Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Jaynagar

মেয়ের স্কুলে ভর্তির জন্য সার্টিফিকেট নিতে এসেই প্রাণ গেল আমিনের

শুক্রবার সকালে জয়নগর থানায় দাঁড়িয়ে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না নাজিমা যে, তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন!

আমিন আলি সর্দার।—নিজস্ব চিত্র।

আমিন আলি সর্দার।—নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
জয়নগর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:২৫
Share: Save:

মেয়ের স্কুলে ভর্তির জন্য বিধায়কের একটা সার্টিফিকেট দরকার ছিল আমিন আলি সর্দারের। আর সেই শংসাপত্র পাওয়ার জন্যই বিধায়ক ঘনিষ্ঠ নেতা সারফুদ্দিনের কাছে দরবার করতে এসেছিলেন জয়নগর রামকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আমিন।

শুক্রবার সকালে জয়নগর থানায় দাঁড়িয়ে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না নাজিমা যে, তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন! বারে বারে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। বছর একত্রিশের আমিনএর আগে কয়েক বছর কাতারে চাকরি করেছেন। তারপর দেশে ফিরে মিটার বসানোর কাজ করতেন।

নাজিমা-আমিনের দুই মেয়ে— মেহজুবিন এবং মেহনাজ। শুক্রবার নাজিমা বলেন, ‘‘বড় মেয়ে মেহজুবিনকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করার জন্য বিধায়কের একটি শংসাপত্র দরকার ছিল। কারণ, মেহজুবিনের জন্ম শংসাপত্রে একটা ভুল রয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘তেলের মেশিনের পিছনে শুয়েছিলাম আমি, চারদিকে শুধু ধোঁয়া আর গুলির আওয়াজ’​

অন্যদিনের মতো বৃহস্পতিবার সকাল আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আমিন। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরেও বাড়ি না ফেরায় স্বামীকে ফোন করেছিলেন নাজিমা। তিনি বলেন,“তখন প্রায় সাতটা বাজে। ফোন ধরেই বলল, একটু দেরি হবে। এমএলএ-র সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করতে গিয়েছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, “আমিন প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে ওই পেট্রল পাম্পের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। কয়েকজন আবার আমিনকে মোবাইলে গেম খেলে সময় কাটাতেও দেখেছেন।” এক প্রত্যক্ষদর্শীরকথায়, ‘‘সারফুদ্দিন গাড়ি নিয়ে পাম্পে ঢোকার খানিক পর কথা বলতে গিয়েছিলেন আমিন।’’গাড়ির জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁকে সারফুদ্দিনের সঙ্গে কথাও বলতে দেখেছেন অনেকে।সেই সময়েই আততায়ীরা হামলা চালায়। বোমার আওয়াজ শুনে পালানোর চেষ্টা করেন আমিন। কিন্তু তার আগেই তাঁর গায়ে লাগে বোমার স্‌প্লিন্টার। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি।

আমিনের স্ত্রী নাজিমা এবং মা।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: নেতা-সাট্টা-তোলাবাজি-দুষ্কৃতী চক্র! জয়নগর এখন ‘ক্রিমিনাল’দের মুক্তাঞ্চল​

গভীর রাতে পুলিশের কাছ থেকে স্বামীর মৃত্যুর কথা জানতে পারেন নাজিমা। এ দিন তিনি বলেন, “আমার স্বামী কোনও পার্টি করত না।” রাজনীতি–অপরাধ জগৎ সব কিছু থেকে দূরে থেকেও প্রাণ গেল ওই যুবকের। মেয়ের স্কুলে ভর্তি এখন দূর অস্ত্‌, আগামী দিনে দুই মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নাজিমার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jayna Shoot Out TMC MLA Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE