স্বামী আত্মস্থানন্দকে দেখতে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র।
‘‘তমে কেম ছো?’’ স্মিত-মুখ ভিভিআইপি অতিথির মুখে এই সম্ভাষণ শুনেই চোখ খুললেন স্বামী আত্মস্থানন্দ। শনিবার সন্ধেয় ‘শিষ্য’কে দেখামাত্র চিনতে পারলেন! হাসিমুখে দু’হাত তুলে গুজরাতিতেই জবাব দিলেন, ‘‘সারু, সারু।’’ বাংলায় যার অর্থ করলে দাঁড়ায়, ‘‘ভাল, ভাল।’’ এর পরে গুজরাতিতে দু’জনের গল্প হল প্রায় মিনিট দশেক।
দক্ষিণ কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের সাততলায় প্রেমানন্দ ওয়ার্ডের ৫১ নম্বর ঘর। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ঘরেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন স্বামী আত্মস্থানন্দ। এই ঘরই শনিবার সাক্ষী রইল মিনিট পনেরোর এই সাক্ষাৎকারের। সরাসরি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রেসিডেন্ট মহারাজের শিষ্যত্ব গ্রহণ না করলেও তাঁকেই ‘গুরু’ মানেন মোদী। প্রকাশ্যে সে কথা অনেক বার বলেছেন তিনি। নিয়মিত খোঁজখবর নেন আত্মস্থানন্দের শারীরিক অবস্থার।
এ দিন যখন হাসপাতালের এসি কেবিনে মোদী ঢুকলেন তখন ঘড়ির কাঁটা সওয়া সাতটা পেরোচ্ছে। ঘরে উপস্থিত প্রবীণ সন্ন্যাসীরা ও দু’জন চিকিৎসক। প্রেসিডেন্ট মহারাজের শয্যার পাশে রাখা একটি চেয়ারে বসেই মোদী হাতজোড় করে বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম, আপনাকে দেখতে আসব। কিন্তু হয়ে ওঠেনি। সুস্থ হয়ে দিল্লিতে আমার কাছে চলুন।’’ কথোপকথন হচ্ছিল পুরোপুরি গুজরাতিতে।
স্বামী আত্মস্থানন্দ নিজে দীর্ঘদিন গুজরাতের রাজকোটে ছিলেন। ভাল গুজরাতি জানেন।
প্রেসিডেন্ট মহারাজের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে প্রধানমন্ত্রী এর পর জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি গান শুনবেন?’’ মাথা নেড়ে হেসে সম্মতি জানান আত্মস্থানন্দ। তখন প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে কেবিনে উপস্থিত স্বামী শুভকরানন্দ গেয়ে ওঠেন, ‘‘মা আছেন আর আমি আছি।’’ গানটি প্রেসিডেন্ট মহারাজের অত্যন্ত প্রিয়। গান শেষ হওয়ার পরেই মোদী ফের জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি কী আরও একটা গান শুনবেন, না আমি কথা
বলব?’’ প্রেসিডেন্ট মহারাজ মোদীর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মোদী ঘরে উপস্থিত মহারাজদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘কাল সময় কম। কিন্তু বেলুড় মঠে গিয়ে আপনাদের সঙ্গে অনেক সময় কাটাব। নবরাত্রির সময় আসার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পারলাম না। তাই ওঁকে দেখতে আসতেও দেরি হয়ে গেল।’’
কেবিনে উপস্থিত চিকিৎসকদের কাছ থেকে তিনি আত্মস্থানন্দের চিকিৎসা এবং শরীরের বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
এর পরই প্রেসিডেন্ট মহারাজ নিজের হাতে প্রধানমন্ত্রীকে ধুতি, শাল ও প্রসাদী চকোলেট দেন। বেশ কয়েক মিনিট ‘গুরু-শিষ্য’ পরস্পরের হাত ছুঁয়ে থাকেন। মোদীর মাথায় দু’হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করেন আত্মস্থানন্দ। তার পর পাশের কেবিনে নিয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বেলুড় মঠের প্রসাদী পায়েস এবং সন্দেশ দেওয়া হয়। তৃপ্তি করে সে সব খান মোদী।
সাড়ে সাতটা নাগাদ হাসপাতাল থেকে বেরোন প্রধানমন্ত্রী। সন্ন্যাসীদের তরফে তাঁকে ফুলের তোড়া দেওয়া হলে হেসে বলেন, ‘‘আমি তো নিজের বাড়িতেই এসেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy