Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নবান্ন দৌড়েও তালা খুলছে না কারখানার

এলাকার তৃণমূল নেতাদের দাবি মতো তোলা দিতে পারেননি। তাই কামারহাটি জুট মিল-সহ রাজ্যের ১৭টি চটকল বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে খাস নবান্নে গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন কারখানা মালিকেরা। সরকার তার সমাধান করার আগেই কামারহাটি জুট মিলের ভিতরেই আরও ন’টি ছোট কারখানাও ওই নেতারা জোর করে বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই কারখানাগুলির মালিকদের।

বন্ধ কামারহাটি জুট মিলের দরজা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

বন্ধ কামারহাটি জুট মিলের দরজা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৪:০৮
Share: Save:

এলাকার তৃণমূল নেতাদের দাবি মতো তোলা দিতে পারেননি। তাই কামারহাটি জুট মিল-সহ রাজ্যের ১৭টি চটকল বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে খাস নবান্নে গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন কারখানা মালিকেরা। সরকার তার সমাধান করার আগেই কামারহাটি জুট মিলের ভিতরেই আরও ন’টি ছোট কারখানাও ওই নেতারা জোর করে বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই কারখানাগুলির মালিকদের।

চটকলের ভিতরের ওই কারখানাগুলি থেকে ভাড়া পান কামারহাটি জুট মিল কর্তৃপক্ষ। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা-মালিকদের অভিযোগ, কামারহাটি জুট মিল কর্তৃপক্ষকে ‘উপযুক্ত শিক্ষা’ দিতেই তাদের ন’টি কারখানা জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এলাকার তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও ওই ন’টি কারখানার তরফে নবান্নকে জানানো হয়েছে।

শিল্পে রাজ্যের ‘বেহাল’ দশা নিয়ে এমনিতেই বিড়ম্বনায় রাজ্য সরকার। এর মধ্যে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই একের পর এক তোলাবাজির অভিযোগে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরও বিব্রত রাজ্য সরকার। গত শুক্রবার নবান্নের এক বৈঠকে চটকল মালিকরা অভিযোগ করেছিলেন, গত দু’মাসে তৃণমূলের নেতাদের তোলাবাজির জন্য তাদের ১৭টি কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কর্মহীন হয়েছেন প্রায় দেড় লক্ষ শ্রমিক। এই ঘটনার পরেও ন’টি কারখানা বন্ধের তালিকায় জুড়ে যাওয়ায় আরও হাজার দু’য়েক শ্রমিক কর্মহীন হলেন। ওই কারখানার-কর্তাদের দাবি, গত এক সপ্তাহ ধরে জোর করে কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের ক্ষতি হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

কী হয়েছে এই ন’টি কারখানায়?

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কামারহাটি জুট মিল বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। জুটমিলের কর্মীরা জানান, ওই মিলের ভিতরের এক দিকের জমি ভাড়া নিয়ে কারখানা চালায় আরও ন’টি সংস্থা। এই ভাড়ার টাকা পান কামারহাটি জুট মিল কর্তৃপক্ষ। তাতেই আপত্তি এলাকার তৃণমূল নেতাদের একাংশের। ওই ন’টি কারখানার মালিকদের অভিযোগ, তৃণমূল নেতারা তাঁদের বলেছেন, কারখানাগুলি চালু থাকলে কামারহাটি জুট মিল কর্তৃপক্ষ ভাড়া হিসেবে মোটা টাকা পাবে। তাই চটকল বন্ধ থাকলেও মিল-মালিকদের কোনও অসুবিধা হবে না। অভিযোগ, এই কারণেই জুট মিল কর্তৃপক্ষকে ‘উপযুক্ত শিক্ষা’ দিতে তার ভিতরের সব কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরেই গত সোমবার থেকে ওই কারখানগুলি বন্ধ হয়ে যায়।

কী বলছেন এলাকার তৃণমূল নেতারা? তৃণমূল নেতা এবং সদ্য ভোটে জেতা পুর-প্রতিনিধি তুষার চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘মালিকরা ঠিক কথা বলছেন না। জোর করে কারখানা বন্ধ করা হয়নি। ওই ন’টি কারখানার শ্রমিকরাও জুটমিল শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দায়বদ্ধতা থেকেই ওই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’’

ওই ন’টি কারখানার শ্রমিকরা অবশ্য উল্টো কথাই বলছেন। রবিবার এমন কারখানার এক কর্মী বলেন, ‘‘গত কালই আমাদের প্রায় শ’তিনেক শ্রমিক কাজে যোগ দিতে এসেছিলেন। কিন্তু কামারহাটি মোড়ে তাদের আটকে দেওয়া হয়।’’ কারখানার মালিকরা এই বিষয়টিও জানিয়েছেন নবান্নের কর্তাদের। নবান্ন সূত্রের খবর, বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনা হয়েছে।

পরিস্থিতি যে ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে, তা অবশ্য এখন বুঝছেন এলাকার তৃণমূল নেতারা। দলীয় সূত্রের খবর, বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টাও চলছে। কামারহাটি পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান (এ বারও তিনিই চেয়ারম্যান হচ্ছেন) তৃণমূলের গোপাল সাহা বলেন, ‘‘ওখানে চটকল মালিকেরও দু’টো ইউনিট রয়েছে। সে কারণেই শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হয়েছে স্থানীয় নেতাদের।’’ তবে অন্য ন’টি কারখানা বন্ধ করা যে ঠিক কাজ হয়নি, তা বুঝেছেন গোপালবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘কোথাও ভুল হয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখছি।’’

মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া যে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ নেই, তা বুঝেছেন মালিকপক্ষও। ওই কারখানাগুলির একটির মালিক বলেন, ‘‘গত ১৩-১৪ বছরে এমনটা কখনও হয়নি। এখন বুঝছি, এখানে ব্যবসা করার চেয়ে না করা ভাল।’’ কামারহাটি জুটমিলের মালিক সুশান্ত অগ্রবাল বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এখন এই প্রথাই চলছে। বুঝেছি, ব্যবসা করতে গেলে এ সব মেনে নিতে হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE