ধরে মনটা খারাপই হয়ে রয়েছে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaigury Panchayat TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE