Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মৃত্যু নিশ্চিত করতে কোপও সারফুদ্দিনকে

ময়নাতদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে পেট্রল পাম্পে হামলায় সারফুদ্দিন গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। তার শরীরে ৬-৭টি গুলির ক্ষত ছিল। ছিল কোপানোর দাগও।

বৃহস্পতিবার রাতে জয়নগরে হামলার পরে বিধায়কের গাড়ি ।

বৃহস্পতিবার রাতে জয়নগরে হামলার পরে বিধায়কের গাড়ি ।

শুভাশিস ঘটক ও সমীরণ দাস
জয়নগর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

শুধু বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত করতে জয়নগরে সারফুদ্দিন খানকে ধারালো অস্ত্র দিয়েও কুপিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।

ময়নাতদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে পেট্রল পাম্পে হামলায় সারফুদ্দিন গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। তার শরীরে ৬-৭টি গুলির ক্ষত ছিল। ছিল কোপানোর দাগও। তদন্তকারীরা মনে করছেন, তৃণমূলের জয় হিন্দ বাহিনীর আঞ্চলিক সভাপতি সারফুদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করতেই ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার। দুষ্কৃতীদের এতটাই রাগ ছিল সারফুদ্দিনের উপরে। কিন্তু হামলায় নিহত বাকি দু’জনের (মনিরুদ্দিন হক মোল্লা এবং আমিন আলি সর্দার) দেহে কোপানোর দাগ ছিল না।

শনিবার বিকেল পর্যন্ত ওই ঘটনায় আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এই নিয়ে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১২। ঘটনায় আরও অন্তত ১০ জন জড়িত বলে অনুমান তদন্তকারীদের। ঘটনার দু’দিনের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করতে তদন্তকারীরা সিসিটিভি-র ফুটেজকেই হাতিয়ার করেছেন। কিন্তু কোন সিসিটিভি-র ফুটেজ, তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে এলাকায়।

স্থানীয়দের কেউ কেউ মনে করছেন, এখন বেশির ভাগ পেট্রল পাম্পেই সিসি ক্যামেরা থাকে। পেশাদার খুনিদের তা অজানা নয়। তারা সেই ঝুঁকি নেবে কেন? এই প্রশ্ন তুলে স্থানীয়দের দাবি, পাম্পের সিসি ক্যামেরা খারাপ ছিল। তা জেনেই দুষ্কৃতীরা হামলা করে। তাই তারা মুখ ঢেকেও আসেনি। কিন্তু তাদের ছবি ধরা পড়ে যায় পিছনেই পাম্প-মালিক সাদিক আহমেদ খানের বাড়ির বাইরে লাগানো সিসি ক্যামেরায়। তদন্তকারীরা সেই ফুটেজই পেয়েছেন।

তদন্তকারীরা এ কথা মানতে চাননি। বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপার অজয় প্রসাদের দাবি, ‘‘পাম্পের সিসি ক্যামেরা খারাপ ছিল বলে যে কথা রটছে, তা ভিত্তিহীন। তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে।’’ একই দাবি পাম্প-মালিক সাদিকেরও। যদিও শনিবার পাম্পের কোনও ক্যামেরা চালু ছিল না। সাদিকের দাবি, ‘‘পুলিশ ‘হার্ড ডিস্ক’ নিয়ে যাওয়ায় আপাতত ক্যামেরা বন্ধ রয়েছে।’’

তার বিরুদ্ধে এলাকার কিছু দুষ্কৃতী যে একজোট হয়েছে এবং সে যে খুন হতে পারে, এ আশঙ্কা সারফুদ্দিনের ছিল বলেই ধারণা তদন্তকারীদের। সারফুদ্দিনের বিরুদ্ধে বহু অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। তদন্তকারীরা জানান, বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের সঙ্গে বেশির ভাগ দিন ঘোরাঘুরির পরে আগে রাতে জয়নগর থানার সামনে কালীমন্দিরের কাছে আড্ডা দিত সারফুদ্দিন। মাসখানেক ধরে দুর্গাপুরের পেট্রল পাম্পে আড্ডা শুরু করে। রাতে বিশ্বনাথবাবুকে বাড়ি ছেড়ে তাঁর ভাড়া করা গাড়িতেই সারফুদ্দিন বাড়ি ফিরত। কিন্তু আড্ডার জায়গা পাল্টেও শেষরক্ষা হল না।

বৃহস্পতিবার ওই পাম্পে দুষ্কৃতীরা একটি কবাডি প্রতিযোগিতার জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে সারফুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলা শুরু করে বলে ধৃতদের জেরায় জেনেছে পুলিশ। তার পরেই হামলা। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ প্রচুর কার্তুজের খোল উদ্ধার করেছে। সে দি প্রায় ৬০ রাউন্ড গুলি চলেছে বলে জানান তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jaynagar shooting Murder Crime TMC Miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE