Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

যাত্রীদের সুরক্ষায় লঞ্চ বানাচ্ছেন ঘাটকর্মীরাই

সকাল থেকে সন্ধ্যা— খুট-খুট করে ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে কাজ করে চলেছেন জনা কয়েক লোক। কোন্নগর ফেরিঘাটের পাশে গঙ্গার পাড়ে তৈরি হচ্ছে লঞ্চ। পানিহাটি-কোন্নগর যাত্রী পারাপারের জন্য। সৌজন্যে— দুই ঘাটের কর্মীরা।

কর্মীরাই তৈরি করছেন লঞ্চ। কোন্নগরে। নিজস্ব চিত্র

কর্মীরাই তৈরি করছেন লঞ্চ। কোন্নগরে। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ১৬:০০
Share: Save:

সকাল থেকে সন্ধ্যা— খুট-খুট করে ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে কাজ করে চলেছেন জনা কয়েক লোক।

কোন্নগর ফেরিঘাটের পাশে গঙ্গার পাড়ে তৈরি হচ্ছে লঞ্চ। পানিহাটি-কোন্নগর যাত্রী পারাপারের জন্য। সৌজন্যে— দুই ঘাটের কর্মীরা।

সম্প্রতি হুগলির তেলেনিপাড়ায় অস্থায়ী জেটি ভেঙে পড়ায় কয়েক জন যাত্রী গঙ্গায় ডুবে মারা যান। এর পরেই হুগলির বিভিন্ন ঘাটে যাত্রী-নিরাপত্তা নিয়ে একের পর এক অভিযোগ আসে। কোন্নগর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটি পর্যন্ত ফেরি পারাপারের কর্মীরা অবশ্য গত আড়াই বছর ধরে যাত্রী-সুরক্ষায় একের পর এক ব্যবস্থা নিয়ে চলেছেন। সেই তালিকাতেই শেষ সংযোজন এই লঞ্চ তৈরি।

বছর দেড়েক আগে রাজ্য সরকারের তরফে দুই ঘাটে পারাপারের জন্য একটি লঞ্চ দেওয়া হয়। চলে দু’টি ভুটভুটিও। কিন্তু কিছু দিন পরে ঘাটকর্মীরাই সিদ্ধান্ত নেন, ‘ঝুঁকি’র ভুটভুটি তুলে ফেলা হবে। কিন্তু তার জন্য নিদেনপক্ষে আরও একটি লঞ্চের প্রয়োজন। সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে না-থেকে নিজেরাই লঞ্চ তৈরির পরিকল্পনা করেন।

ঘাটকর্মীরা জানান, নিজেদের বেতন-সহ অন্য সুবিধা বাদ দিয়ে লাভের বাড়তি অঙ্ক বাঁচিয়েই প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকায় লঞ্চটি তৈরি হচ্ছে। যাত্রী-নিরাপত্তায় কোনও আপস করা হবে না। ভেসেল বা ভুটভুটির থেকে লঞ্চ অনেক নিরাপদ, যাত্রীও ধরে অনেক বেশি। যাত্রাও আরামদায়ক। সৌমেন মণ্ডল নামে এক ঘাটকর্মী বলেন, ‘‘আশা করছি মাসখানেকের মধ্যে লঞ্চটি নামানো যাবে। এর পরে আরও একটি লঞ্চ তৈরির পরিকল্পনা আছে। তা হলেই ভুটভুটিকে পুরো বিদায় জানানো যাবে।’’

বছর আড়াই আগে পর্যন্ত পানিহাটি ও কোন্নগর ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব ছিল একটি সমবায়ের হাতে। তার পরে কর্মীরাই সেই দায়িত্ব নেন। ঢেলে সাজা হয় যাত্রী পরিষেবা। টিকিট কাউন্টার থেকে ফেরিঘাট— গোটা এলাকা ‘নো স্মোকিং জোন’ করা হয়। বসানো হয় শক্তিশালী সিসি ক্যামেরা। ঘাটকর্মীরা নির্দিষ্ট পোশাক পরে, পরিচয়পত্র নিয়ে ডিউটি করেন। তাঁদের হাতে থাকে ওয়াকিটকি। যাতে গঙ্গায় বা পাড়ে কোনও সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম’-এ যাত্রীদের সচেতন করা হয়। বান আসার আগে সকলকে সতর্ক করতে সাইরেন বাজে। পাশাপাশি, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক যাত্রীদের জন্য রয়েছে হুইলচেয়ার। পুরসভার তরফে পানীয় জলের ব্যবস্থা, সুলভ শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

দু’পাড়ের এই পরিষেবায় খুশি যাত্রীরা। অনেকেই মনে করছেন, সব ঘাটেই এমন ব্যবস্থা থাকলে অনেক দুর্ঘটনাই এড়ানো যেত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE